আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ব্রেক্সিট!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৫ ১৯:২০:২৪

আবু মকসুদ :: বৃটেন ব্রেক্সিট নিয়ে গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছে, না গিলতে পারছে না পারছে উগলাতে। তিন বছর চলে গেছে তবু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন ঘটনার জন্ম হচ্ছে। ব্রেক্সিট এ পর্যন্ত দুজন প্রধানমন্ত্রী খেয়ে ফেলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই প্রধানমন্ত্রীও অচিরেই ব্রেক্সিটের বলি হয়ে যাবেন।

ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে আমরা সিরিয়াল দেখি আজগুবি সব কান্ডকারখানা, পাকা ঝকঝকে সড়ক নিমিষেই নদী বনে যায়। আবার স্নিগ্ধ শুভ্র নীল আকাশ একমুহূর্ত পরে নরকের দরজা বনে যায়। এসব সিরিয়ালগুলো এতো আজগুবি যে নিজের চিন্তা শক্তি মার খেয়ে যায়। পিতা যে মেয়েকে বিয়ে করেছে, ছেলে সেই মেয়ের ছোট বোনকে অর্থাৎ খালাকে বিয়ে করে ফেলে; ছেলে বাবা হিসাবে যাকে এতোদিন জেনে এসেছে আদতে সে তার দুলাভাই! এরকম আজগুবি ঘটনায় হিন্দি টিভি সিরিয়াল ভরপুর। আমি ভাবতাব আজগুবি ঘটনা শুধু টিভি বা সিনেমার পর্দায় হয় কিন্তু বৃটেনের বর্তমান সংসদ হিন্দি টিভি সিরিয়ালের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। যেকোন মানুষ যদি বিবিসি, স্কাই বা অন্য নিউজ চ্যানেলে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সরাসরি দেখে সে বিভ্রান্ত হয়ে যাবে নাটক দেখছে না অন্য কিছু। আজ যে দেশের প্রধানমন্ত্রী কাল সে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে সুবোধ বালকের মতো বসে থাকে। যে ছিল সবচেয়ে সুশীল বালক সেই কুশীল হিসাবে আবির্ভূত হয়।

একসময় রাজনীতিমনস্ক মানুষ বৃটেনের পার্লামেন্টকে ভালোভাবেই ফলো করতো, শিক্ষণীয় অনেক কিছু তাদের কাছ থেকে আহরণ করত। বৃটেনের পার্লামেন্ট বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছিল, দেশে দেশে গণতন্ত্রহীনতার সময়ে বৃটেনের পার্লামেন্টের দেখে তারা স্বস্তি পেত। কিন্তু এই বৃটেনের পার্লামেন্টেই এখন মানুষের হাসির খোরাক হচ্ছে। হিন্দি সিরিয়ালের মেজ ভাবী যেভাবে শশুরের সাথে পরকীয়ায় মাতে, বৃটেনের পার্লামেন্টের সদস্যরাও সেভাবে অস্বাভাবিক  সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে।

বৃটেন দ্বিধাগ্রস্ত দেশের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। অস্থিরমতি শিশু যেভাবে কারণে অকারণে লাফিয়ে বেড়ায়, একদণ্ড স্থিরভাবে বসে না ঠিক তেমনি বৃটেনের সংসদের এমপিরা একমুহূর্তের জন্য স্বস্তি পাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে যদি সংসদে দু’দণ্ড বসার সুযোগ পায়, পর মুহূর্তে দৌড় লাগাচ্ছে লবিতে ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। প্রতি ঘন্টায় পর্দা নামছে নতুন পর্দা উঠছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। ব্রেক্সিট চরকির মতো ঘুরছে, ঘুরছেই!

