আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কংগ্রেসের পরিণতি যেন আওয়ামী লীগের না হয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-২৯ ০৩:০৮:০৬

পীর হাবিবুর রহমান :: আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে বিশ্বরাজনীতিতে ঠাঁই পাওয়া মহাকাব্য যুগের যেসব নায়ক আমার হৃদয়ে আসন গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে ভারতের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আমার গভীর আবেগ, অনুভূতি, কৃতজ্ঞতাবোধ এবং তার ফ্যাশন, সাহস ও নেতৃত্বের মহিমার প্রতি গভীর মুগ্ধতা রয়েছে। আমার আজন্মলালিত রাজনীতির আদর্শের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যদি কোনো বিশ্ববরেণ্য নেতার প্রতি আমার প্রবল আবেগ, অনুভূতি, পর্যবেক্ষণ থাকে তা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি।

আমাদের গৌরবের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার নেতৃত্বে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। দারিদ্র্যপীড়িত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যার মধ্যেও ইন্দিরা গান্ধী আমাদের আশ্রয়, অস্ত্র, ট্রেনিং সহায়তাই দেননি, এক কোটি শরণার্থীকে খাবারও দিয়েছিলেন। আমাদের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বজনমত গড়তে পশ্চিমা দুনিয়া সফরও করেছেন। এমনকি পাকিস্তানি কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে আটক রেখে ইয়াহিয়া খানের সামরিক আদালতে ফাঁসির আদেশ দিয়ে তা কার্যকর করে কবর দেওয়ার ব্যবস্থাও যখন চূড়ান্ত, তখন ইন্দিরা গান্ধী তার মুুুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
ভারত আমার কাছে একটি প্রিয় দেশই নয়, পাশে থাকা আপন ও নিরাপদ বন্ধুর মতো। ভারতের সঙ্গে আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে দেনদরবার, আলোচনা ও সমঝোতার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেলেও তা বন্ধুসুলভ মনোভাবের হিসাব-নিকাশেই হওয়া উচিত। তেমনি একাত্তরেই মীমাংসা হয়ে গেছে যে, আমাদের জনগণের ওপর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনা শেষে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পরিচালিত বর্বরতা, হত্যাকান্ড, ধর্ষণ এবং তার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমা না চেয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের সংসদের ভিতরে-বাইরে বিভিন্ন সময়ের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রমাণ করে দেয় রাষ্ট্রীয়ভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও সেই বর্বরতার দাগ, সেই হত্যার বিভীষিকা এবং অমানবিক ধর্ষণের নিষ্ঠুরতা মুছে যায়নি। পাকিস্তান আজন্ম শত্রুই থেকে গেছে। আর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে নানা সরকারের সময় বন্ধুপ্রতিম ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন, কূটনৈতিক শীতলতা বা ছন্দপতন ঘটলেও ভারতবাসীর প্রতি আমাদের অস্তিত্বের স্মারক বা একাত্তরের রক্তে লেখা আবেগ, অনুভূতির বন্ধুত্ব সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াও কখনো হালকা করতে পারেনি।

১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয়ে আমার কৈশোরের হৃদয় ব্যথিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার খবর শুনে আমার তারুণ্যের হৃদয় আর্তনাদ করেছিল। আমার কোমল হৃদয় থেকে এই মহান নেত্রীর জন্য সেই রজনিতে অশ্রু ঝরেছিল।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করে শান্তির দূত মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে আমার হৃদয় প্রসারিত হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্রিটিশ ভারতের ধনাঢ্য ব্যারিস্টার মতিলাল নেহরুর পুত্র ভারতের আরেক কারানির্যাতিত প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ’৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুকে পাঠ করে তার শিক্ষা, রুচি, আভিজাত্য, পান্ডিত্য এবং উদার গণতান্ত্রিক চেহারা আমাকে অভিভূত করেছে। কিন্তু তেজস্বী প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা একাত্তর সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তার পিতা নেহরু তার জায়গায় থাকলে সেই ভূমিকা নিতেন কিনা এ নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। এ পর্যবেক্ষণটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ভারতের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় আলাপচারিতায় শেয়ার করেছি। অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচন চলাকালে গেল মাসের শেষ দিকে কলকাতা ও দিল্লি সফরে গিয়েছিলাম। আমাদের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তের সঙ্গে কলকাতায় কফি পান করতে করতে দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছিলাম। বাংলাদেশে তার পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এ দেশের মানুষের জন্য তার আবেগ-অনুভূতি রয়েছে। একজন অসাম্প্রদায়িক, উদার, হৃদয়বান মানুষ হিসেবে আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাম ফ্রন্টকে সমর্থন করেন। দিল্লির ক্ষমতায় সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলে উঠে আসা নরেন্দ্র মোদিকে আর দেখতে চান না। যদিও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী থেকে কংগ্রেসের অনেক নেতার গভীর নৈকট্য পেয়েছেন। দিল্লিতে একান্ত দীর্ঘ আড্ডায় আনন্দবাজারের আবাসিক সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে একটি টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষালের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করেছি। সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত যে কথা আমাকে বলছিলেন, তা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসছেন না। কংগ্রেসের নেতৃত্বে আঞ্চলিক দলগুলো নিয়ে কোয়ালিশন সরকার হতে যাচ্ছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুরও একটি সতর্কবাণী স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। রাজনীতিতে সবার ঘর করা মমতাকে নাকি এই বলে সেদিন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বাংলায় বিজেপিকে এনে মমতা যে ভুল করেছেন একদিন তার খেসারত সবাইকে দিতেই হবে।

জয়ন্ত ঘোষাল তার পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে মোটা দাগে বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই বিজেপি জোট আবার ক্ষমতায় আসছে। কংগ্রেস শত আসন পেলেই তাদের ইজ্জত রক্ষা হবেÑ এমনটিই মনে করছে ভিতরে ভিতরে। এমনকি উত্তর প্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর জোটে কংগ্রেসকে না নেওয়ার পরও কংগ্রেস জোট সেখানে প্রার্থী দিয়ে ভোট করতে গিয়ে বিজেপিকেই লাভবান করেছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের চেতনা লালন করা কেউ কেউ বলছিলেন, উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভরাডুবি ঘটছে। তারাও মোদি নয়, কোয়ালিশন সরকারের স্বপ্ন দেখে হিসাব-নিকাশ করছিলেন। আর জয়ন্ত ঘোষাল আরও বলছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে খবর পাচ্ছেন তাতে মমতার দুর্গ থেকে তৃণমূলকে হটিয়ে বিজেপি অন্তত ১২টি আসনে জয় ছিনিয়ে নেবে। দিল্লিতে তিন রাত থাকাকালে উবারে চড়তে গিয়ে সবকজন চালককে একটি প্রশ্নই করেছি, কে আসছেন ক্ষমতায়? সবাই একবাক্যে বলেছেন, মোদিই আসবেন ক্ষমতায়। কারণ, তার বিপরীতে কোনো নেতৃত্ব নেই। একজন উবারচালক এই বলে আমাকে চমকে দেন যে, সব আঞ্চলিক দলের এবং কংগ্রেস নেতারা মোদির বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে সমালোচনার তুফান তুলে কার্যত তারই প্রচারণা এগিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকায় বসে প্রথম যখন বুথ জরিপের ফলাফলে মোদির আর বিজেপির নামই উচ্চারিত হচ্ছিল, তখন দেখছিলাম অন্যরা সেটিকে আমলে নিচ্ছেন না। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে দেখেছি বুথ জরিপের ফলাফল সঠিক হয়েছিল। সেই নির্বাচনের এক বছর আগে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ১২ জন সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে সাত দিনের সফরে গিয়ে উপলব্ধি করেছি, এককালের কট্টর বিজেপি নেতা এল কে আদভানিকে হটিয়ে গুজরাটে টানা চার দফা বিজয়ী মুখ্যমন্ত্রী বহু বিতর্কের ঝড় মাথায় নিয়েও প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে উঠে আসছেন। ঢাকায় ফিরে রিপোর্ট করেছিলাম, ‘মোদি ঝড়ে নিষ্প্রভ রাহুল’। আর নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে দেখেছি, বিজেপিকে পেছনে ফেলে নরেন্দ্র মোদি নিজেকে ব্র্যান্ড করে পরিকল্পিত সংগঠিত শক্তিশালী প্রচারণা চালিয়ে নিজেকে সামনে নিয়ে এসেছেন। সেবার স্লোগান ছিল, ‘আব কি বার মোদিকা সরকার’ তার গুজরাট রাজনীতির ডান হাত অমিত শাহকে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি তার ক্যারিশমায় কংগ্রেস জোটের ১০ বছরের শাসনামলকে দুর্নীতির অভিযোগের তীরে যেমন ক্ষতবিক্ষত করছেন, তেমনি গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বের মুখ সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে তীব্র শক্তি নিয়ে আঘাত করছেন।

সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা চা-বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি আরএসএসের শক্তিতে বিজেপির রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে উঠে এসে ধাপে ধাপে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। রাজনৈতিক গুরুদের পেছনে ফেলে সামনে উঠে এসে ভোটের রাজনীতিতে কিস্তিমাত করেছিলেন। সেই ভোটের ফলাফলকে গণমাধ্যম সুনামি বিজয় বা ভূমিধস বিজয় বলেছিল। ইউপিতে ৮০টি আসনের মধ্যে ৭৩টি আসনে গেরুয়ার বিজয় নিশান উড়েছিল। আর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস তার ইতিহাসের শোচনীয় পরাজয় দেখেছিল। এমনকি পশ্চিমা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত অভিজাত শ্রেণি থেকে উঠে আসা সালমান খুরশিদের মতো নেতারাও শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিলেন। এবার কংগ্রেসসহ সব আঞ্চলিক দলের এমনকি দিল্লির আম আদমি পার্টির কেজরিওয়ালের সমালোচনার মুখে নরেন্দ্র মোদি আরেকবার বিশাল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে সেবার ২টি আসন নিয়েছিলেন, এবার মমতার থাপ্পড়কে আশীর্বাদ বলে সত্যি সত্যি ১৮টি আসন দখল করে জানিয়ে দিয়েছেন সন্ন্যাস বা সাধকের মতো সাধারণের ভিতর থেকে অসাধারণ শক্তি নিয়ে উঠে আসা নরেন্দ্র মোদি সর্বভারতীয় নেতাই নন, তার দল বিজেপিও এখন সর্বভারতীয় একটি রাজনৈতিক দল। পশ্চিমবঙ্গে মমতার দুর্গই তছনছ হয়নি, তার ৪২ আসনে বিজয়ের দৃঢ় অহংকার চূর্ণবিচূর্ণই করেননি, এককালের বাম ফ্রন্টের ভোটারদেরও তার দলে টেনেছেন। কংগ্রেস মাত্র ২টি আসন পেয়েছে। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে হচ্ছে তৃণমূলের ক্ষমতার দাপট, নেতা-কর্মীদের উন্নাসিকতা বাংলা কীভাবে ত্যাগ করেছে। রাগে হোক, ক্ষোভে হোক বাম ফ্রন্টের ব্যর্থতার মুখে তৃণমূলের শাসনের ভয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্ববাদের স্লোগান বিজেপিকেই বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর মোদি কেবল হিন্দুত্ববাদই নয়, নিজের নেতৃত্বের ক্যারিশমা দিয়েও জনড়ণের আস্থা অর্জন করেছেন।

কংগ্রেস ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৪টি আসন লাভ করেছিল। এবার পাঁচ বছরের প্রস্তুতি লোকসভার বিতর্ক ভোটযুদ্ধে রাহুলের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ নোট বাতিলসহ সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযোগ মোদির জাতীয়তাবাদী ও হিন্দুত্ববাদের গেরুয়া মোহজাল ছিন্ন করে জনগণকে পক্ষে টানতে পারেনি। কংগ্রেস নেতৃত্বহীন অবস্থায় না দেখাতে পেরেছে ক্যারিশমা, না দেখিয়েছে সাংগঠনিক শক্তি! দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করে কোমর বেঁধে ভোটযুদ্ধে নামতে পারেনি। অন্যদিকে মোদিকে আক্রমণ করায় তার পক্ষের হিন্দুত্ববাদী সব শক্তি মান-অভিমান ভুলে তার বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করে বিশাল বিজয় অর্জন করেছে। আগের বিজয় সুনামি হলে এবারের বিজয় কালের ইতিহাস। কংগ্রেসের বাইরে থেকে কোনো দল সবাইকে শোচনীয় পরাজয় ঘটিয়ে যেমন এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা আনতে পারেনি তেমনি টানা দুুবার কেউ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ভারতের ইতিহাস গড়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এবার তার স্লোগান ছিল, ‘ফির একবার মোদি সরকার’- সেটিই মানুষ গ্রহণ করেছে। আর গান্ধী পরিবার ও কংগ্রেস দেখছে ইতিহাসে তাদের এমন বিপর্যয় কখনো আসেনি।

ইন্দিরা গান্ধী দাপটের সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে পিতার উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে ভারত শাসনই করেননি, শক্তিশালীও করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শক্তিশালী ভারত প্রতিষ্ঠায় ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক ভারতের আদর্শ ও চেতনাকে লালন করে জনগণের হৃদয় জয় করে পথ চলেছেন। তার রক্তের ওপর দিয়ে আবেগ-মোথিত ভারতবাসীর গণরায় নিয়ে তার পুত্র রাজীব গান্ধী বিমানচালক থেকে বৃহত্তম ভারত পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাকেও নির্বাচনী প্রচারণাকালে জীবন দিতে হয়েছে তামিল আত্মঘাতীর বোমা হামলায়।

একসময় কংগ্রেস ছেড়ে অনেকেই আঞ্চলিক দল করেছিলেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব তাদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে পারেনি। এতে নিজেদের যেমন শক্তি ক্ষয় হয়েছে তেমনি আঞ্চলিক দলগুলোও জনসমর্থন হারিয়েছে। অনেকেই এ ফলাফলে বলছেন, গান্ধী পরিবারের পরাজয় ঘটেছে। পরিবারতন্ত্রের পরাজয় ঘটেছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতন্ত্র ও মানবতাবোধ ভারতের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করতে চাইলেও দল তাকে সরে যেতে দেয়নি। দলের কাছে বিকল্প নেই। সোনিয়া গান্ধী পরিবারের এবং কংগ্রেসের আদর্শ ও ঐতিহ্য লালন করলেও ক্ষমতার বাইরে থেকে মনমোহন সিংহকে দিয়ে ১০ বছর ভারত শাসন করিয়েছেন। প্রচলিত আছে, গান্ধী পরিবারের ট্র্যাজিক মৃত্যুভয় তাকে তাড়া করে বলে সন্তানদের তিনি সেভাবে রাজনীতিতে ছেড়ে দেননি। এবারের নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা দলে এসেছেন। দলকে সাজানো, সংগঠন শক্তিশালীকরণ এবং আদর্শের ওপর সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনের রাজনীতির রণকৌশল কীভাবে নির্ধারণ করবেন সেটিই এখন উপমহাদেশের রাজনীতিতে দেখার বিষয়। শতাব্দীপ্রাচীন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের ভারত নির্মাণে অবদান তরুণদের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না; সেটিও তাদের খতিয়ে দেখতে হবে। ইন্দিরা গান্ধী সংগঠন করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। সেই ফলাফল তিনি ও তার উত্তরাধিকাররা ভোগ করেছেন। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে পূর্বসূরিদের অর্জন আর ভোটে কাজ হচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে বিজেপির জয়ী সব আসনে ভারতের জনগণ নরেন্দ্র মোদিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমেথির মতো পারিবারিক আসনে আগের নির্বাচনে পরাজিত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা টিভি সিরয়ালে অভিনয় করা স্মৃতি ইরানি পাঁচ বছর মাটি কামড়ে নির্বাচনী এলাকায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছেন বলেই রাজপুত্র রাহুলকে হারিয়ে দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন।

মোদির নেতৃত্বে বিজেপির টানা দুবারের ইতিহাস সৃষ্টি করা বিজয় রেকর্ডই নয়, টানা দুবার কংগ্রেসকে বিরোধী দলের আনুষ্ঠানিক মর্যাদালাভ না করার তলানিতে ফেলে দিয়ে আরেকটি রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গান্ধী পরিবার ও কংগ্রসের ভবিষ্যৎ কী? এ প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সবখানে। অভিজাতদের চেয়ে সাধারণের মধ্যে থাকা প্রার্থীদের কপালে মোদি ক্যারিশমায় বিজয় ঘটেছে। মোদির সঙ্গে জয়ের নায়ক হিসেবে অমিত শাহ উঠে এসেছেন। নরেন্দ্র মোদির জন্যও উগ্র হিন্দুত্ববাদে আক্রান্ত সেই উন্নাসিক সমর্থকদের সামাল দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। যারা গোরক্ষকের ভূমিকা নিয়ে গোমাংস রাখার অভিযোগে মানুষ হত্যার উন্মত্ত আচরণে লিপ্ত হয়।

এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতা-সংগ্রাম, ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতন শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসের পাশাপাশি যে মুসলিম লীগের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত উদার কোমল হৃদয়ের জিন্নাহকে সামনে নিয়ে এককালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর সেটি রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিশপ্তই হয়নি, পাকিস্তানেও এখন নির্বাসিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এখানে তার নাম মুছে গেছে। ৬৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে, সে দলটিকেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পথে পঁচাত্তরে মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত ও দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে দুর্বল করে ইতিহাসের চাকাকে উল্টে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধর্মান্ধ রাজনীতির ধারায় কোণঠাসা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশ ঘুরে দলকে শক্তিশালী ও সংগঠিতই করেননি, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দলকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। শক্তিশালী সরকার, সুশাসন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে একলা চল নীতির কারণে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে নিয়ে মৌলবাদের জিকির তোলা বিএনপি জোটের কাছে পরাজিত হয়ে এক কঠিন দুঃশাসনের মুখে পতিত হয়েছিলেন। একুশের গ্রেনেড হামলাসহ রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, গ্রেনেড বোমা, জঙ্গি, সন্ত্রাসের ভয়াবহতার মুখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল শক্তিকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনসহ সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ে ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিস্ময় সৃষ্টি করলেও নির্বাচন, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা ও সুশাসন নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে। টানা তৃতীয়বারের মতো এবার ক্ষমতায় এলেও শক্তিশালী সরকারের পাশাপাশি শক্তিশালী বিরোধী দল উঠে আসেনি। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক আদর্শিক রাজনীতির জনগণ সমর্থিত নেতৃত্বের উচ্চতায় শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব যেমন নেই, তেমনি আওয়ামী লীগই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে আত্মত্যাগকারী রাজনৈতিক দলের নাম।

ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর সামনে রেখে একই দিনে দেশের দুই প্রধান মহাসড়কে ছোট-বড় চারটি সেতু, দুটি উড়ালসড়ক, চারটি আন্ডারপাস চালু করেছেন। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী সেতুকে কেন্দ্র করে যে দীর্ঘ যানজট মানুষের জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এনেছিল তার অবসান ঘটেছে। চট্টগ্রামে এখন চার ঘণ্টায় সড়কপথে মানুষ যাচ্ছে। কুমিল্লায় দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে। ঢাকা-উত্তরবঙ্গের পথের কাঁটা চন্দ্রা মোড়-কোনাবাড়ী ও কিছু রেলক্রসিংয়ের যানজটের দুর্ভোগ নির্বাসিত হয়েছে উড়ালসড়ক ও আন্ডারপাস চালু হওয়ায়। কিন্তু এই আনন্দের সংবাদ যখন চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ একদিকে কমিটি ঘিরে নিজেদের বিতর্ক অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ায় ডাকসু ভিপি নূরকে বাধাদান ও তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকেই খবরের সামনে নিয়ে এসেছে। এই ছাত্রলীগের কীর্তিকলাপ এত বড় উন্নয়নের আলোচনাকে, প্রশংসাকে আড়াল করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনী অঙ্গীকারে দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ লুুটের কেলেঙ্কারি এবং স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির চিত্র সামনে উঠে এসেছে। ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজার লুটের ইতিহাস তো রয়েছেই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মতোই জনকল্যাণের রাজনীতিতে নিজের ভাগ্য উন্নয়ন নয়, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের নীতি অনুসরণের যত তাগিদ দিচ্ছেন, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার আগে ও পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি যত সতর্কবার্তা আর কাকুতি-মিনতি করেন না কেন, তবু যেন গত ১০ বছরে ক্ষমতার ছায়ায় থাকা দল ও প্রশাসনের একটি অংশ আজ দুর্নীতির পথে হেঁটে অঢেল বিত্তবৈভব ও ভোগবিলাসে অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। অনেক এলাকায় কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি হয়ে, কেউবা প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা হয়ে জনগণের সেবক নয়, শাসকের ভূমিকায় বারো ভূইয়ার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন। আহমদ ছফা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে মুষ্টিমেয় লোক বিজয়ী হয়। আর পরাজিত হলে গোটা জাতি পরাজিত হয়। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতার বাইরে তখন দলের নির্যাতিত কর্মীদের নিহত স্বজনদের লাশ টানতে হয় শেখ হাসিনার। দলের আদর্শবাদী নেতা-কর্মীদের নির্যাতন ভোগ করতে হয়। আর ক্ষমতার ১০ বছরে গোটা দেশ যেভাবে আওয়ামী লীগ হয়েছে তাতে বড় ভয় হয়, আওয়ামী লীগের না একদিন কংগ্রেসের পরিণতি ভোগ করতে হয়। কারণ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ভারতের গণতন্ত্রের রাজনীতির মহিমাই হচ্ছে ভোটের ময়দানে যত আক্রমণ হোক না কেন, যত অভিযোগের তীরই ছুড়ে দেওয়া হোক না কেন জনগণ নির্বিঘেœ যাকে খুশি ভোট দেবে এবং রায় মেনে নেবে।  ফলাফল ঘোষণার পর সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নরেন্দ্র মোদিকে এমনকি তার আমেথির আসনে বিজয়ী স্মৃতি ইরানিকেও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্যরাও তাই করেছেন। আর মোদি তার রাজনীতির গুরুদের কাছেই নয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাড়িতেও গেছেন। হয়তো সোনিয়ার কাছেও যাবেন।

এই দেশেও সব সময় নির্বাচন এক প্যাটার্নে হয় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পাঁচ বছর পরের ৩০ ডিসেম্বর হয়নি। আগামীতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর আমাদের স্বাধীনতার হাফ সেঞ্চুরি পালনের পর মধ্যবর্তী নির্বাচনই হোক আর পাঁচ বছর পর নির্বাচন হোক সেটিতে জনরায় যেন নির্বিঘ্নে  প্রতিফলিত হতে পারে। সেটি সবাই চাইবেন। শেখ হাসিনা এত উন্নয়ন বরাদ্দ দেবেন আরেকটি অংশ লুটপাট করে তার সব অর্জনকে ধূসর করে দিলে সে নির্বাচনের ফলাফল সুখকর না-ও হতে পারে। এদিকে বিরোধী দলের অস্তিত্ব দুর্বল হওয়ায় সারা দেশে অর্ধশিক্ষিত একশ্রেণির মোল্লা যেসব ওয়াজ করছেন তাতে সাম্প্রদায়িকতার বিষের বাতাস ছড়াচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মনে করলে ভুল করা হবে।

তুরস্কের এরদোগান যে পথে ধর্মের শক্তিতে ক্ষমতায় এসেছেন, যে পথে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে হিন্দুত্ববাদের স্লোগান তুলে বিজেপি উঠে এসেছে সেখানে একদিন এ দেশে ধর্মান্ধ শক্তি হঠাৎ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে উঠে আসবে না; সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভারতে যেমন ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ঐতিহ্য ও চেতনা স্বাধীনতা সংগ্রামী কংগ্রেস লালন ও ধারণ করে তেমনি এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বহন করে। কংগ্রেসের পরাজয়ে যেমন বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হোঁচট খেয়েছে, তেমনি এখানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ঐতিহ্য পরাজিত হবে। একদল ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ লোভী অসৎ যারা সংখ্যায় কম কিন্তু তাদের লোভের দানবীয় চেহারা বড় বেশি কুৎসিত। তাদের জন্য এত বড় শক্তি ও অর্জনকে পরাজিত হতে দেওয়া যায় না। তাই যারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন, উন্নাসিক দাম্ভিক আচরণে মানুষের মন ব্যথিত করবেন, দুর্নীতির মহোৎসবে আকণ্ঠ ডুবে যাবেন তিনি মন্ত্রী হোন, এমপি হোন আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই হোন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জনগণের হৃদয় জয় করতে সহায়ক হবে। রাজনীতিতে জনগণই শক্তির উৎস। দুনিয়াজুড়ে স্বীকৃত। এখানের ইতিহাসও তাই। প্রশাসন আর সুবিধাভোগী শ্রেণিনির্ভর ক্ষমতা অতীতে কারও জন্য সুখকর হয়নি। জনগণের হৃদয় জয় করে রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় যেমন থাকতে হয়, তেমনি ক্ষমতায় আসতে হয়। ১০ বছরের শাসনামল কংগ্রেসকে ১০ বছরের জন্য পিছিয়ে দিল নাকি আরও বেশি সময়ের জন্য সেটি সময় বলে দেবে। স্বাধীনতা সংগ্রামী কংগ্রেসের পরিণতি দেখে আর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির ইতিহাস গড়া থেকে আওয়ামী লীগকে শিক্ষা নিতে হবে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন