আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শ্বশুর বাড়ির ইফতার না কি অত্যাচার?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-০৫ ২০:২৯:০৭

ফরিদ উদ্দিন :: পবিত্র রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সাথে সাথে অন্যান্য রোজাদারদের সেবা করাও জরুনি। এতে যেমন সওয়াব বাড়ে তেমনি মানবতাও বাড়ে মানুষে মানুষে, কমে হিংস্রতা। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য রোজা ফরজ। রোজা সবাই রাখেন।

কিন্তু কিছু কুসংস্কারের কারনে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ইফতারে এসে রোজার মাহাত্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন ইফতার করানো। আমাদের দেশের কিছু অঞ্চলে শ্বশুর বাড়ির ইফতারি খাওয়ার প্রবল প্রবনতা আছে। বরের বাড়ি ঘটা করে এ ইফতার খাওয়ার জন্য কনের বাড়িতে নানা রকম চাপ সৃষ্টি করেন। মূলত কোরআন হাদিসে এর কোন ভিত্তি নেই। এই প্রবনতা আমাদের লোভের তৈরি। অথচ ধর্মে লোভও পাপ। আমরা রোজা রেখে সওয়াব করি আর ইফতারির জন্য পাপ করি। যোগ বিয়োগটা করে নিন।

আর এ পাপের আবার ‘ক্যাটাগরি’ আছে। শ্বশুর বাড়িতে ফরমায়েশ দেওয়া হয় কোন কোন আইটেম কতটুকু আনতে হবে।২ মন ৪ মন না হলে ইজ্জত বাঁচেনা।অথচ এরাই ইফতারির জন্য হাত পাততে ইজ্জতের চিন্তা তো করেই না সেই সাথে গরীব শ্বশুরের জন্য এটা যে কত বড় নির্যাতন তাও ভাবে না!

২০১৮ সালে আমার দেখা কয়েকটা পরিবার আছে যারা মেয়ের বাড়ি ইফতারি পাঠাতে হালের বলদটা বিক্রি করে দিয়েছে! শাশুড়ির শেষ সম্বল ছোট কানের দুল জোড়া বিসর্জন দিল মেয়ের মুখ রক্ষা করতে! আসলেই কি মেয়ের মুখ বাঁচলো? না বরের মুখে চুনকালি পড়লো?

গেল লোভের পাপের কথা। আসুন আত্মহত্যায়। আত্মহত্যা মহাপাপ আমরা জানি। যিনি আত্মহত্যায় প্ররোচিত করবেন তিনিও অপরাধী ও পাপী। অথচ অতীতে এরকম ঘটনা ঘটেছে ইফতার দিতে না পারায় বরের বাড়ির নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছেন দরিদ্র কন্যা। এ আত্মহত্যা, প্রাণনাশের দায় কার? শুধুই ঐ বরের বাড়ির? না এ দায় আমাদেরও। যারা এ অন্যায় কুসংস্কার ভাঙ্গতে এগিয়ে আসিনি তারা।

শ্বশুর বাড়ির ইফতারি খেতে আমরা যারা ধিক্কার না দিয়ে ভোজন করতে যাই। আসুন একটু কঠিন করে দেখি। লুটপাটের অনুমোদন ইসলাম ধর্ম দেয় না। ইসলাম ধর্ম কোথাও বলেনি জোর করে লুট করে এনে ভোগের কথা। অথচ বরের বাড়ির লোকজন জোর করে কনের বাড়ির ইফতারি লুট করে আনলো আর আপনি আমি পাঞ্জাবি পরে টুপি পরে দিয়ে সেই লুটের খাওয়ায় হাজির হলাম! লুটের পাপটা কি আপনার ঘাড়ে পড়ছে না? সে খাবারে আপনার কাঁধের ফেরেস্তা কিরামান কাতিবিন কি লিখবেন একটু ভাবুন তো! হালের বলদ বা কানের দুল বিক্রি করা টাকায় ইফতারি এলো। আপনার লোভিত চোখ আর লালাভরা জিহবা খুব আনন্দিত কিন্তু ওপাশে ঐ দরিদ্র বাবার বুক চাপড়ানি আর চোখের জলের অংকটা কিরামান কাতিবিন কি ভাবে লিখবেন? যদি বুঝতে পারেন ভাল একজন আলেমের কাছে যান। গিয়ে জেনে নিন এ খাওয়াটা ঠিক কি না, সেই সাথে জেনে নিন আপনার রোজাটা পরিপূর্ণ হলো কি না।

শেষের দিকে ২০১৮ সালের একটা কথা বলি, সম্পর্কে চাচা হন তিনি। তাঁর বাড়ির টিনের চাল মেরামত করার জন্য একজন হিন্দু মিস্ত্রি এলেন। মিস্ত্রি কাট কাটছেন আর বিড়ি টানছেন। সেই ধোঁয়ায় চাচা বেরিয়ে এলেন। এসে বললেন বেটায় বিড়ি টানের এ গন্ধে আমার রোজা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম কেন চাচা গত পরশু আপনার মেঝো ছেলের শ্বশুর বাড়ির ইফতারি আনালেন খেলেন কোন গন্ধ পান নি? উত্তর পাইনি তবে ঐ চাচা আমার সাথে কথা বলেন না! কথা শেষে শেষ কথা হল। ইফতার করান, ইফতারি খান কিন্তু তা চাপ প্রয়োগ করে নয়, হাত পেতে নয়, বউকে নির্যাতন করে নয়। আর রোজা যদি সওয়াবের জন্য রাখেন তবে এটাও করুন পথচারীদের ইফতার করান, দরিদ্রদের ইফতার করান। আর নিজের সাধ্যমতো ইফতার নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান।

আল্লাহ আমার তৌফিক দিলে আমি আমার শ্বশুর ইফতার নিয়ে যাব। আপনি যাবেন কি?
আসুন কোন চাপ নয় নির্যাতন নয় রমজানের মাহাত্ম রক্ষা করি। আসন্ন রহমত, বরকত, মাগফিরাতের মাসকে আমরা যেন বেইজ্জত না করি।


@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন