Sylhet View 24 PRINT

নরবলি/কল্লাকাটা: মিথ না বাস্তবতা

পর্ব-১

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-২২ ১১:৩৩:০২

আব্দুল হাই আল-হাদী :: মোহাম্মদ আব্দুল হাই রচিত ‘সিলেটের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে- ‘জৈন্তেশ্বরী বাড়ি’ । সে বাড়ির মধ্যে ‘নরবলির পাটাতন’ নামে একটি স্থাপনা আছে যেটির প্রত্নতাত্বিক বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক প্রসঙ্গক্রমে ‘নরবলি’ প্রথা সম্পকে খানিকটা আলোকপাত করেছেন। স্যার এডওয়ার্ড গেইটের বয়ানে সেখানে নরবলি অর্থাৎ দেবতার সামনে কিভাবে মানুষকে বলি দেওয়া হত- সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেটির চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হল: ‘আশ্বিন মাসের (শুক্ল পক্ষে) সান্ধি ডে (সম্ভবত: শনিবারে) ফালজুর পরগনার পবিত্র ‘পীঠ’ ও নিজপাটের পবিত্র ‘জৈন্তেশ্বরী মন্দিরে’ বিভিন্ন উপলক্ষে নরবলি দেওয়া হতো।

কোচ বিহারের Haft Iqlim এর মতো এখানেও ভিকটিম ব্যক্তিটি স্বত:স্ফূর্তভাবে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতো আত্ববলির জন্য। শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে সাধারণভাবে আত্ববলিদানে আগ্রহীরা রাজার সামনে আসতো এবং ঘোষণা করতো যে, দেবী তাদের ডেকেছেন। তাদের নিয়ত বা সদিচ্ছার যথাযথ তদন্ত করা হতো এবং এতে যদি সে ব্যক্তি অর্থাৎ ভিকটিম বা ‘ভোগ-খাওরা’ উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতো তবে রাজা তাকে প্রথমে সোনার নুপুর উপহার দিতেন। সে যেভাবে ইচ্ছা মনের মতো করে বসবাসের সুযোগ পেত এবং সে সন্তুষ্ট হয় এমন যেকোন কিছুই করার জন্য তাকে অনুমতি প্রদান করা হয়। জীবনে তাঁর দ্বারা সংঘটিত যেকোন ক্ষতিপুরণ রাজকীয় কোষাগার হতে প্রদান করা হত। কিন্তু এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগের সময় হতো খুবই কম। দুর্গাপূজার নবমী দিনে গোসল ও পবিত্রতার পর ‘ভোগ-খাওরা’ কে নতুন সুন্দর পোশাক পরিধান করানো হয়। লাল চন্দন কাঠ ও সিন্দুর এবং মালা দিয়ে সজ্জিত করা হতো। এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর, সে ব্যক্তি অর্থাৎ শিকার ব্যক্তিকে দেবীর সামনে একটি উচুঁ মঞ্চের উপর বসানো হতো ।এরপর সে কিছু সময় ধ্যান (জপ) এবং মন্ত্র উচ্চারণের জন্য ব্যয় করতো। সর্বশেষ সে হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটি বিশেষ চিহ্ন তৈরি করতো এবং জল্লাদ বলির স্বাভাবিক মন্ত্র উচ্চারণের পর তার মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হতো। এরপর মাথাকে দেবীর সামনে সোনার থালায় রাখা হতো। এরপর তার ফুসফুস রান্না করা হতো এবং উপস্থিত ‘খান্দ্র-যোগীদের’ দ্বারা খাওয়া হতো ।বলা হয় যে, রাজকীয় পরিবার মৃতের রক্ত দিয়ে রান্না করা ভাত খাওয়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতো। অনুষ্ঠানটি বিশাল জনতার দর্শকরা দেখতে পেত যারা রাজ্যের সব পরগণা থেকে অংশগ্রহন করতো।

কখনও কখনও স্বেচ্ছা আত্মবলিদানের লোকের অভাব দেখা দিত। কিংবা প্রতিশ্রুত বিশেষ বলি যেমন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম ও বিপদ থেকে আসান ইত্যাদির জন্য হঠাৎ লোকের প্রয়োজন হত। সে রকম অনুষ্ঠানের জন্য, তখন ‘ছেলেধরা’ বা ‘গলাকাটরা’ নিয়োগ করা হতো যারা রাজ্যের বাইরে থেকে লোক ধরে নিয়ে আসতো।’

দেবীর উদ্দেশে মানুষকে বলি দেওয়ার এ দাবির প্রায় শতাধিক বছর পেরিয়ে গেছে। সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন কিংবা কেউ খারিজ করতে পেরেছেন বলে জানা নেই। মানুষকে বলি দেওয়ার পাটাতনটি আজও কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে। তবে কী নরবলি মিথ, না এক কঠিন বাস্তবতা??

লেখক : প্রধান নির্বাহী, সেভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.