আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডেইরি সেক্টরের পিছে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য, প্রধানমন্ত্রী-ই শেষ ভরসা

:: শাকিল জামান ::

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৯ ২১:০১:১৩

:: শাকিল জামান ::

দেশীয় শিল্পের বিকাশ না ঘটলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আর এতো এতো মানুষ বেকার থাকলে, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত থাকলে, যতোই আমরা মধ্যআয়ের দেশ বলে চিৎকার চেঁচামেচি করি না কেনো আদতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। দেশের মোট সম্পদের ৯০ শতাংশ ই একটা শ্রেণি নিয়ন্ত্রণ করছে।

দেশের শিল্পকে ধ্বংস করে আমদানি নির্ভর ব্যবসা পরিচালনা ও সরকারকে বিভিন্নভাবে ধোঁকা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে তারা এই সম্পদের মালিক হয়েছে। এই সম্পদশালী শ্রেণি এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে যে, দেশের প্রত্যেকটা সেক্টরকেই আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস আসে এখন বাইরে থেকে। আমাদের কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে না ভালো দামে অথচ আমাদের দেশে এখনো বাইরে থেকে চাল আসে। পেয়াজ, রসুন, আদা, টমেটো এমন কোনো পণ্য নেই যা আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয় না। অথচ, চাইলে সবগুলোই আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারতাম। বাইরে থেকে বিভিন্ন নিম্নমানের পণ্য এনে কমদামে বাজারে ছাড়া হয়, তখন দেশী কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে এক সময় চাষাবাদ ছেড়ে দেয়। আর তখনই এইসব আমদানিকারকেরা একচেটিয়া বাজার দখল করে নেয়।

এখন এই মাফিয়াচক্রের চোখ পড়েছে দেশের ডেইরি সেক্টরে। তিলে তিলে নানান সমস্যার সাথে সংগ্রাম করে যখন এই দেশের প্রাণিসম্পদ বিশেষ করে ডেইরি সেক্টর মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এদেশের শিক্ষিত তরুণেরা এই সেক্টর নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, সরকার যখন এই সেক্টরকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে, ঠিক তখনই এই চক্র কোটি কোটি টাকা ঢেলে দিচ্ছে এটা প্রমাণের জন্য যে দেশীয় উৎপাদিত দুধে ক্ষতিকর নানান উপাদান আছে। জনমনে আতংক সৃষ্টি করে, সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ প্রয়োগ করে এরা গুড়ো দুধের বাজারকে উন্মুক্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশ থেকে নষ্ট গুড়োদুধ তারা কমদামে এদেশে নিয়ে আসে। যেগুলো ওইখানে থাকতেই মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে যায়। জাহাজে করে নিয়ে এসে যেদিন তারা নিজেদের মোড়কে এগুলো বাজারজাত করে ঐদিন থেকে এই দুধের নতুন মেয়াদ শুরু হয়। বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত এসব মেয়াদোত্তীর্ণ গুড়োদুধ জব্দ করলেও তারা এটা অব্যাহত রেখেছে।

এই চক্রটিই বাজেটের পূর্বে সক্রিয় হয়ে উঠে। বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রলুব্ধ করে নিজেদের মত করে একটা গবেষণা করায় এবং ফলাও করে সেটি প্রচার করে। গবেষণা করে দুধের মধ্যে তারা এমন কিছু এন্টিবায়োটিকের উপাদানও পেয়ে যায় যেটা গবাদিপশুতে ব্যবহারই হয় না। অথচ, এই গবেষণা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। জনমনে আতংক সৃষ্টি করে দুধের মত একটা পুষ্টিকর খাদ্য সম্পর্কে ভীতি তৈরী করা হয়।

কয়েকদিন পূর্বে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ গবেষণা করে পেয়েছে তরল দুধের মধ্যে এন্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্ট!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা জনগণ বিশ্বাস করবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ, যেই না সংসদে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য এই গবেষণাকে চ্যালেঞ্জ করলেন! তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ বিবৃতি দিয়ে জানালো এই গবেষণার সাথে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখন যদি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এই বিষয়টা না ধরতেন তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে এরকম মিথ্যাচার জনগণ ও সরকারের বিভিন্ন মহল বিশ্বাস করতো।

এটা যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো একশন নেয়া হচ্ছে না? টাকা খেয়ে যার যেমন ইচ্ছা গবেষণা প্রকাশ করে দিচ্ছে। হাইকোর্টে রিট করে দিচ্ছে। সবার আগে এসব গবেষণার স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট করা উচিত। একটা গবেষণা কতোটুকু সঠিক এটা টেস্ট না করে প্রচার করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত এটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে?

এই যে প্রাণিসম্পদ খাতকে ধ্বংস করার জন্য এতো চক্রান্ত এতো পাঁয়তারা, এসব দেখেও চুপচাপ এর অভিভাবক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। কেউ যদি এই সেক্টরকে বোমা মেরে উড়িয়েও দেয় তবুও মনে হয় তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো প্রতিবাদ পাবো না। তাদের এই সৎ সাহসটুকুও নেই এসব গবেষণা যারা করেছে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার, এদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়ার। মা-বাপহীন খামারিরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে, প্রতিবাদ কর্মসূচি করেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়। নষ্ট, নিম্নমানের গুড়োদুধ তারা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে আর খাটি দুধ উৎপাদনকারিদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়।

এই দেশের কোনো সেক্টরেরই আসলে মা বাপ নেই। পুরো দেশের একজনই অভিভাবক আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দেশে চুরি-ডাকাতি থেকে শুরু করে সবকিছুই তাকে দেখতে হয়। আমরা অভাগা খামারিদেরকেও প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। দেশের ডেইরি শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে, প্রাণিসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে, এসব মাফিয়াচক্রের দৌরাত্ম্য নির্মুল করে ডেইরি তথা প্রাণিসম্পদকে সুরক্ষা দিতে হবে। এই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কিনে নেয়া এ দুষ্টচক্রকে দমন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই আমাদের একমাত্র ভরসা।

লেখক : উদ্যোক্তা, সুরমা এগ্রো

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন