Sylhet View 24 PRINT

যাকাত সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার একমাত্র উপায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-৩১ ০১:৫৫:৪২

আল-আমিন :: যাকাত আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ- যা পরিশুদ্ধ করে, পবিত্রতা, বৃদ্ধি, সংশোধিত হওয়া। যাকাত হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ অতিক্রম করলে এই সম্পদ থেকে গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।

অর্থাৎ নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি ১ বছর ধরে নিজের কাছে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ শুধুমাত্র সম্পদশালীদের জন্য ফরয হয়। পবিত্র কোরআনে যাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার যাকাতের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

যাকাতের ফর‍য হওয়ার অন্যতম শর্তসমূহ হলো:-
১. সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যে সকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সে সকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই। যেমনঃ- সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ এবং জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়াকফকৃত সম্পদ। তবে ওয়াকফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

২. যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতা থাকতে হবে। যেমনঃ- গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। আবার যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না। যেমনঃ- ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, নিজের চলাচলের বাহন ইত্যাদি।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
৪. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে।

৫.নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ত থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যে, যা নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে অপর একটি মত হলোঃ- যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যে বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সে বছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।

৬. নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বর্তপত্রে বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

যাকাত বণ্টনের খাতসমূহঃ-
পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবা'য় যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কোরআন দ্বারা নিদিষ্ট এবং যেহেতু তা আল্লাহ'র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না। যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য।
১. ফকির (যার কিছুই নেই)।
২. মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)।
৩. যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য কোনো জীবিকা নেই)।
৪. অমুসলিমদের মন জয় করে এমন কেহ (ইসলাম দাওয়াত প্রচারকারী)।

৫. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)।
৬. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী।
৭. আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি।
৮. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।

রাসূল (সঃ) এর হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত। অনেকে যাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে বন্টন করে থাকেন। এভাবেও যাকাত আদায় হলেও প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো অর্থ প্রদান করা এবং যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকে বা একটি পরিবারকেই যাকাতের বেশি পরিমাণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।

যাকাত প্রদানের নিয়ম এবং নিসাব পরিমাণ বিভিন্ন দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। যাকাতের সর্বনিম্ন পরিমাণ বা যাকাতের হার নগদ অর্থ বা ব্যাংক জমা এবং ব্যবসায়িক পণ্য ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%। স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা সোনা-রূপার অলংকার সোনা ৭.৫ তোলা এবং রূপা ৫২.৫ তোলা সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%।

কৃষি উৎপাদিত ফসল ৫ ওসাক বা ১৫৬৮ কেজি হলে যাকাত দিতে হবে এর মধ্যে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্রে ৫% এবং বৃষ্টিতে উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্রে ১০%। খনিজ দ্রব্যের যেকোনো পরিমাণ মোট উৎপাদনের ২০%। ছাগল, ঘোড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট, ঘোড়া নিসাব পরিমান থাকলে এসবের উপর যাকাত দেওয়া ফরয।

যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই। যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি, বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলসমূহের যাকাত দিতে হয়। হাদিসের আলোকে যেসকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলোঃ- জমি ও বাড়িঘর, মিল, ফ্যাক্টরি, দোকান, গুদাম ইত্যাদি। এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু, ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক, বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী, গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প, অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি, গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগী ও পাখি, কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী, চলাচলের যন্তু ও গাড়ি, যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম, ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য, বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ, যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সেবছরই ব্যয়িত সম্পদ, দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত, সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ।

তথ্য সংগ্রহ:
বোখারী শরীফ যাকাত অধ্যায়।
ইসলামী অর্থনীতি (অনার্স সিলেবাস নির্ধারিত)।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন রিচার্স সেন্টার যাকাত তথ্য বিভাগ।
যাকাত উইকিপিডিয়া।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.