আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিগারেট-মদে আপত্তি নেই, সব দোষ কাচা ঘাস খাওয়া গাভীর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-৩১ ২১:৩০:০৮



:: শাকিল জামান ::


এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একটি ভয়াবহ ব্যাপার! বিষয়টা এমন না যে, দুধ নিয়ে ষড়যন্ত্রে প্রতিবাদ করছি বলে আমরা চাই, সবার এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাক। যদি এমন হয়ে যায় তবে সাধারণ সর্দি-কাশিতেও মানুষ মারা যেতে পারে, কোনো ঔষধ ই কাজে লাগবে না। এখন, আমাদের আগে জানতে হবে কীভাবে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়?

সবচেয়ে প্রধান যে কারণ সেটা হচ্ছে- আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজের ক্ষেত্রে ডাক্তার হয়ে যাই। ইচ্ছেমত এন্টিবায়োটিক সেবন করি। আর যদিও বা ডাক্তারের পরামর্শ নেই, তাও ডোজ পূর্ণ করি না।

একটা রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার ৭ দিনের এন্টিবায়োটিকের কোর্স দিলো। ৩ দিনে ভালো হয়ে গেলাম। ব্যস! বাকি ৪ দিনের ঔষধ ঘরেই নষ্ট হয়। আমরা কি ভেবেছি এর ফলে কি হয়?

মনে করি, আপনার শরীরে কোনো এক জাতের দুই কোটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের ফলে একটা সমস্যা হলো। এজন্য ডায়াগনসিস করে ডাক্তার এক সপ্তাহের কোর্স দিলো। এক সপ্তাহ কোর্স কমপ্লিট করলে আপনার দুই কোটি ব্যাকটেরিয়া মারা যেতো। আপনি ৫ দিন ঔষধ সেবন করে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন আর ঔষধ খেলেন না। সুস্থ তো হলেন কিন্তু আপনার দুই কোটি ব্যাকটেরিয়া কিন্তু মারা গেলো না। দশ হাজার কিংবা ৫ হাজার ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে বেঁচে গেলো।

এরপরে আপনি আবার আক্রান্ত হলে এই এন্টিবায়োটিকে কাজ করবে না। কারন আপনার শরীরে সার্ভাইব করা ব্যাকটেরিয়া গুলো এই ঔষধ থেকে বেঁচে থাকার উপায় বের করে ফেলেছে। আর ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি হয় সেকেন্ডে সেকেন্ডে...

তাহলে বুঝতেই পারছেন, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর জন্য আমরাই দায়ী সবার আগে। তাছাড়া, আমাদের ফার্মেসী চালায় একজন ফার্মাসিস্ট আর বাকি সবাই সেলসম্যান। তারা একেকজন বিরাট বিরাট ডাক্তার। মাঝেমধ্যে নিজেরাই ট্রিটমেন্ট দেয়। আর প্রায়শই ডাক্তারের দেয়া মেডিসিন ফার্মেসিতে না থাকলে নিজেরাই ঔষধ বদলিয়ে দিয়ে দেয়। আমাদের অসচেতনতার জন্য আমাদের বাতাসে সীসা, আমাদের পানিতে এন্টিবায়োটিক। এসব তো আমরা খাচ্ছি।

এখন, গরুর দুধেও এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে। এটা অবশ্যই এলার্মিং, তবে সেটা দুধ বন্ধ করে দেওয়ার মত না। এটা এখনো সহনীয় মাত্রার নিচে। মানুষের বডিতে ক্ষতি করার পর্যায়ে এখনো যায় নাই। কিন্তু আমাদের বাতাস, আমাদের পানি, আমাদের নিজেদের অসতর্কভাবে এন্টিবায়োটিক সেবন এসব কিন্তু অলরেডি ক্ষতিকর পর্যায়ে চলে গেছে।

আমাদের খামারিদেরকে আরেকটু সচেতন হতে হবে। ম্যাক্সিমাম খামারিরাই এখন বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি রেডি ফিড খাওয়ানো বন্ধ করে দিছে। খামারিরা ভূট্টা, ভূষি, সয়াবিন, রাইস পলিস, বিভিন্ন ধরণের ডালের ভূষি দিয়ে নিজেরা গরুর খাবার তৈরি করে। তাছাড়া, গরুতে ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেক সচেতনতা অবলম্বন করা হয়। প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে, ঐ এন্টিবায়োটিকের উয়িথড্রয়্যাল পিরিয়ড পর্যন্ত তার দুধ খামারের গরুর বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়, মানুষের খাওয়ার জন্য বিক্রয় করা হয় না।

যখন খামারিরা সচেতন হচ্ছে, শিক্ষিত শ্রেণি এই পেশায় আসছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি হাইজেনিক উপায়ে খামার পরিচালনা ও দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তখন, দুধ নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে- এন্টিবায়োটিক (তাও সহনীয় মাত্রার এবং খাওয়ার উপযোগী) পাওয়া যাচ্ছে বড় বড় কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে। এইসব কোম্পানি কিন্তু যে পরিমাণ দুধ খামারিদের থেকে কিনে তার থেকে দশ/বিশ গুন বেশি দুধ বাজারে সরবরাহ করে। কিন্তু কীভাবে? ঐ যে গুড়োদুধ?

এখন তরল দুধের সাথে যদি গুড়োদুধ থেকে তৈরী দুধ মিশিয়ে কোনো কোম্পানি বাজারে দুধ নিয়ে আসে এবং সেই দুধে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। তবে এর দায় কিন্তু খামারিদের না।

তরল দুধের বিরুদ্ধে লেখালেখি না করে গুড়োদুধ আমদানি কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা নিয়ে লেখালেখি করা দরকার। তবেই দুধে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাবে না এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকেও বাঁচা যাবে। পাশাপাশি নিজেরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া দরকার। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।

আর বেশি বললে হয়তো ডাক্তারদের ওপরে যাবে। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি এখন ডাক্তারদেরকে ঔষধ প্রেসক্রাইব করার টার্গেট এমনভাবে দেয়, যেভাবে বীমা কোম্পানি তার এমপ্লয়ীদের টার্গেট সেট করে দেয়। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতে না হতেই ঔষধ কোম্পানির এসআর রা প্রেসক্রিপশন টেনে নেয়, ছবি তুলে। এসব কিসের আলামত! এসব নিয়ে আমরা কথা বলি না কেনো??

কি এক আজব প্রাণি আমাদের দেশের মানুষ। সরাসরি বিষ খেতে রাজি; অথচ দুধ খেলে মরে যাবে এই ভয়ে আতংকিত!

লেখক :: সমাজকর্মী

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন