আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
শাকির আহমদ :: প্রথমেই আমি এসভিয়ান বিষয়টি খোলাসা করি। আমরা যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাজ্যুয়েট কমপ্লিট করেছি তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কোড এর সাথে মিলিয়ে ঘোষণা করি আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের গর্বিত ছাত্র। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঢাবিয়ান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সাস্টিয়ান। আমি মনে করি, গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠান। আর এরকম একটি গণমাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেটের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিলেটভিউ২৪ডটকম। আমি এই প্রতিষ্ঠানের একজন গর্বিত সদস্য এবং নিজেকে এসভিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসি।
শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল। এই গণমাধ্যমের সম্পাদক। উনি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, দেশের বহুল প্রচলিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিলেটের ব্যুরো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও উনার হাত ধরে সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় একটি অনলাইন টিভি ‘বাংলাভিউ’ যাত্রা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যা সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিচিতি লাভ করেছে। সর্বোপরি একজন বিচক্ষণ, সাহসী, কাজের প্রতি সম্মান ও সাধনায় মগ্ন পরীশ্রমী সাংবাদিক তিনি। পাশাপাশি একজন দক্ষ গণমাধ্যম সংগঠক। যার হাত ধরে সিলেটের অনেক সাংবাদিকের হাতেখড়ি। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্বের ব্যাপারে কারও সাথে কোন আপোস তিনি করেন না। স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে তিনি সোচ্চার এবং কট্টোর। প্রতিনিধিদের প্রতি উনার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা, ‘ স্বাধীনতা বিরোধী কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ঠ কোন সংবাদ সিলেটভিউ২৪ডটকম এ প্রকাশ হবে না। এমনকি প্রতিনিধিদের সাথে এরকম কিছু সংশ্লিষ্টতার প্রমান পাওয়া গেলে ওই প্রতিনিধির ছবিসহ নিউজ প্রকাশ করে তাকে বহিষ্কার করা হবে।’
সংবাদ জগতে আমার কিছু কথা উল্লেখ করে মূল লেখায় যাচ্ছি। ২০১১ সালে কুলাউড়ার স্থানীয় সাপ্তাহিক হাকালুকি পত্রিকায় আমার লেখালেখি শুরু। আমার প্রথম লেখাই ছিলো একটি জনপদ নিয়ে ফিচার। ওই পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান আমাকে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিছুদিন কাজ করে ২০১২ সালে কুলাউড়ায় কর্মরত সাংবাদিক আজিজুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাক পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করি। এরপর অনেক চড়াই উৎরাই পার করে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছোট ভাই শাফি উদ্দিন আহমদের হাত ধরে ২০১৪ সালে ইংরেজী জাতীয় দৈনিক দি বাংলাদেশ টুডে পত্রিকায় কুলাউড়া প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করি। পাশাপাশি কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু নিজের কর্মক্ষেত্রের বিচরণ যেন চার দেয়ালে আটকে যাচ্ছিলো। নিজের কর্মস্পৃহা, আগ্রহ এবং যোগ্যতার নীরিক্ষা করার মতো গণমাধ্যম শস্যক্ষেত্র হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম।
অবশেষে পেলাম সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ২০১৫ সাল। কুলাউড়ার আরেক উদীয়মান সাংবাদিক (বর্তমানে মানবকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকায় কর্মরত) ছোট ভাই সেলিম আহমদের সাথে নিজের হাহাকার প্রকাশ করছিলাম। সে তার পরিচিত খলিলুর রহমন স্টালিন ও ইমরান আহমদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে আমাকে সিলেটভিউ২৪ডটম অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করার পরামর্শ দেয়। আমি সাদরে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে সংবাদ পাঠাতে শুরু করলাম। নিজের মতো লিখে সংবাদ পাঠাতাম কিন্তু অফিসে এডিট করে তা প্রকাশ করা হতো। এডিট লেখাগুলো ছিলো অনেক মানসম্পন্ন এবং পাঠকপ্রিয়। এসব দেখে নিজের লেখাকে আরও পরিশুদ্ধ করার চেষ্টায় ব্রত থাকতাম। আমার পণ ছিলো এবং এখনো আছে আমার লেখা অফিস থেকে এডিট করার সুযোগ দিবো না। কিছুটা হলেও এখন আমি লিখতে পারি। এই কিছুটা লিখতে পারাটা কিন্তু সিলেটভিউ২৪ডটকম এর পরিবারের সর্বাত্মক সহযোগীতায় সম্ভব হয়েছে। এই নিউজ পোর্টালে কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি জাতীয় ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দৈনিকে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।
একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার যদি নীতি আদর্শে বলবান হন তাঁর অনুসারী অর্থাৎ অনুজরা অবশ্যই সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হবেন স্বাভাবিক। বিগত বছরের শেষের দিকে দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পত্রিকায় (পত্রিকা ও সংশ্লিষ্ঠদের সম্মানার্থে নাম প্রকাশ করছি না) যোগদানের জন্য অফার আসলো। মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধির রেফারেন্সে আমি আমার সিভি ও যাবতীয় তথ্য ঢাকার অফিসে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠালাম। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আমি সিলেট ব্যুরোর সাথে দেখা করতে যাই। উনি সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দেন। এক সপ্তাহ পর সিলেট ব্যুরো আমাকে মোবাইলে কল করে বললেন, ‘শাকির, তোমার সিভি এক্সেপ্ট হয়েছে। তোমার সব কাগজ পত্র তৈরি আছে। এখন নিয়োগপত্র অফিস থেকে পাঠাতে চাচ্ছে। তোমাকে যে কিভাবে বলি, অফিসে কিছু বিকাশ পাঠাতে হবে।’ আমি প্রশ্ন করলাম, ‘বিকাশ কেন?’ উনি বললেন, ‘বুঝো না?’ আমি বললাম, ‘না’। উনি বললেন, ‘আরে বোকা কিছু বিকাশ না করলে কেমনে কি করবো।’ আমি বললাম, ‘পরে জানাবো ভাই’।
বিষয়টি শেয়ার করলাম আমার সাংবাদিকতার গুরু শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল ভাইয়ের সাথে। উনি সব শোনে খুব সহজ ভাষায় বললেন, ‘টাকা দিয়ে কি তুমি ওই পত্রিকায় কাজ করতে চাও?’ আমি বুঝলাম উনি আমার নৈতিকতা ও বিবেক সম্পর্কে জ্ঞাত ধারনা চাচ্ছেন। আমিও সরল সহজভাবে বললাম, ‘ভাই, আমি টাকার বিনিময়ে পত্রিকার প্রতিনিধি হতে চাই না।’ উনি সাথে সাথে বললেন, ‘ঠিক আছে। তবে ওই পত্রিকায় কাজ করার দরকার নাই। ভালো সুযোগ আসলে আমি তোমার ব্যাপারটা খেয়াল রাখবো।’
এমনিতেই আমি উনাকে অনেক বেশী শ্রদ্ধা করি। ওইদিনের কথোপকথনের পর উনার প্রতি আমি আরও বেশী আসক্ত হয়ে পড়ি। আমার এই ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতায় উপলব্দি করার সুযোগ হয়েছে যে, বর্তমান সাংবাদিকতার জগতে স্বচ্ছতা ও নীতি ধরে রাখা অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উনি জীবনের অনেকটা পার করে ফেলেছেন। উনার সাথে যারা কাজ করার সুযোগ পেয়েছে তাঁদের অনেকের সাথেই আমার পরিচয় হয়েছে। আমার সিলেটভিউ২৪ডটকম এর প্রায় প্রতিনিধির সাথে আমার কথা হয়েছে। কখনো কারও মুখ থেকে নবেল ভাই সম্পর্কে কটুক্তি কিংবা খারাপ মন্তব্য খুঁজে পাইনি। আবার দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিজে দেখেছি। সিলেটভিউ২৪ডটকম এর কোন এক উপজেলা প্রতিনিধি নিজের অজান্তে অথবা ইচ্ছা করেই এই পোর্টালে কাজ করে অন্য একটি পোর্টালের ভালোবাসা বেশী দেখাতে গিয়েছিলেন। বিচক্ষণ নবেল ভাই দুই বার উনাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। নবেল ভাই আমাকে বলেছিলেন, ‘শাকির, ও তো আমার সিলেটভিউকে ভালোবাসছে না। আর সেই ভালোবাসাই যদি না থাকে তবে তাকে আমার পোর্টালে রাখার দরকার কি? আমি তাকে বহিষ্কার করলাম।’ ওইদিন নবেল ভাইয়ের সাথে আমার কথা বলারই সাহস হচ্ছিলো না। যদিও মোবাইলে কথা হচ্ছিলো। কারন আমি উনার কথার ধরন, ভারী কণ্ঠস্বর শোনেই বুঝেছিলাম ওই প্রতিনিধির ব্যবহারে উনি খুব আঘাত (কষ্ট) পেয়েছেন।
একজন নিরঅহংকারী, সোজাসাপ্টা বাচনভঙ্গির অধিকারী, নিজের কর্মক্ষেত্রকে নিজের চেয়েও বেশী যিনি ভালোবাসেন তিনি নবেল ভাই। ২০১৭ সালের সিলেটভিউ২৪ডটকম এর প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রতিনিধিদের প্রতি নবেল ভাইয়ের প্রত্যেকটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ আমার কানে বাজে। আমি দেখেছি অনুজদের প্রতি উনার আবেগ ও ভালোবাসা। আমি উপলব্দি করেছি উনার সর্বস্ব দিয়েও যদি অনুজদের খুশি করা যায় উনার সেই উচ্ছ্বাস। এরকম একজন গুরু থাকতে আমাদের মতো মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীরা কখনোই হোঁচট খেতে পারে না। আমরা অনুপ্রাণিত হই সংবাদ জগতে কাজ করার। আমরা আশাবাদি হই, সংবাদজগতে আবার হয়তো পুরনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবেল ভাইদের মতো ব্যক্তিদের হাত ধরেই সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের সম্মান ও আস্থা ফিরে আসবে।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় আমি অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি। অনেক ঝুট ঝামেলায় পড়েছি। নবেল ভাইয়ের কাছে অনেকে হয়তো আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। আমি ঘুনাক্ষরে বলতে পারবো না ওইসব বিষয় উনি কিভাবে সামাল দিয়েছেন। আমি প্রস্তুত থাকতাম, এই বুঝি আমাকে নবেল ভাই প্রশ্ন করেন। অবাক করা বিষয় উনি আমাকে কখনোই কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন নি। আজ অবধি না। এতে প্রমান হয় উনার অনুজদের প্রতি উনার বিশ্বাস ও আস্থা চরম। তবে এটাও বিশ্বাস করি অন্যায় করে কেউ নবেল ভাইয়ের কাছ থেকে পার পাবেন না। এমনকি আমিও না।
একজন সংগঠকের নেতৃত্ব গুনাবলীর যা যা থাকার দরকার আমার চোখে আমি সব দেখেছি নবেল ভাইয়ের চোখে মুখে। আমার মতো মফস্বল সংবাদকর্মীরা উনার নেতৃত্ব গুনাবলীর কারনে উনাকে আদর্শ মানবে নির্দ্বিধায়।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে উনি যুক্তরাষ্ট্রে গমন করছেন। একজন এসভিয়ান হিসেবে আমি উনার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
লেখক : নিজস্ব প্রতিবেদক (কুলাউড়া), সিলেটভিউ২৪ডটকম।