Sylhet View 24 PRINT

সিলেটের সাংবাদিকতা ও মধ্যরাতের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৯ ১২:৩৮:০৪

ছবি: লেখক

মোহাম্মদ তাজউদ্দিন :: সিলেটের সাংবাদিকতার রয়েছে দেড় শত বৎসরের গৌরবোজ্জল অতীত। এই অতীতের গৌরবদীপ্ত পথে রয়েছে নানা মাইলফলক। এমনি একটি মাইলফলক হিসেবে সিলেটের শতাধিক বর্ষপ্রাচীন সাংবাদিকতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় প্রায় ৫৪ বছর আগে সিলেট প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

সম্প্রতি সিলেট প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠালগ্নকে স্মরনীয় করে রাখতে প্রথম বারের মত পালন করেন সিলেট প্রেসক্লাব ডে। বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা, স্যূভেনির, স্মারক, ক্রোড়পত্র প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে ঝাকজমকের সাথে দিবসটি উদযাপিত হয়।

সকল মত ও পথের মিলনস্থল সিলেট প্রেসক্লাবের এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। যোগ দেন সিলেটে কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনারও। কিন্তু, দুঃখজনক হলো- যেদিন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি হলো, সেদিন রাতেই এক ব্যক্তি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সংবাদটি ‘ব্লাক আউট’ করালেন।

সিলেটের সর্বস্তরের সাংবাদিকের মত বিষয়টি আমাকে দারুণ ব্যথিত করেছে। সিলেট প্রেসক্লাবের মত একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার এই হীন ষড়যন্ত্র যিনি করেছেন, তার নামটি আমি এই লেখায় উল্লেখ করতেও আমার রুচিতে বাধছে।

তবে, বলে নেই তিনি এমন এক ব্যক্তি- যিনি নিজেকে জামাত-বিএনপি ঘরানার লোক বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। অনেকেই তার নামের আগে ‘কালো’ বিশেষণ ব্যবহার করেন। জামায়াত নেতাদের দান খয়রাতে পরিচালিত একটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিজের আখের গুছিয়েছেন। কিন্তু, কখনোই ডানপন্থী সাংবাদিকতাকে ঐ ‘কালো’ ব্যক্তি পৃষ্ঠপোষকতা করেননি। বরং, ডান বাম যারা তাকে ‘নমস্তে’ করেছে সেই সব পদলেহী কথিত বশংবদ সাংবাদিকদের তিনি পৃষ্ঠপোষতা দিয়েছেন-প্রেসক্লাবের পদে বসিয়েছে অর্ধ ডজন বার সভাপতি হয়েছেন। অবশেষে, আমাদের মত বেয়াড়া কিছু সংবাদকর্মীর প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মুখে ধীওে ধীরে তার সাম্রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে। কোনটাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

কিন্তু, সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে সেই কালো ব্যক্তি আবারো সেই জামায়াতি পত্রিকায় পুনর্বাসিত হয়েছেন। আর স্বপদে ফিরেই তিনি আবার স্বমহিমায় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। নিজের পত্রিকার নিবেদিতপ্রাণ ৫/৬ জন প্রতিষ্ঠিত সংবাদকর্মীকে পত্রিকা ছাড়তে বাধ্যও করেছেন বলে খবর পেয়েছি।
এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। আবারো ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন সিলেট প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে। সিলেট প্রেসক্লাব ডে-এর সংবাদ ব্ল্যাক আউট করানোর চেষ্টাটি ছিল তার সগৌরবে ফিরে আসার একটি অপচেষ্টা মাত্র। সিলেটের বহুল প্রচারিত দৈনিক সিলেটের ডাকসহ ৩টি পত্রিকায় সেদিনের অনুষ্ঠানের সংবাদটি যাতে ছাপা না, সেজন্য হেন কোন অপচেষ্টা নেই তিনি করেননি। অবশ্য, সিলেটবাসীর মুখপত্র দৈনিক সিলেটের ডাক কর্তৃপক্ষ পরদিন তার এই ষড়যন্ত্রটি বুঝতে পারেন। ফলে, প্রথম পৃষ্টায় যথাযথ গুরুত্ব সহকারে একদিন পর প্রেসক্লাব ডে উদযাপনের খবরটি প্রকাশিত হয়। ভেস্তে যায়, সেই কালোর ‘কালো ষড়যন্ত্র’।

এই এক ব্যক্তির এক গুয়েমির কারণে অতীতে সিলেটের সাংবাদিকতায় বিভাজনের চিড় ধরে। পাকিস্তান ঘুরে আসা এক সাংবাদিকের লবিংয়ের কারণে এই ব্যক্তি সিলেট প্রেসক্লাবে পাকিস্তান দূতাবাসের অনুদান নিয়ে এসেছিলেন। পাকিস্তান ঘুরে আসা সেই সাংবাদিকের প্রচেষ্ঠাতেই পাকিস্তানী অর্থায়নে সিলেট প্রেসক্লাবে স্থাপন করা হয় কম্পিউটার কক্ষ। সিলেট প্রেসক্লাবের তৎকালীন কিছু সদস্য এর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু, তা সত্বেও দান গৃহিত হয়ে যাওয়ায় কম্পিউটার ল্যাবটি বহাল থাকে।

পরবর্তীতে বিভক্তির চির-ফাটা আরো প্রসারিত হয়। কিন্তু, কালো মনের সেই মানুষটির পৃষ্ঠপোষকতাতে পাকিস্তান ঘুওে আসা সেই সাংবাদিক বড় পদেও বিজয়ী হন। পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের এই সব অতি উৎসাহী আচরণের কারনে সিলেটের শতবর্ষের সাংবাদিকতার স্মারক প্রতিষ্ঠান সিলেট প্রেসক্লাবে ‘পাকিস্তানপন্থী’র তকমা লাগানোর অপচেষ্টা চলেছিল- আজো চলেছে।

কিন্তু, এই তকমা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল সিলেট প্রেসক্লাব। একজন ক্ষুদ্র গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমি মনে করি- সিলেটের সাংবাদিকদের নীতি হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মত- Friendship to all, malice to none- সবার সাথে বন্ধুত্ব- কারো সাথে শত্রুতা নয়। এ কারণে, সিলেট প্রেসক্লাব ডে-এর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সিলেটে কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তিকে।

কিন্তু, ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি সেই কালো মনের মানুষ আর তার দোষর পাকিস্তানপন্থীরা। ফলে, গভীর রাতে কৌশলে ভারতীয় ডেপুটি হ্ইা কমিশনারের সংবাদটি ব্ল্যাক আউট করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল তারা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। জয় হয়েছে সাংবাদিকতার- জয় হয়েছে নিরপেক্ষতার- জয় হয়েছে বন্ধুত্বের।

ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। নানা বৈষম্য থাকলেও ভারতের সাথে আমরা দুষমনী চাই না। কারণ, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব না রাখলে শান্তি ও শৃংখলা বজায় থাকেনা। ফলে, ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে উদ্যোগ সিলেট প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন, সেজন্য তারা প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু, এক ব্যক্তির হটকারী কার্যক্রমের কারণে যে ক্ষতি হয়ে যাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই দায়ভার ঐ ব্যক্তি এড়াতে পারেনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার কর্মকান্ড সিলেট প্রেসক্লাব ও সিলেটের সাংবাদিকতার স্বার্থ পরিপন্থী। সিলেটের তথা বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী। আর তাই এই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ‘পালের গোদা’ কালো মনের কালো মানুষটির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.