আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অব্যাহত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রবৃদ্ধির সুফল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১২ ১৮:০৯:১০

ড. এ কে আবদুল মোমেন :: বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হওয়া। এসব লক্ষ্য পূরণে নেওয়া হয়েছে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সারাদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে ১ হাজার ৯৭৮টি প্রকল্প। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৬৮২টি। বলা চলে, বহুমুখী এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

গত দুই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যে কোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় আমাদের অগ্রগতি বেশ সন্তোষজনক। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতি লক্ষ্য করা যায়। এটিকে উন্নয়নের ‘স্বর্ণযুগ’ বলা যায়। আর গত দশ বছরে এই উন্নয়নযাত্রার ধারাবাহিকতা ছিল নিরবচ্ছিন্ন। ফলে দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়েছে। জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার, নারী শিক্ষার্থীদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ। সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলে এ দেশের এই অগ্রগতি এসব সূচকে প্রতিবেশী ভারতও বাংলাদেশের তুলনায় পেছনে। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে আমরা এমডিজি অর্জনে সাফল্য পেয়েছি। এসডিজি বাস্তবায়নের পথেও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছি। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মেট্রোরেলসহ বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। উন্নতবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহাকাশে দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখিয়েছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আমরা এখন অপ্রতিরোধ্য। রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ছুঁয়ে গিয়েছি মাথাপিছু আয়ের নতুন দিগন্ত। এসবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে। তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর খাদ্য ঘাটতির একটি দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ রেকর্ড পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অর্থনীতিতে দেশজ পণ্য ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধি বোঝায়। কোনো দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির শতকরা হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা উন্নতি করছে, এর প্রধান নিয়ামক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সুখবর হলো, বাংলাদেশ এখন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত ৪৫ দেশের মধ্যে দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫ দেশের অর্থনীতির গতিধারা মূল্যায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য দিয়েছে। এডিবির মতে, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। তা ছিল ১৯৪৭ সালের পর দ্রুততম বিকাশ। সংস্থাটির পূর্বাভাস হচ্ছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। এটিকেও একটি অনন্য রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তারা। বাংলাদেশের উচ্চপ্রবৃদ্ধির পেছনে দক্ষ নেতৃত্বে, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার ও শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বলিষ্ঠ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং সঠিকভাবে উন্নয়ন অগ্রাধিকার দেওয়াকে চিহ্নিত করেছেন তারা। এ ছাড়া সরকারের উচ্চবিনেয়োগ, অভ্যন্তরীণ ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি, রপ্তানি বেড়ে যাওয়াকে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছে এডিবি। আগামীতেও এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের দ্রুততম থাকা অব্যাহত থাকবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির মতে, বাণিজ্যে বৈশ্বিকভাবে দুর্বল অবস্থা বিরাজ করলেও বাংলাদেশের এ ক্ষেত্রে অনুকূল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম দেশ ও দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় পঞ্চম। বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক মন্দার অভিঘাত মোকাবিলায় যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থনীতির দুর্বলতাসহ এশীয় অর্থনীতির শ্লথগতির মধ্যেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম সারিতে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মতো ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি বিশ্বের কোনো দেশ। বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রশংসা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের ১১৮টি দেশের মধ্যে মাত্র ১২টি ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। উন্নয়নের গতিশীলতা বাড়িয়ে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনোয়োগও বেড়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। এ বছর যদিও সারাবিশ্বে বৈদিশিক বিনিয়োগ কমেছে গড়ে ১৩ শতাংশ, তবুও বাংলাদেশে বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। তা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, আগামী পাঁচ বাছরের মধ্যে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় উঠে আসবে বাংলাদেশের নাম। উন্নয়নের এই গতিধারা চলতে থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সেখানে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে, যেখানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডার অবদানও একই।

গত মে মাসে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজিতে অনুষ্ঠিত এডিবির ৫২তম বার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা তুলে ধরে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক হান কিম বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার সাফল্যের এক কাহিনি হয়ে উঠেছে। প্রায় ৮ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে দেশটি অনেক ক্ষেত্রেই এখন এশিয়ার সব উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কেবল এগিয়ে চলেছে, শুধু তা-ই নয়। এর পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। বার্ষিক ৮ শতাংশ হারের প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে আরও বিদেশি বিনিয়োগ নিজে থেকেই বাংলাদেশে আসতে শুরু করবে। বাংলাদেশকে নিয়ে হান কিম এ ধরনের মন্তব্য আশাব্যঞ্জক। কেননা গত এক দশকে এশিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চল বলিষ্ঠ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক অগ্রগতির অন্যান্য ক্ষেত্রে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করলেও পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য সার্বিক প্রবৃদ্ধি এখনো অধরা রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সাফল্য অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ হবে ৩৬তম অর্থনীতির দেশ। পরের পাঁচ বছর আরও ৯টি দেশকে পেরিয়ে ২০২৮ সালে হবে ২৭তম বড় অর্থনীতির দেশ। পরের পাঁচ বছরে আরও ৩টি দেশকে টপকে যাবে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থপ্রবাহের পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বড় প্রবৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ ভোগ চাহিদা, সরকারি ব্যয়, প্রবাসী আয় ও রপ্তানিকে চিহ্নিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। সংস্থাটির মতে, আগামীতে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বের নামি-দামি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা।

এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আর যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্যোগক্লিষ্ট ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিদেশি ষড়যন্ত্র, হাজারো বাধা-বিপত্তি আর নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ‘উন্নয়নমাতা’ শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে এ দেশ ‘জি-টোয়েন্টি’র দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী গ্রুপ ‘জি-টোয়েন্টি’র সদস্যপদ লাভ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিশাল মাইলফলক হয়ে থাকবে। ফলে অর্থনৈতিক দুনিয়ায় নতুন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর কাতারে থাকবে বাংলাদেশের নাম। দেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে। কাক্সিক্ষত রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগে যোগ হবে নতুনমাত্রা। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমবে বেকারত্বের হার। জি-টোয়েন্টির বর্তমান সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বের প্রধান ও উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তিসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী গ্রুপ জি-টোয়েন্টির উদ্দেশ্য। সমষ্টিগতভাবে জি-টোয়েন্টির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো পৃথিবীর মোট জাতীয় উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ববাণিজ্যের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০২০ সালে সৌদি আরবে ১৫তম জি-টোয়েন্টির ১৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে জ্বালানি, পরিবেশ, জলবায়ু, ডিজিটাল অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শ্রমসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন প্রভাবশালী বিশ্বনেতারা।

ওইসব লক্ষ্য অর্জনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে খানিকটা। তা হলো দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্র কার্যকর না হওয়া ও প্রকল্পে ঋণ না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো। আবার অর্থ ছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থ ছাড়, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, মামলাজনিত সমস্যা, প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনে বিলম্ব, দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তিতে বিলম্বসহ নানা কারণে প্রকল্পের গতি কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ে, প্রকল্প চলাকালীন জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। এ জন্য আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এখনই। উন্নত রাস্তাঘাট-মহাসড়ক, উন্নত রেল ও বিমান, নদীপথের যোগাযোগসহ দৃশ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়নসহ অদৃশ্যমান উন্নয়নে নজর দিতে হবে। উন্নয়নযাত্রাকে আরও গতিশীল ও হয়রানিমুক্ত করার জন্য ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্তে বিবেন্দ্রীকরণ এখন সময়ের দাবি। সামাজিক রীতি-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি ও জটিলতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের মতো বিষয়গুলোর আশু সমাধান না করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে সফলতা আসবে না। বারবার হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা আছে। শিক্ষার গুণগতমান ও উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তির অভাব হলে আমাদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার সিকিউরিটিজনিত অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা এই ক্ষেত্রের বড় উদাহরণ।

সময়ের সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন কর্মকা- চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্তৃত এই উন্নয়ন কর্মকা- ঠিকঠাক বাস্তবায়ন আর দেখভালের জন্য সারাদেশেই দক্ষ, অভিজ্ঞ আর সৎ মানুষ লাগবে। কেননা ভূমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার জটিলতা, অর্থ বরাদ্দ, কাজের গতিসহ নানা বিষয় আসতে পারে। এগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতাও বাড়ানো জরুরি। সময়ের প্রয়োজনেই এখন ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্ট্রাকচার প্রবর্তন করা প্রয়োজন। কেননা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে বহুগুণ। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়েও উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। এর মাধ্যমে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে।

এখানে উল্লেখ্য, স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন প্রায় ১০০টি কমিটির সভাপতি। ফলে অনেক কমিটি কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ‘জেলা গভর্নর’ পদ্ধতি চালু করেছিলেন। ওই সময়ে যদি দেশে ধারাবাহিক এই পদ্ধতি চালু থাকত, তা হলে বাংলাদেশ এতদিনে হয়তো উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন উন্নত ডেটাবেজ বা তথ্যভা-ার। তা এখনো দুর্বল। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য খাতের সব তথ্য যাতে একসঙ্গে পেতে পারে, এর উপযোগী একটি কেন্দ্রীয় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে, এ দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ ২৫ বছরের নিচে এবং প্রায় ৭৪ শতাংশ ৪৫ বছরের কম বয়সী। আগামী ১৫ বছর আমাদের জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো বা কর্মের সংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি না করতে পারলে যথেষ্ট ঝামেলায় পড়তে হবে।

লেখক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন