সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-৩০ ২২:২১:০২
বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: বিএনপির নিপীড়িত নির্যাতিত তৃনমূল নেতাকর্মীরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি। কিন্তু, তারা এবং তাদের মতামত উপেক্ষা করে শীর্ষ নেতৃত্ব কোন এক অজানা কারনে নির্বাচনে অংশ নেন। তৃনমূলের দাবী ছিল, এ সরকারের অধীনে এবং দলীয় চেয়ারপার্সনকে জেলে রেখে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার। এমনকি, নির্বাচনে অংশ নেবার প্রশ্নে দলের সিনিওর নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল প্রবল।
আমার কয়েকমাস আগের লেখায় লিখেছিলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনভাবেই সরকারের চাপিয়ে দেয়া কোন সমঝোতায় সায় দেবেন না। এমনকি, এতে যদি তাঁর মৃত্যুকে বেছে নিতে হয়, তাও।
যে নির্বাচনকে সারা দুনিয়া হাস্যকর এবং তামাশা হিসেবে নিয়েছে এবং বিএনপিও শেষ পর্যন্ত গতকাল সোমবার হয়ত দেশের প্রতি অগাধ ভালবাসার কারনে সংসদে যোগ দিয়ে প্রমান করেছে, নির্বাচনে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও সামগ্রিকভাবে ঐ নির্বাচনটি গ্রহনযোগ্য ছিল। এবং আমাদের দেশের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করতে সক্ষম! তাতে বিশ্ব নেতারা ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে যেভাবেই দেখুন না কেন?
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া দল এবং সত্যিকার অর্থে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে প্রতিষ্টিত বিএনপিই কি আজকের এই দল? আজ খুব মনে পড়ে, ১৯৮৬ সালের ৭ই মের সংসদ নির্বাচনের পুর্বে বেগম জিয়া ঘোষনা দিয়েছিলেন, তৎকালীন এরশাদ সরকারের অধীনে তার দল কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না। তার সেদিনের সে ঘোষনা দলকে কঠিন এক অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সেদিন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতার পদটি অলংকৃত করে নিজেদের দলকে সু-সংগঠিত করেছিল। আর অন্যদিকে, বিএনপি শুধুমাত্র ছাত্রদলের উপর নির্ভর করে মোটামুটি একটা দল হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু, বহু রাজনৈতিক ঝড় তুফানের পরও বিএনপি কোনভাবেই সরে আসেনি সেদিনের সে ঘোষনা থেকে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে অগোছালো বিএনপিই কিন্তু, সরকার গঠন করেছিল। জনগনও জানে, কাকে কখন কোথায় সন্মান দিতে হয়।
দুই
বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে দলটির নেতাকর্মীদের প্রশ্ন এখন, প্রতি মুহুর্তের নতুন সিদ্বান্তগুলি বিএনপিকে সামনের নাকি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
এ অবস্থার মধ্যেও দলটি সংগঠন গুছানোর নামে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানেও নেই কোন নতুনত্ব।
বর্তমান বিএনপি যদি আসলেই ঘুরে দাড়াতে চায় তাহলে আজকের এই ডিজিটাল পদ্বতি নয়, তাকে অনুসরন করতে হবে, ১৯৮৬ সালের বেগম খালেদা জিয়ার এনালগ বিএনপিকে। এর জন্য সর্বপ্রথম দরকার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত ষ্টাফ থেকে শুরু করে তার উপদেষ্টাদের সকলকে পরিত্যাগ করে নতুন একজন রাজনৈতিক কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া। শুধু এই পদ্ধতিই বিএনপিকে সিদ্বান্তহীনতা ও দুর্দশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
এবার ফিরে যাই ভারতের নির্বাচনের দিকে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে নিশ্চিত আগামী দিনে ভারতে অ-বিজেপি সরকার কেন্দ্রের মসনদে বসছে। যদিও বিজেপি বা কংগ্রেসের সাথে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের কোন কমতি নেই। তবে, রাজনীতির দাবার খেলায় বিএনপির পরিপক্ক কোন দাবাড়ু থাকলে কোন ব্যাতিক্রমের আশাও দুরাশা ছিল না।
ভাগ্যদেবী খুবই সুপ্রসন্ন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি। যেখানে আওয়ামীলীগের সফলতার চেয়ে বিএনপির ভুল সিদ্বান্ত এবং অযোগ্যতাই প্রধান কারিগর।
বিএনপি এই ভুলগুলি দেশের জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে শুন্যতার সৃষ্টি করেছে। একটি আসল বিরোধী দল গত দুটি সংসদে না থাকার যে দায়, সে দায়ভারের সবটুকু কি দলটি এড়াতে পারবে?
আমি আজও এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য সুন্দর আগামীর সপ্ন দেখি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি নিঃস্বার্থভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কামনা করছি।
লন্ডন, ৩০ এপ্রিল
লেখক- লন্ডনে কর্মরত আইনজীবি ও লেখক।