গণভোট যখন হয় ২০১৬ সালে তখনই বুঝা গিয়েছিল এ ইস্যু বিতর্কিত হবে কিন্তু বিতর্ক কোন পর্যায়ে যাবে এ নিয়ে কোন ধারণা ছিল না। বৃটেনের সাধারণ মানুষ যদি জানত ব্রেক্সিট তাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসবে তাহলে নিশ্চয়ই আরো চিন্তা ভাবনা করে ভোট দিত। ভবিষ্যৎ জানতে পারলে ব্রেক্সিট ঘটতো না, এই ঝামেলায় মানুষ অতিষ্ঠ, যেকোনভাবে সমস্যা মিটে গেলে মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচবে।

ডেভিড ক্যামেরুন সফল প্রধানমন্ত্রী ছিল। স্মরণকালের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে দেশকে পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টায় ছিল, তার প্রচেষ্টা প্রায় সফল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নিজের দলের কিছু মানুষ তার কাজে সন্তুষ্ট ছিল না, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা ইসির সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা অনেকেই পছন্দ করছিল না। ডেভিড ক্যামেরুন নিজেও ইসিকে খুব একটা পছন্দ করত না তবুও অর্থনৈতিক কারণে ইসির সাথে একটা ভালো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন মনে করতো। নিজের দলের ইসি বিরোধী সদস্যরা এমন অবস্থা করেছিল যে তাকে হয় ইসি না হয় প্রধানমন্ত্রীত্ব দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে হতো। ডেভিড ক্যামেরুন অনেকটা বাধ্য হয়েই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিয়ে গণভোটের কথা বলে ফেলেছিলেন, এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় জুয়া। জুয়ায় হেরে সে তার মন্ত্রীত্ব খুইয়েছে কিন্তু তার বিরুদ্ধে যারা ছিল তারাও জিততে পারেনি। ইসি এমন এক সমস্যা যেখানে কেউই জয়ী হতে পারছে না। গণভোটে প্রায় চার শতাংশের বেশী মানুষ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। অর্থাৎ বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে পড়েছে ৫২% বিপক্ষে ৪৮%। ডেভিড ক্যামেরন গণভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ছিল। ভোটে হেরে যাওয়ায় নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে ডেভিড ক্যামেরুন পদত্যাগ করেছিলো।

ডেভিড ক্যামেরনের উত্তরাধিকারী থেরেসা মে’রও একই সমস্যা, তার দল পুরোপুরি দুই ভাগে বিভক্ত। তবু দেশের মানুষের ভোটের সম্মান জানাতে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া তাকেই শুরু করতে হয়, শুরু করতে গিয়ে দেখা গেল সংসদে তার প্রয়োজনীয় সমর্থন নাই কোন আইন বা ইসির সাথে কোন সমঝোতা চুক্তি পাস করানোর। ক্ষমতা পাওয়ার পরে প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীরই জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়ে যায় থেরেসা মে’রও বেড়েছিল। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য থেরেসা মে হঠাৎ করে নির্বাচন ডেকে বসলো, ভাবলো জনপ্রিয়তা কাজে লাগয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক এমপি জুটিয়ে নিতে পারবে। মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক, থেরেসা মে’র পাতালে নামতে সময় লাগলো না, ডেভিড ক্যামেরুনের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল থেরেসা মে’র নির্বাচনে তাও অনেক কমে গেল। যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি চূর্ণ হয়ে গেল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেরেসা মে'র মাথার উপরে গ্রহণের মত ঝুলতে থাকলো। অনেক চেষ্টার পরেও কোন কিনারায় পৌঁছাতে পারল না, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে মন্ত্রী বানিয়েও কোন সুরাহা হলো না। বরিস জনসন দুই দুইবার থেরেসা মে'র বিপক্ষে ভোট দিলেন। বাধ্য হয়ে থেরেসা মে’কেও সরে যেতে হল।

বরিস জনসন আজন্ম ইসি বিরোধী, তার ধারণা ইসি ধীরে ধীরে বৃটেনকে গ্রাস করে ফেলবে। এই ভয়ে থেকেই সে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের থাকতে চায় না। প্রায় ৫০ বছরের একটা সম্পর্ক হঠাৎ করে ত্যাগ করা যায় না, এটা বরিস জনসন বুঝতে না পারলেও তার দলের অধিকাংশ মানুষ ভালভাবেই বুঝতে পারছে। ডেভিড ক্যামেরন এবং থেরেসা মে’র যে সমস্যা সেই সমস্যা এখন তার ঘাড়ে চেপেছে। তার দলের দ্বিধাবিভক্ত সদস্যদের কারণে সেও কোন কিনারায় পৌঁছাতে পারছে না, এক মাসের প্রধানমন্ত্রীত্বে সংসদের তিন তিনটি ভোটে সে খুব বাজেভাবে হেরে গেছে। এখন সে বুঝতে পারছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা এত সহজ না, আদৌ বের হতে পারবে কিনা এ নিয়ে তার মনেও সন্দেহ বাড়ছে।

যে শোরগোল তুলে বা যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে বরিস জনসন ক্ষমতায় এসেছে, তার সে জোশ চুপসে গেছে। সে বুঝতে পারছে মেওয়া ফল এতো সহজলভ্য নয়। রাজনীতির ময়দানে বরিস জনসন গিরগিটি হিসাবে পরিচিত, অনেকেই তাকে বুলি বয় (bully boy) হিসাবে জানে। নিজেকে উৎপীড়ক এর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে আপাত নিরীহদের উৎপীড়ন করার চেষ্টা সে করেছে, এখনো করে যাচ্ছে। কি কিন্তু তার এসব প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না, নিজের দলের ২১ সদস্যকে সে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে। দলের বা সরকারের বিরুদ্ধে তারা ভোট দিয়েছে এজন্য, বরিস জনসন নিজেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সরকারের বিরুদ্ধে দু-দুবার ভোট দিয়েছে, থেরেসা মে চাইলে তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করতে পারত। কিন্তু ভিন্নমতের সহাবস্থানে বিশ্বাসী বা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সেটা করেনি। থেরেসা মে একজন সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রেমের পরিচয় দিয়েছে, যদিও ব্রেক্সিটের অক্ষমতার দায়ভার নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে তবুও নিজের সম্মান এবং আদর্শ শেষমুহূর্ত পর্যন্ত সমুন্নত রেখেছে।

বরিস জনসন পপুলিস্ট রাজনীতিবিদ, উগ্র জাতীয়তাবাদের পূজারী। দেশে দেশে এখন যেভাবে উগ্রজাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, বরিস জনসন এই সুযোগে নিতে চাচ্ছে। বর্ণবাদ কিংবা ধর্মীয় বিদ্বেষকে পুঁজি করে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাচ্ছে। বহিরাগত অন্য অনেক দেশের মত বৃটেনেরও একটা প্রধান সমস্যা, বৃটেনের সাধারণ মানুষ নিজেদের হুমকির মুখে মনে করছে। তাদের চাকরি বাসস্থান স্কুল কলেজ কিংবা হাসপাতাল বহিরাগত দিয়ে ভরে যাচ্ছে, এমন ভাবনায় তারা ভীত হচ্ছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা বহিরাগত বহিষ্কারে সোচ্চার হচ্ছে, গণভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে অধিকাংশ ভোট পড়ার এটাই মোক্ষম কারণ। মানুষের ভয়কে বরিস জনসনের মতো রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাচ্ছে, যেমন অন্যান্য দেশের বর্ণবাদী ধর্মবিদ্বেষী রাজনীতিবিদরা কাজে লাগাচ্ছে। আমেরিকায় ট্রাম্প ইন্ডিয়ায় মোদি এরকম রাজনীতিবিদদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ, পপুলিস্ট রাজনীতিতে ক্ষণিকের লাভ হয় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি থেকে যায়।

বৃটেনে পপুলিস্ট রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কিন্তু এখনও এমন পর্যায়ে পৌঁছে নি যাতে ভন্ড রাজনীতিবিদরা সুযোগ নিতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবাদ হয়তো কিছু মানুষের মনে আছে তবে বৃটেনের অধিকাংশ মানুষ সহনশীল। তারা মানবতায় বিশ্বাসী মানুষের স্বকীয়তায় বিশ্বাসী ভিন্ন মতে বিশ্বাসী। তারা মেনে নিয়েছে বৃটেন বিভিন্ন বর্ণ ধর্ম এবং জাতির দেশ। হুট করে এটাকে বদলানো যাবেনা বদলানো উচিত না, আখেরে এর ফল ভালো হবে না। শত বছরের উদারনৈতিক ঐতিহ্য রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব না, এমন প্রচেষ্টা যারা করবে তারাই বাতিল হিসেবে গণ্য হবে ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়।

বরিস জনসন এর পাঞ্জায় যতগুলো কার্ড ছিল একে একে খেলে যাচ্ছে তবু কোন এক্কাই কাজে লাগছে না। মরি কিম্বা বাঁচি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ করব, এমন ঘোষণা যে বুমেরাং হবে এমন আলামত দেখা যাচ্ছে। বরিস জনসনকে নিজের ফেলে দেয়া কথা নিজেকেই হজম করতে হবে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন নিয়ে হাজির হতে হবে। তরী পার যত সহজ হবে ভেবেছিল বৈঠা ঠেলতে গিয়ে এখন তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সাঁতার না জানা লোক ভালভাবে বৈঠা খেলতে পারছে না, বিদ্বেষ বা খুব মনে রাখলে পার হওয়া যায়না বরিস জনসন এর উদাহরণ হতে পারে।

রাজনীতির গুটি খেলায় বরিস জনসন নির্বাচন চাচ্ছে, মনে করছে পপুলিস্ট এজেন্ডায় সে জিতে যাবে। বিরোধীদলও কম সেয়ানা নয়, তারা তাকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছাড়বে। সহজে ওয়াক ওভার বরিস জনসন পাবে না। নির্বাচন হয়তো হবে কিন্তু তার আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যে কোনো রকমের সমঝোতায় আসতে হবে।

বৃটেনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আপাতত চুপ আছে, তারাও যে ভীতির মধ্যে নেই এটা বলা যাবে না। বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বৃহৎ পার্টনার ছিল, বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ করলে ইউনিয়ন অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে যাবে। ইসি কোনোভাবেই এটা চাচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত যদি বৃটেন চলে যায় তবু একটা ভালো সম্পর্ক যেন বজায় থাকে ইসি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। অন্যান্য ২৭ টি দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে যতটুকু সম্ভব সুযোগ-সুবিধা বৃটেনকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দিতে চাচ্ছে। বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ভালোগুলো নিতে চাচ্ছে মন্দের সহযোগী হতে চাচ্ছে না। শুধু ভালো সুযোগ-সুবিধা নিবে মন্দের ধারভার নেবে না এরকম কোন চুক্তিতে আসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জন্য অসম্ভব, তাই সমঝোতা চুক্তি হচ্ছে না। থেরেসা মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যে চুক্তি করেছিল এতে বিরোধী দল খুশি না, তারা ইসির সাথে আরো গভীর সম্পর্কে বিশ্বাসী। থেরেসা মের দলের অনেকেই বরিস জনসন সহ ইসির সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে রাজি না তাই ওই চোখ দিয়ে আলোর মুখ দেখেনি এবং থেরেসা মে কে সরে যেতে হয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ব্রেক্সিট হয়ে যাবে, তবে বরিস জনসন এর ব্রেক্সিট হবে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং বৃটেনের একসাথে না থাকলেও সহযোগী হিসাবে থেকে যাবে, বৃটেনের পার্লামেন্ট সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে।

কোন চুক্তি না হলে ৩১ অক্টোবর বৃটেন ইসি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে, যদিও এ সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ মনে হচ্ছে। চুক্তি ছাড়া চলে আসা বৃটেনের জন্য ক্ষতির হবে, দীর্ঘদিনের একটা সংসারে হঠাৎ বিচ্ছেদের ঝড় উঠলে যেভাবে কোনকিছু স্থির থাকে না বৃটেনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। পুনরায় সুস্থির হতে অনেক দিন লেগে যাবে। বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার মধ্যে বৃটেনকে আগে আর পড়তে হয় নি, তাই বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে এগুবে কি করতে হবে। এই লেজেগোবরে অবস্থা সত্বর অন্ত হোক মানুষ আশ্বস্ত হোক, অনিশ্চয়তার যে কালোমেঘ বৃটেনের আকাশ ছেয়ে আছে তা দূরীভূত হোক।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এপর্যন্ত বৃটেনের দুজন প্রধানমন্ত্রী বধ করেছে, আরো দু’তিনজন বধ না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না বলেই মনে হচ্ছে। বৃটেন গণতন্ত্রের দেশ, অতিরিক্ত গণতন্ত্র কেমন হতে পারে এরও উদাহরণ বর্তমান বৃটেন। ব্রেক্সিট বৃটেনকে চেপে ধরেছে, বৃটেন কিভাবে চাপমুক্ত হয় এটা একটা দেখার দৃশ্য হবে বৈকি। আপাতত বৃটেনের পার্লামেন্টে উচ্চচাপ যুক্ত নাটক অভিনীত হতে থাকুক!

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন