Sylhet View 24 PRINT

ফনি নিয়ে কেনো এতো ট্রল?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-০৪ ১২:১০:১১

টিপু সুলতান :: আবহাওয়ার ভাষায় ঘূর্ণিঝড়কে অনেক নামে ডাকা হয়। সামুদ্রিক অঞ্চলভেদে সাইক্লোন, হ্যারিকেন, কর্ডোন্যাজো, টাইফুন, উইলি-উইলি এরকম একেক অঞ্চলে ডাকা হয় একেক নামে। সাধারণত এরকম ঝড়ের স্থায়িত্বকাল হয় ৪-৭ দিন হয়।

১৯৭০ সালে এ অঞ্চলে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। সরকারি হিসাব না থাকলেও বেসরকারি হিসেবে ধারণা করা হয় ৩-৫ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে এই সাইক্লোনে। মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভোলা জেলা।

স্বাধীন বাংলাদেশের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় বয়ে যায় ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে।এই ঝড়টি আঘাত হানে ২৯ এপ্রিল। বার ছিল বৃহস্পতি। ৯১ এর ২২ এপ্রিল মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ উঠে। বাতাসের গতি বৃদ্ধির সাথে নিম্নচাপের আকার বড় হতে থাকে। ঘন্টায় বাতাসের গতিবেগ ১৬০ কি.মি. পর্যন্ত পৌঁছায়।

বাতাসের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়টি ভয়াবহ রূপ নেয়। ২৪ এপ্রিল থেকে প্রচন্ড বাতাসে জন জীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ এপ্রিল রাতে ১৫৫ কি.মি. গতিবেগে চট্টগ্রামের উপকূলে আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড়টি। এই ঝড়কে সাধারণত বলা হয় ট্রপিক্যাল রিভলবিং স্ট্রম। ৩০ এপ্রিল ভয়াবহ এই সাইক্লোনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও তার থাবায় প্রাণহানি ঘটে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার লোকের। এই ঝড়ের সিভিয়ারিটি এমন ছিলো চট্টগ্রাম বন্দরের প্রচুর জাহাজ হারিয়ে যায়, ক্রেন ভেঙ্গে সাগরে পড়ে যায়, ঘর-বাড়ি, ব্রীজ-কালভার্ট, পশু-পাখি সহ প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিসাধন হয়। লক্ষ লক্ষ কৃষক হন ভূমিহারা। উপক’লের ৯৫ শতাংশ ক্ষেত নষ্ট হয়।

১০ মে, ১৯৯১ সাল। ভারত, চীন, পাকিস্তান, জাপান, রাশিয়া ও আমেরিকান মিলিটারি স্ট্রম চেজারদের যৌথ মহড়ায় শুরু হয় উদ্ধার ও রিলিফ এ্যারাইভিং প্রোগ্রাম। এটাকে অপারেশন সী এ্যাঞ্জেল আখ্যা দেওয়া হয়। ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল স্টোকপ্যাল এর নেতৃত্বে ৪০০ মেরিনার, ৩০০০ সোলজার তৎপরতা চালায়। প্রায় ২ কোটি মানুষকে ওষুধ, খাবার পানি, শুকনো খাবার সরবরাহ করে তারা।

এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এতোটাই প্রকট আকার ধারন করেছিলো, অনেক মানুষ লংটাইম ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েছিল। কারণ, প্রায় প্রতিটা মানুষ তাদের কোন না কোন আপনজন হারায়।

ক্যালেন্ডারে এখন মে মাস। সময়ের আবর্তনে হয়তো মোমেন্টাম সমান্তরালে হাঁটছে।২৯ এপ্রিল রাতের সেই নিম্নচাপের ভয়াবহ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। সেই নিম্নচাপের হয়তো কোন নাম ছিলো না। ২০১৯ সালেও বায়ুমন্ডলে ভয়াবহ একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে, নাম ফণী।

১৯৯১ সালে ফেইসবুক ছিলো না, ২০১৯ সালে হাতে হাতে ফেইসবুক। নিম্নচাপের সার্বক্ষণিক খবর পাওয়া যাচ্ছে। একদল লোক প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের আশ্রয়ে একের পর এক ট্রল করে যাচ্ছে, তা সত্যিই অমানবিক ব্যাপার। আমাদের ট্রল রেখে দুর্যোগ প্রশমনের দিকে মনোনিবেশ হওয়া উচিত। কারন, ২৯ শে এপ্রিল রাত ইতিহাসে আবারো ফিরে আসতে পারে।

লেখক :: সমাজ সংগঠক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.