আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

চলে যাওয়া মানে সব শেষ নয়...|| মান্না চৌধুরী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০৭ ১৯:২৩:১১

আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিদের ফেলে দেয়া হয় খুব সহজে। সময় যত যাচ্ছে এই মানসিকতাই বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। রাজনীতিতে অবশ্য বেশি চলে এই প্রবণতা। চলে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া সবক্ষেত্রেই। ভুলে যাওয়া মানে এমন, ‌‘চলেই যখন গিয়েছো স্মরণ করে লাভ কি!’

অতীত নিয়ে পড়ে থাকা মানে বর্তমানকে ঝুঁকিতে ফেলা! এসব দেখে দেখে আসলে খুব কষ্ট হয়। চিরতরে চলে যাওয়াদের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেই তো তৈরি করা যায় সাফল্যের সৌধ। আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক সিলেট জেলা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সংস্থা অন্তত হারিয়ে যাওয়া তারার খু্ঁজ করে প্রশংসাবাণে ভাসছে। সিলেটের ফুটবলারদের সংগঠন দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে কুটিম-জুয়েল স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। এখানেই শেষ নয়। হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা আরো কয়েকজন কীর্তিমানকেও স্মরণ করেছে তাঁরা।

টুর্নামেন্টের আট দলের নামকরণ করা হয়েছে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের আট কিংবদন্তির নামে। যাদের সবাই ইহজগত ত্যাগ করেছেন সিলেট তথা দেশের ক্রীড়াজগত রাঙিয়ে। কমরু মিয়া ঝাড়ু, লুৎফুর রহমান লালু, মফিজুর রহমান তিতন, জুম্মন লুসাই, তমজিদ আলী, এনামুল হক মুক্তা, মুহিব আলী, আক্তারুজ্জামান মান্না এই আট আলোকোজ্জ্বল মানুষের নামে দলগুলোর নাম। চলে যাওয়া মানে সব শেষ নয় সেটাই প্রমাণ করলো সিলেট জেলা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সংস্থা। সংগঠনের সভাপতি রুবেল আহমদ নান্নু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম জাকারিয়া চৌধুরী শিপলুসহ সকল সদস্যের ব্যস্ততা দেখেছি টুর্নামেন্ট ঘিরে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে ফুটবলের একটা মিলনমেলাই বসবে বলা যায়।

কুটিম ছিলেন ফুটবলের এক ম্যাজিশিয়ান। ফুটবলে একটা কথা চালু আছে, খেলা সবদিন সমান হয় না। সময়ের সেরা লিওনেল মেসিকেই দেখুন, ন্যু ক্যাম্পে আজ হিরো তো কাল সেল্টা ভিগোর মাঠে জিরো! কিন্তু সিলেটের কুটিম টানা ফুল ফুটিয়ে যেতেন মাঝমাঠে। মাঠে থাকতেই সৃষ্টি করেছেন অনেক ফুটবলার। অনিয়ন্ত্রিত জীবন আর পাগলাটে স্বভাবের কুটিমকে শেষপর্যন্ত জীবনের তাগিদ টেনে নিয়ে যায় সৌদিআরবে। সেখানেও ফুটবলের পাঠই শেখাতেন। মাঠের মানুষ মাঠেই অসুস্থ হয়ে চলে যান দূর বহুদূরে।

জুয়েলের চলে যাওয়াটা অবশ্য বেশি করে কষ্টে ভাসায় সতীর্থদের। কতোইবা বয়স তখন! ফুটবলে কমদিনেই তাকে নিয়ে মাতামাতি। সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত সেভাবে উন্মোচিত হওয়ার আগেই ডাক আসে জুয়েলের। জুয়েলের জীবনীও নিঃশ্বেস হয় খেলার মাঠেই। খেলোয়াড় কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা এই দুজনকে বাঁচিয়ে রেখেছে শ্রদ্ধায়, আবেগে, ভালোবাসায়। তাই কুটিম-জুয়েল ফিরে ফিরে আসেন ফুটবলে, তাঁদের অনেক স্মৃতিচিহৃের সবুজ গালিচায়।

সিলেট জেলা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সংস্থার সদস্য হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কিংবদন্তিদের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে নবীনদের উজ্জীবিত করার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকুক, জয় হোক সিলেটের ফুটবলের। শুভ কামনা।

*লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি, সিলেট শাখা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন