আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর সংগঠন আমার হৃদয়ে গাঁথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-২৩ ১৩:৪৩:৫৭

আল-আমিন :: সারা দুনিয়ায় নানান ধরণের রাজনীতি চলে। কারও ক্ষমতা পাওয়ার জন্য রাজনীতি, আবার কারও সম্পদ বানানোর জন্য রাজনীতি। আবার কেউ রাজনীতি করে নিজের ক্ষমতাকে সংকোচিত করে অন্যকে সহযোগিতা করার জন্য। আবার কেউ নিজের জীবন বিলিয়ে দেয় নিঃস্বার্থভাবে দেশের তরে দেশকে ভালোবাসে।

আমার চাচা শহীদ আবু তাহের তারু মিয়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। তখন যুদ্ধের ভয়াবহ খুব বেশি ছিল বলে তার মরদেহটিও তার মায়ের কাছে পৌঁছাতে পারেনি তার সহযুদ্ধারা। জীবিত ছেলের মুখ কিংবা শহীদ ছেলের কবর না দেখার স্বাদ আর দাদীর কপালে জুটল না। দাদী তার ছেলে আবু তাহের তারু মিয়ার কবরটি বার বার দেখার শেষ ইচ্ছে করেও চোখের পানি শুকানোর পূর্বেই সে তার শহীদ ছেলের কাছে ওপারে চলে যায়। এখন আমরা মাঝে মধ্যে চাচার কবর জেয়ারত করতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাই।

যুদ্ধকালীন সময়ে আবু তাহের তারু মিয়া ছিলেন একেবারে তরুন। বিয়ে ঘর সংসার করার পূর্বেই মা মার্তৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে যাপিয়ে পড়েন। পরে পাঞ্জাবীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। সরকারী গেজেটে শহীদের তালিকায় তাঁর নাম থাকা স্বত্ত্বেও সরকারের আর্থিক কোনো সুবিধা পাননি তার পরিবার। কারণ শহীদের এই সুবিধা ভোগ করার জন্য তার মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান কেউ পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। এই পরিবারও সরকারী আর্থিক কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য কখনোই কাজ্ঞাল ছিল না। তাদের পরিবারের সন্তান দেশের তরে জীবন দিয়েছে। এতে তারা গর্ব করে, অহংকার করে।

আমার নানা আব্দুল হামিদ (ডাক্তার) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধ কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের মধ্য রাতে পাক হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র বাংলার জনগনের উপর শুরু করে অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন। তখন বাংলার জনগন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু করে সংগ্রাম কমিটি গঠন ও মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ কমিটি। এই সংগ্রাম কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান, খাদ্য এবং যেকোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তাদেরকে সহযোগিতা করতো। যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করতো তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতেন এই সংগ্রাম কমিটি। টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড ও বোগলাবাজার ইপিআর ক্যাম্প থেকে পাওয়া অস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম কমিটি তাদের নিজস্ব বাহিনী গঠন করে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে। ফলে এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সহজেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর উপর হামলা করেছে এবং এই এলাকা স্বাধীন করতে তাদের বেশিদিন গুনতে হয়নি। এজন্যও আমার অসম্ভব গর্ব হয়, আমি অহংকার করি। কারণ, আমার বাবা মায়ের দুই পরিবারই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এই মর্মে।

আমার বড় ভাই মাসুক রানা দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য পদের দায়িত্ব পালন করছে।অাওয়ামীলীগের ঘরেই অামার জন্ম। আমিও ছাত্রলীগ করেই বেড়ে ওঠছি। পদ পদবীর প্রতি কোনো লোভ জাগেনি কখনো। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি বলেই তার আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে জয় বাংলা শ্লোগান আমার হৃদয়কে শিহরত করে। এই জায়গায়ও আমার গর্ব হয় আমাদের পূর্ব পুরুষ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের এই প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ের ধারণ করে তাঁর গড়া সংগঠনের রাজনীতি করে যাচ্ছে।

আওয়ামীলীগ এবং তার সরকারকে নিয়ে যখন ষড়যন্ত্র হয় তখন ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি আমার ঘৃনা হয়। আওয়ামীলীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়। হাজারো শহীদের রক্ত, জাতির পিতার শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগে প্রতিষ্ঠিত একটি সফল সংগঠনের নাম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এজন্য আমি মনে করি, আওয়ামীলীগ এবং আমার প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমার কাছে একটি অনুভূতির জায়গা। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি অামার মতো হাজারো মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। অথচ তারা রাজনীতি করে না। কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে জাতির পিতাকে ভালোবাসে। দেশের উন্নয়নের শেষ ভরসায় তারা অাওয়ামীলীগকে খুঁজে। আমি মনে করি, তাদের কাছেও অাওয়ামীলীগ একটা ভালোবাসার জায়গা, দেশের উন্নয়নের শেষ ভরসা। দেশের প্রতি এই অনুভূতি ভালোবাসা কতোটা তীব্র সেটা পাকিস্তানি পেত্মারা কখনোই বুঝে না, তারা বুঝবেও না। এজন্য বার বার দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। গুজব রটিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রিয় মানুষকে গুলির মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেয়। এটা তাদের কেমন রাজনীতির ব্যবসা?

যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তারা কখনো আবরারকে পিটিয়ে মারতে পারে না, বিশ্বজিতকে কুপিয়ে মারতে পারে না। তারা ধর্মান্ধ হতে পারে না। তারা হয় অসম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ গড়ার নির্মাতা। তারা হয় এক একজন তোফায়েল আহমদের মতো দেশপ্রেমিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো সৎ আদর্শবান জাতীয় নেতা।

ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ সরকার এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এক হয়ে যায় ধর্ম ব্যবসায়ী সুশীল শিবির আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী দল। অথছ আমরা তো এমনি ছাত্রলীগ করি যারা কদিন আগেও ক্যাসিনো কি এর সাথে আমাদের কোনো পরিচয় ছিল না। তারপরও এই ছাত্রলীগের কতনা গন্ধ খুঁজে ঐ পাকিপ্রেমিদের দলেরা।

আমরা যারা গোড়া থেকে বঙ্গবন্ধুর দলের রাজনীতি করি, আমরা দেখি আওয়ামীলীগের সরকার প্রধান আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে দিবারাত্রি পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই জায়গায় আমরা আশা বাধি, আমরা সুখের ঢেকুর তুলি, গর্ব করি আমাদের নেত্রীকে নিয়ে। আমরা আশার বুক আরো প্রশস্থ করি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার দেশকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নতির দিকে, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে ঘরে ঘরে। রাস্তা ব্রীজ হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। এই মমতাময়ী নেত্রীর জন্যই তো আমরা স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রাম হবে আমার শহর।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন