আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

প্রাথমিক শিক্ষা ও মানোন্নয়ন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-১৩ ১৭:৪৮:০৭

মোঃ মিজানুর রহমান :: একটি জাতির উন্নতির চাবিকাঠি হল শিক্ষা। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। মেধা ও মননে আধুনিক এবং চিন্তা-চেতনায় প্রাগ্রসর একটি সুশিক্ষিত জাতিই একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তাই শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণানাতীত।

আমাদের দেশে বর্তমানে একটি শিশুর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় ৫+ বছর বয়স থেকে। যা পরবর্তীকালে ৪+ বছর বয়স হবে। একে ২০১০ শিক্ষানীতি অনুযায়ী বলা হচ্ছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রস্তুতিকাল। আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ৬+ বছর বয়স থেকে।

প্রাথমিক শিক্ষাকে ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৮ বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। যদিও তা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমার বিশ্বাস এই লক্ষ্য অর্জনে খুব বেশি দিন লাগবে না। রাষ্ট্র ও সরকার সে পথেই হাঁটছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এ নারী-পুরুষ সকলের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রী করা হয়েছে। যা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১ঃ৩০। যা শতভাগ অর্জিত হলে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে।

শিক্ষানীতিতে ১ম ও ২য় শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা বলা আছে। যদিও আমরা এখনো সেই প্রথাগত পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে সরকার চিন্তাভাবনা করছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের প্রথাগত মূল্যায়ন পদ্ধতি (সহজভাবে বললে ১ম সাময়িক, ২য় সাময়িক, বার্ষিক পরীক্ষা) তুলে দিতে। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন থাকবে। আমরা অনেকেই ধারাবাহিক মূল্যায়ন কি তা বুঝি না বিধায় পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেয়ার বিরোধিতা করছি। এই তুলে দেয়াকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই। এ ব্যাপারে জনাব জাফর ইকবাল বলেছেন এটাকে স্বাগত জানাই যদিও আমরা অনেক আগেই এটা তুলে দিতে বলেছিলাম। উনার কথামতে আমরা মনে করি লেখাপড়া মানেই প্রতিযোগিতা আর প্রথাগত পরীক্ষা।

শিক্ষার মানোন্নয়নে আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। যদিও বর্তমান সরকার তা অনেকটা করেছে। তারপরও প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যটা চরমভাবে বিরাজমান থাকায় শিক্ষকরা মানসিকভাবে সন্তুষ্ট না। মানসিক সন্তুষ্টি ছাড়া পেশাগত উন্নয়ন কখনোই বৃদ্ধি পাবে না। আমি মনে করি শিক্ষকদের কোন শ্রেণি থাকবে না। শিক্ষকরা "শিক্ষক" নামেই অভিহিত হবেন। তাদের জন্য থাকবে আলাদা বেতন কাঠামো, জনবল কাঠামো। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রাথমিক শিক্ষকরা এখনো ৩য় শ্রেণির কর্মচারী। যা সমাজের জন্য লজ্জার। বেতন ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে রয়েছে চরম ক্ষোভ। যদিও বর্তমান সরকার এ নিয়ে কাজ করছে। আমি মনে করি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এই বৈষম্যের চিরঅবসান করা সময়ের দাবি।

মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে সহকারি শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিকে স্বতন্ত্র বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস চালু করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়েই দিনের বড় একটা সময় কাটিয়ে দেয়। এতে তাদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারায়। এক্ষেত্রে সকল বিদ্যালয়ে দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে এক শিফট চালু করে বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় কমিয়ে আনতে হবে। যা বর্তমান সরকারের চিন্তাভাবনায় আছে বলে শুনা যাচ্ছে।

আরেকটা ভালো খবর শুনা যাচ্ছে আগামীতে বিনামূল্যে পাঠ্যবইয়ের মত স্কুল ড্রেস, জুতা, দুপুরের খাবার ও নানা আনুসাঙ্গিক দ্রব্যাদি দেয়া হবে। যা শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে যাদের ভূমিকা অপরিহার্য তারা হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষকদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। তারপরও শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরো বেশি সময় দিয়ে নতুন নতুন শিখন শেখানো পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগে মনোনিবেশ করতে হবে।

সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাক প্রাথমিক শিক্ষা। এগিয়ে যাক সোনার বাংলা।

লেখক: মোঃ মিজানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, মজিদপুর জালালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন