আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ইফতারি প্রথা নিয়ে কেনো এত মাতামাতি?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-০৯ ১৩:৪৫:০১

সিদ্দিকুর রহমান সুমন :: পবিত্র রমজান আসলেই সিলেটের ঐতিহ্য ইফতারি নিয়ে কিছু সুশীল খুব বেশী মাতামাতি করেন। ইফতারি প্রথার বিপক্ষে লিখেন। তাদেরকে বিনীতভাবে আহবান জানাবো ইফতারির কারণে কতজন তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন, কত বধু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন,কত শ্বশুর ঋণগ্রস্থ হয়েছেন কিংবা কত পুত্রবধু শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন-আপনারা তালিকা প্রদান করুন, আমরাও চাই ইফতারির কারণে যারা পুত্রবধুকে নির্যাতন করে তাদের নোংরা মুখোশ উন্মোচিত হোক, সিলেটবাসী জানুক কত নিম্ন মন মানসিকতার মানুষও আমাদের সমাজে আছে।

আর যদি সেই তালিকা না দিতে পারেন তবে কাল্পনিক কোনো ঘটনা সাজিয়ে/লেখে ইফতারি প্রথার বিপক্ষে যাওয়াটা আপনাদের মানায় না। প্রথার বিপক্ষে নয় যারা এই ঐতিহ্যবাহী ইফতারি নিয়ে বধুকে নির্যাতন করে তাদের বিপক্ষে কথা বলুন। মনে রাখবেন নামমাত্র ৩/৪টি বিছিন্ন ঘটনা পুরো প্রথার চিত্র তুলে ধরে না।

সিলেটের ইফতারি প্রথা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। রমজান মাসে ফুরির (মেয়ের) বাড়ি ইফতারি পাঠানো সিলেট অঞ্চলের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভাস্বর। আপন স্বকীয়তায় এখানকার মানুষ উদ্ভাসিত। সিলেটের মানুষের চাল-চলন, আতিথেয়তা, সংস্কৃতি, স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে সুদূর বিদেশেও বিস্তৃত। অতিথি আপ্যায়নে সিলেটের মানুষের রয়েছে দারুণ সুখ্যাতি। তেমনি অতিথি হিসেবে কারও বাড়িতে যাওয়ার সময় নানা কিসিমের মওসুমী ফল-ফলাদি, মিষ্টি-মিঠাই বা পছন্দমতো যেকোনো জিনিস সাথে করে নেয়ার রেওয়াজও এখানে অনেক পুরনো।একটা জেলার সংস্কৃতির সাথে অন্য জেলার সংস্কৃতিতে পার্থক্য থাকবে-এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাই বলে সিলেটের এই প্রথার বিপক্ষে কথা বলতে গিয়ে কিছু মানুষের কারণে পুরো সিলেটবাসীকেই নোংরা মানসিকতার, নীচু মনের, লোভী পরিচয়ে পরিচিত করে তুলছেন আপনারা, সেটা কি ভেবে দেখেছেন?

সাংবাদিকতা কিংবা চাকুরির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ অনেক জেলার মানুষের সাথে আমার বেশ সম্পর্ক। রমজান মাসে দেখি ঢাকাসহ অনেক জেলায় প্রকাশ্যেই খাওয়া-দাওয়া চলে, অনেক মুসলিম ভাই তাদের হোটেল/রেস্টুরেন্ট খোলা রেখে প্রকাশ্যে খাবারের আয়োজন করেন, কেউ কিছু বলে না, অথচ সিলেট এলাকায় আর্থিক ক্ষতি হলেও রমজানকে সম্মান দেখিয়ে অন্য ধর্মের হোটেল ব্যবসায়ীরাও হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন। অনেক অমুসলিম ভাই-বোনরা প্রকাশ্যে খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকেন, কষ্ট হলেও কেউ কিছু বলেন না, এটাও আমাদের সিলেটের আরেক ঐতিহ্য-তাই না? কিন্তু অন্য জেলায় ‘ফুরির বাড়ী ইফতারি’দেয়া হয় না, তাই সিলেটেও কেনো এ প্রথা থাকবে-এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা থেকে একটু সরে আসেন। সিলেটের অনেক ঐতিহ্য আছে সেগুলোতো অন্য এলাকায় নেই-তাহলে সেগুলো তুলে ফেলতে এবং অন্য জেলার সংস্কৃতিকে সিলেটের সাথে যুক্ত করতে আন্দোলন করুন। আপনি প্রকাশ্যে বড় বড় ইফতার পার্টি করেন, আপনার ঘরে ইফতারের সময় ১০-১৫ রকমের বাহারি আইটেম থাকে, ১০ রমজানের পর ঈদ শপিং শুরু করেন-তখন কি একবারও ঐ কনের ঋণগ্রস্ত পিতার কথা চিন্তুা করেন? উনার ঘরে কি ১০-১৫ রকমের ইফতারি আইটেম আছে না কোনো রকম পানি আর খেজুর খেয়ে ইফতার করছেন, ইসলামের ভাষায় যে অন্য রোজাদারকে ইফতার করায় সে ঐ রোজাদারের সমান সওয়াব পায়-সেটা কি আপনি তামিল করেছেন? আপনি যখন ঈদ শপিং করেন তখন কি একবারও ভেবেছেন ঐ ঋণগ্রস্থ শ্বশুরের কথা, তিনি কি তার পরিবারের জন্য ঈদের শপিং করতে পেরেছেন কি না..?

অতি আবেগী হতে গিয়ে নিজের এলাকার মানুষকে ছোট করবেন না, আপনার বোন-ফুফু-ভাগ্নি-ভাতিজির বাড়িতে ইফতারি পাঠানো বন্ধ করুন আর নিজের শ্বশুর বাড়ি, নানা বাড়ি, ভাবীর বাড়ি, চাচীর বাড়ি, মামীর বাড়ি থেকে আসা ইফতারীকে না বলুন, তারপর বুক উচিয়ে ফেইসবুকে লেখুন আমি ইফতারি খাই না-দেইও না। আমি আমার নানা বাড়ি থেকে এখনো ইফতারি পাই, যদিও আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই দেশের বাহিরে থাকায় ইফতারী আসার সেই আনন্দটা পাই না..আর আমার সাধ্যানুযায়ী ৩ ফুফুর বাড়ী ইফতারি পাঠাই-যতদিন বাঁচবো আমি এ ধারা চালু রাখবো।

লেখক : ব্যাংকার ও প্রাক্তন সাংবাদিক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন