আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাঙালের দেশে দুবাই পুলিশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১১ ২১:৩৬:০৭

ফাহাদ মোহাম্মদ :: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ চান এই দেশের পুলিশ যেনো দুবাই পুলিশের মতো প্রফেশনাল হয়। যেনো দুবাই পুলিশের মতো সেবা দেয়। কিন্তু দেশের একটা মানুষও দুবাইয়ের জনগনের মতো হতে চায় না। সে এক আজব কাজ কারবার। অনেকটা নিজে লম্পট হয়ে সতি নারী কামনার মতো। আমি শালা বহুগামী কিন্তু আমার বউ যেনো পরহেজগার হয়। এটা মানতে নারাজ যে যেই দেশের সমাজ ব্যবস্থা যেমন সেই দেশের পুলিশ ও তেমন।

যে সমাজের অধিকাংশ লোক অসৎ সেই সমাজের পুলিশ শতভাগ সৎ হবে কিভাবে? পুলিশতো এই সমাজেরই একটা অংশ। জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত আমি যা কিছু শিখেছি ধারণ করেছে তা এই সমাজ থেকে। এখন আমাকে ছয় মাস আর এক বছরের ট্রেনিং দিয়ে কি এমন পরিবর্তন করতে পারবে? ট্রেনিং থেকে ফিরে আমি আবার আমার মতো হয়ে যাবো। কারন এই সমাজের মানুষের সাথে আমাকে প্রতিনিয়ত মিশতে হয়। তাদের সাথে উঠাবসা করতে হয়। সুতরাং সমাজের মানুষের যে চরিত্র সেই চরিত্রের চাপ আমার উপর পরতে বাধ্য।

দুর্নীতি আর অপকর্মের কথা অনেক লেখায় বলা হয়েছে। পুলিশ ঘুষ খায় সেটাও সার্বজন স্বীকৃত। এখন আসেন পুলিশের কিছু কাজের পোস্টমর্টেম করা যাক। আমি সেটা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বলতে চাই। শহরের রাস্তায় যাতে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারে, সে জন্যই সরকার আমাকে পুলিশের সার্জেন্ট হিসেব নিয়োগ দেয় এবং আমাকে মোটা অংকের টাকা বেতন ভাতা দেয়। এই যে রাষ্ট্র আমার পেছনে এতো এতো টাকা ঢালতেছে তার বিনিময়ে আমি রাষ্ট্রকে কি দিতে পাড়ছি। আমার উপর অর্পিত দায়িত্বটা আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না নানা রকম প্রতিকূল সমস্যার কারণে।

গত এক সপ্তাহ আমার ডিউটি ছিল আম্বরখানা পয়েন্টে। যে পয়েন্টকে ট্রাফিক বিভাগের অনেকের আজাবখানা বলে থাকেন৷ এই পয়েন্টে এক সপ্তাহ ডিউটি করলে নিজেকে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে আর ভাবা যায় না৷ অপরিকল্পিত এই চৌরাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যে কতটা দূরুহ কাজ সেটা কেবল এসএমপি ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত মাঠপর্যায়ের সদস্যরাই জানে। এই পয়েন্টে সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, রাস্তা ফুটপাত দখল করা হকার, আর বিশৃঙ্খল পথচারী, মোটরসাইকেল চালক সব মিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থা। আপনি মোরে মোরে দাঁড়ানো সিএনজি তাড়িয়ে দিবেন সেই স্থান দখল করবে রিকশা, রিকশা তাড়িয়ে দিবেন বসবে হকার, হকার সরিয়ে রাস্তা ফাঁকা করবেন সেখানে এসে দাঁড়াবে পথচারী। রাস্তা অর্ধেক খুড়ে ফেলে রেখেছে পিডিবি। এই পয়েন্টে মাসখানেক ডিউটি করলে মানবিক গুণাবলি তলানিতে এসে ঠেকবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

ধরেন আপনি আম্বরখানা পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখলেন ট্রাফিক পুলিশ রিকশা তাড়িয়ে দিতে কারো চাকার হাওয়া ছাড়ছে, কারো রিকশায় লাঠি দিয়ে আঘাত করছে৷ আপনি মোবাইল বেড় করে ভিডিও করে ফেসবুকে প্রসব করলেন এই বলে,"পুলিশ কতটা অমানুষ হলে গরীব রিকশাওয়ালার ক্ষতি করছে।" ব্যাস আপনার পোস্ট পাবলিক ভাইরাল করে দিলো। কিন্তু রিকশার চাকার এই হাওয়া ছাড়ার পেছনের গল্প আপনি জানলেন না। আবার অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করা হকারদের বারবার তাড়াতে গিয়ে যখন হকারের বাটকারা কেড়ে নিচ্ছে, জিনিসপত্র ফেলে দিচ্ছে তার ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে বললেন, "আহা, গরীবের পেটে লাথি।" কিন্তু লাথি দেওয়ার আগে যে হাজার বার হকারকে চলে যেতে বলা হয়েছে সেই গল্প আপনার অজানাই থেকে যায়৷ আবার সেই আপনিই পুলিশের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে বলেন, শালার পুলিশ। হা করে দাঁড়িয়ে আছে। রিকশা আর হকারের জন্য চলাচল করা যায়না। আবার সেই একই পাবলিক আপনাকে অনুরোধ করবে যেনো গরীবের পেটে লাথি না মারেন।

আইন প্রয়োগ করতে গেলে বাংলাদেশ পুলিশকে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। গরীব হকার, হতদরিদ্র রিকশা ওয়ালা, দিনমজুর সিএনজি চালক, দিশেহারা মোটরসাইকেল চালক, বিশৃঙ্খল পথচারী সবাইকে এক সাথে সামাল দিতে হয়৷ তার পর যদু মদু কদু টাইপের হুটার লাগানো ভি আই পি তো আছেই। সবার কথা মাথায় রেখে সবাইকে খুশি করেই আইন প্রয়োগ করতে হয়। আরো হাজারটা সমস্যার কথা উল্লেখ নাই করলাম। আমি একজন পাবলিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে উল্টো এসে মোটরসাইকেল গুলো যানজট সৃষ্টি করছে আপনি হলে কি করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, " বউরা বাঁশের আইক্কা ওয়ালা সিংলা দিয়া টাস টাস করে পুটকিত বারি দিতাম।" ইউনিফর্ম গায়ে দিয়েতো আর পাবলিক পেটানো যায় না। তাই উনার দেওয়া সমাধানের পথে হাটা সম্ভব না। আবার এক সাথে এতো গুলো মানুষ আইন অমান্য করে যে সবাইকে আইনের আওতায় আনার লজিস্টিক সাপোর্ট ও পাওয়া যায় না।

এখন আসেন দুবাই পুলিশের কথা। দুবাই পুলিশ কিভাবে কাজ করে তাদের সড়কের অবস্থা কেমন, তাদের নাগরিকদের স্বভাব চরিত্র কেমন, তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সব কিছুর খোঁজ খবর নিবেন। তার পর বলবেন বাঙালের দেশে দুবাইয়ের পুলিশ কিভাবে আশা করেন।

লেখক: সার্জেন্ট, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন