আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সহনশীল এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নবাব আলী আব্বাস খান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১০ ১১:১৩:৫০



আব্দুল বাছিত বাচ্চু :: জন্ম বনেদী রাজনৈতিক পরিবারে। দাদার বাবা নবাব আলী আমজাদ খান ছিলেন সিলেটের শীর্ষ জমিদার। আর দাদা আলী হায়দার খান ছিলেন মন্ত্রী। অথচ বাবা আলী সফদর খান (রাজা সাহেব) একজন বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধেই লড়ে গেছেন। আবার চাচা আলী সরোয়ার খান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে কুলাউড়া আসনে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭৩)। অপর চাচা আলী ইয়াওর খান করতেন মুসলিম লীগ । পরে অনেকদিন বিএনপি\'র সভাপতি।

এমন এক রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাস খান সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের মধ্যে ব্যতিক্রম এক ব্যক্তিত্ব । পেশায় মৌলভীবাজার জেলা বারের একজন আইনজীবী। রাজনীতি করছেন কয়েক দশক যাবৎ। প্রয়াত কাজী জাফরের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি)\'র সাথে জড়িত ছিলেন । পরে কাজী জাফরসহ যোগ দেন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। বর্তমানে জাতীয় পার্টি( জাফর)\'র প্রেসিডিয়াম মেম্বার।

অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাস খান কুলাউড়া আসনে এমপি হয়েছেন ৩ বার। ১৯৮৮ সালে হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যদিও একতরফা নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু ৯১ আর ২০০৮ সালে বিপুল ভোটের ব্যবদানে বিজয়ী হয়ে নবাব আব্বাস সে বদনাম উৎরে পৌঁছে গেছেন অন্য উচ্চতায়। নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায় নবাব আলী আব্বাস খান ৪ টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩ জয় আর ১ হার সফলতা ৭৫% । সে বিশ্লেষণে বর্তমান সাংসদ জনাব সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ৪ টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২ জয় ২ হার সফলতা ৫০% এবং সাবেক এমপি এম এম শাহীন ৫ টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২ জয় ৩ হার সফলতা ৪০%।

তারপরও আমার দৃষ্টিতে একদম নির্লোভ নিরহংকার একজন মানুষ নওয়াব আলী আব্বাস খান। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছেন। সব মানুষের সাথে মিশতে জানেন।

২০১০ সালে একবার আমার এলাকার একটি স্কুলের অচলাবস্থা নিরসন ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার মানুষের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়ে উনাকে আমাদের স্কুলে আনতে যাই। কিন্তু মনে মনে ভাবছিলাম উনি কি আসবেন? যেহেতু প্রতিটি নির্বাচনে বিপরীত মেরুতে আমাদের অবস্থান। উনি ডান হলে আমি বাম। এই অবস্থায় যাচ্ছি আর ভাবছি উনি আসলে কি বলেন আর কি ভাবেন। কিন্তু উনার কুলাউড়া অফিসে গিয়ে আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম। উনি প্রস্তাব পেয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই আমন্ত্রণ গ্রহন করলেন। আমি বরং বলেছি, দেখেন এমপি সাহেব আপনি যে তারিখ দিলেন তা কি ঠিক থাকবে? এমপি সাহেব আমার প্রশ্নে অনেকটা হতবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কেনো ঠিক থাকবে না? আমি তা লিখে রাখছি। আমি উনাকে বুঝাতে চাইলাম দেখেন আমিতো নির্বাচনে আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ছিলাম। আপনি আমার আমন্ত্রণে যাচ্ছেন শুনলেই যারা আপনার পক্ষে ছিলো তারা এসে কঠিন বাধা সৃষ্টি করবে- তখন আপনি কি করবেন? উনি হেসে বললেন, এমপি আমি অন্য কেউ না। যান চিন্তা করবেন না। আমি অবশ্যই যাবো।

সেদিন আমি যেসব প্রশ্ন করেছিলাম আর উনি ধৈর্য্য সহকারে একে একে উত্তর দিচ্ছিলেন। জানি না অন্য কেউ হলে তা সম্ভব হতো কি না। আমার বিবেচনায় নওয়াব আলী অব্বাস খান অন্য অনেকের চেয়ে হাজারগুন সহনশীল একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

রাজনীতিতে উনার কাছ থেকে আমাদের শিখার অনেক কিছুই আছে। আমি উনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন আরও সুন্দর ও সফল হোক এই প্রত্যাশা করি।

লেখক- সাংবাদিক ও বর্তমানে হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান, কুলাউড়া।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০সেপ্টেম্বর২০১৯/শাকির

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন