Sylhet View 24 PRINT

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-০৬ ১১:৫১:১৪

সুজাত মনসুর :: ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগষ্ট শহীদদের স্মরণে গত ৩রা আগষ্ট লন্ডনে এক বিরাট শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেই শোকসভায় আমন্ত্রিত বিলেতের দু'জন সাংবাদিক জনমত সম্পাদক জনাব নবাব উদ্দিন ও লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশাকে ঢুকতে না দেয়াকে কেন্দ্র করে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বিলেতের কোন মিডিয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সংবাদ প্রকাশ করবে না। এলবি টিভিতে প্রচারিত সংবাদে জানতে পারলাম তারা এই মর্মেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এ সপ্তাহে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় এক কলাম খালি রাখবেন প্রতিবাদস্বরূপ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত তারা নিতেই পারেন, এটা তাদের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমার নিকট মনে হয়েছে বিষয়টি অনেকটা বাড়াবাড়ি, অযৌক্তিক ও কিছু অতিউৎসাহী মানুষের মনোবাসনা পুরণ। কেন এরকম মনে হয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করার আগে কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে এবং এ জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কতটুকু দায়ী সে ব্যাপারে আমার মতামত ও তথ্যগুলো পাঠকের বিবেচনার জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রতিবারের মতো এবারো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বিলেতের সাংবাদিকদের একটা তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু নামের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়ে দেয়। যতটুকু জানতে পেরেছি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নাকি আগেরদিন রাতে সংশ্লিষ্টদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে অনুরোধ করা হয় শোকসভাতে না আসতে। কিন্তু জনাব নবাব উদ্দিন ও সৈয়দ নাহাস পাশার বক্তব্য অনুযায়ী উনাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়নি। যদি জানতেন তাহলে তারা হলে গিয়ে অপমানিত হতেন না। তাই সতীর্থদের অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে এজন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগই দায়ী।

কেন এটি হলো? প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রণ করে না। জানা যায়, সাম্প্রতিককালে যুক্তরাজ্য কেন্দ্রিক কিছু কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রীর বিলেত সফরের সময় নিরাপত্তার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ আরো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করার সিদ্ধান্তের আলোকে বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে, কয়েকজন সাংবাদিককে কালো তালিকাভুক্ত করে। কেন করেছে তা একমাত্র ওরাই বলতে পারবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কিছুই করার নেই। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যারা বা যিনি এই দু'জন সিনিয়র সাংবাদিককে জানানোর দায়িত্বে ছিলেন তারা কেন জানাননি বা জানাতে পারেননি সে ব্যাখ্যাটি তারাই দিতে পারবেন। সেজন্য গোটা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে বিষয়টি সুরাহা করার সুযোগ না দিয়েই একেবারেই নিষিদ্ধ করে ফেলতে হবে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে, এমন কেমন আবদার?

আগেই উল্লেখ করেছি লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের এধরণের সিদ্ধান্ত অনেকটাই বাড়াবাড়ি। এ সিদ্ধান্ত নেবার আগে ভাবা উচিত ছিল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কোন ভূঁইফোড় সংগঠন নয়। সমগ্র বিলেতব্যাপি সংগঠনটি ব্যাপক বিস্তৃত। রয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী, যারা বিলেতের বাংলা মিডিয়াকে গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে পৃষ্ঠপোষকতা করে এতদুর নিয়ে এসেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ একজন মিডিয়া বান্ধব ব্যক্তিত্ব। সাপ্তাহিক জনমত-এর জন্ম লগ্নে উনি ও অধ্যাপক আবুল হাশেম সাহেবরা পায়ে হেঁটে, গাড়িতে করে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে জনমত দিয়ে আসতেন। অন্য পত্রিকার খবর জানিনা, তবে জনমতের নিয়মিত গ্রাহকদের শতকরা আশি জনই আওয়ামী লীগ ঘরানার। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনগুলোর সংবাদ ব্যতিত কমিউনিট পাতা পুর্ণ করবেন কি দিয়ে? চ্যানেলগুলো কমিউনিটি সংবাদ বা টকশোগুলো জমাবেন কি করে? এখন উল্টো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা যদি মিডিয়া বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কেমন হবে? যদিও সেরকম হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা, আগেই উল্লেখ করেছি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যিনি অভিভাবক তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা মিডিয়া বান্ধব।

যে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে কিছু যৌক্তিক ধাপ পেরিয়ে আসলে তা সুবিবেচিত বলে ধরে নেয়া যায়। দু'জন সিনিয়র সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং কালো তালিকাভুক্তির বিষয়টি পুর্বাহ্নে না জানানোর অপরাধে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একতরফা চূড়ান্ত রায় দেয়া কোন অবস্থায়ই যৌক্তিক ও সুবিবেচিত নয়। এই সিদ্ধান্ত নেবার আগে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে ব্যাখ্যা দাবি করা যেতো। এছাড়া আমাদের তো বিচারের একটা জায়গা রয়েছে, সুলতান মাহমুদ শরীফ। উনার নিকটও নালিশ জানানো যেতো। দলগতভাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কিংবা সুলতান ভাইয়ের নিকট প্রতিকার চাইতে পারতেন। তারপর যদি কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা বা সমাধান না পাওয়া যেতো তাহলে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক ও সুবিবেচনাসুলভ হতো।

দেশে বিদেশে সিংহভাগ মিডিয়াই আওয়ামী লীগ বান্ধব নয়। তার একটা মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে। আওয়ামী লীগ হলো সাধারণ মানুষের দল। আর মিডিয়া কর্মীরা হলেন সুশীল প্রজাতির। সুশীল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে শ্রেনীগত ফারাক সে কারনেই এই মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ। এছাড়া আদর্শিক বিষয় তো আছেই। একথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই যে, যুক্তরাজ্যের সিংহভাগ মিডিয়া ও মিডিয়াকর্মী আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করেন। এখানেও মিডিয়া কর্মীরা দুটি শিবিরে বিভক্ত। যার প্রতিফলন ঘটে প্রেসক্লাবের নির্বাচনগুলোতে। অন্তত গত দুটি নির্বাচনে একটা পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে বাজিমাত করতে চেযেছেন। এখন দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবিদার তাদের অনেকেই কালো তালিকাভুক্ত। এত তড়িঘড়ি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার পেছনে আওয়ামী লীগ বিদ্ধেষী গোষ্ঠীর এই সুযোগে আওয়ামী লীগকে একহাত দেখে নেয়ার মানসিকতাই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের আল্টিমেটাম অনুযায়ী ক্ষমা চাইবে কি না তাদের বিবেচনার বিষয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চাইতে খুব সহজে পাঠক ও শ্রোতাদের নিকট দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাবার মাধ্যম হলো ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব, অনলাইন পোর্টাল কত কি। সুতরাং কারো অযৌক্তিক আবদারের নিকট নতিস্বীকারের কোন কারন আছে বলে মনে করিনা।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.