আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১৫ ২০:৩০:০৬

মুহাম্মদ মনির হোসাইন :: প্রবাসীদের সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রথমেই যার কথা মনে পড়ে তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিকট সান্নিধ্য পেয়েছে প্রবাসীরা, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। ঠিক তেমনিভাবে প্রবাসীরাও তাঁকে কাছে টেনে নিয়েছেন গভীর ভালোবাসায়। তিনি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সুসংগঠিত করে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত করেছিলেন। আমার বাবা একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও কমউিনিটি ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে আমি যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ি তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আয়ুব-এহিয়া বিরোধী আন্দোলন চলছিল। তখন আমার বাবা দেশে আসলে, কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলেছিলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান একজন ভালো মানুষ এবং বাঙালির জন্য আন্তরিকভাবে ভালো করতে চাচ্ছেন তাই তাঁকে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এই কথাটি আমার মনে বেশ রেখাপাত করেছিল।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আমার বাবা আমাকে লিখেছিলেন, আগামি এক মাসের খরচের টাকা পাঠাতে পারবেন না, প্রয়োজনে আরও এরকম হবে। বাবা শুধু নিজের রুজগারের টাকাই দান করেননি, তিনি যেখানে থাকতেন সে এলাকার লোকদের সাথে নিয়ে টাকা তুলে অস্থায়ী সরকারের তহবিলে দান করেছিলেন। আমরা যদিও মাসিক টাকা পাইনি তথাপি আমরা কষ্ট অনুভব করিনি বরং আমাদের এ ত্যাগ বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে কিছু দিতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেছিলাম। এরকমভাবে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তীতে অকুণ্ঠ সমর্থন যোগিয়ে তার আন্তরিকতা ও ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুও প্রবাসীদের অবদানকে বিভিন্নভাবে সম্মানিত করেছেন।

ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু যখন করাবন্দি এবং তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য পাকিস্তান সরকার পাঁয়তারা করছিল তখন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা লন্ডন থেকে আইনজীবী নিয়োগ করে দেশে পঠিয়ে আইনি সহায়তা দিয়ে কারামুক্তি সহজ করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের তহবিলে নিজেদের রুজগারের মাসের সব টাকা পাঠিয়ে দেন। এই ভাবে প্রবাসীরা টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। গত অর্থ বছরে প্রবাসীরা ১৫.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয় যুদ্ধকালীন সময়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সংগঠিত করে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বর্বর ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন ও বিশ্বজনমত সৃষ্টি করেন। যার ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয় এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতেও সহজ হয়।

৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের নিয়ে পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলে এক বিরাট জনসভার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। তাঁদের হাতে গঠিত সর্বইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাদের সমর্থনে স্থানীয় এমপি পিটার সর, আইনজীবী ও অন্যান্য মানবতাবাদী সংগঠনগুলো এগিয়ে আসে। ১৯৭৫ সালে রাতের অন্ধকারে নরপুশুরা শুধু জাতির জনককে হত্যা করেনি তাঁর পরিবার, আত্মীয় স্বজন এবং ছোটো শিশু রাসেলও তাদের পৈশাচিকতা থেকে রক্ষা পায়নি।

তাছাড়া ও ১/১১ সরকারের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরার পথে যুক্তরাজ্যে যাত্রা বিরতি করে দেশে আসতে চাইলে মঈন উদ্দীন, ফখরুদ্দীন সরকার তাঁকে দেশে আসতে বাধা দিলে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার সাথে দেশে আসলে সরকার তাদের কারাগারে নিমজ্জিত করে এবং এই আগমন সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। প্রবাসীরা সবসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মক্তবসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিরলসভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। তাদের এই অবদান কোন ভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাছাড়া দেশে রেখে যাওয়া পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গরীব-দুঃখি মানুষকে সবসময় তারা সাহায্য সহযোগিতা করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক বিরাট ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। যার সুবিধাভোগী আমাদের সমাজের একটি অংশ। প্রবাসীদের বঞ্চনার কথা না হয় এখানে বাদই দিলাম যা নানা ভাবে আলোচিত ও সর্বজন জ্ঞাত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবাসীদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে কখনও কমতি করেননি বরং প্রবাসীরা তাঁর কাছে এক বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে যুক্তরাজ্য গিয়ে তাদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার নিদর্শন রাখেন। প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করে প্রবাসীদের দেশের মাটি ও মানুষের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেন। তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মন্নান চৌধুরী ছানু মিয়াকে এমপি হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে তাদেরকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে অংশিদার করার সূচনা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও প্রবাসীদের আলাদা একটি মর্যদার আসনে রাখেন। তিনি প্রবাসীদের বিমানবন্দরে হয়রানী বন্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে তা বহুলাংশে কমে আসছে।

কিছুদিন আগে নাগরিত্ব আইন করতে গিয়ে প্রবাসীদের মা ও মাটি থেকে বঞ্চিত করার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার তরিৎ ও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদানের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রবাসীদের পুনরায় দেশের মানুষ ও মাটির সাথে যুক্ত করে দেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই আইনের খসড়া প্রকাশ পাওয়ার পর প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি, সহায় সম্পত্তি আত্মসাতের পাঁয়তারা শুরু হয় যার ভুক্তভোগী অনেকেই।

বেশকিছু দিন আগে দ্যা ইকোনমিষ্ট ম্যাগাজিনে ‘প্রবাসীরা স্বর্ণের খনি’ শিরনামে একটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে বলা হয় যে চীন, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ কয়েকটি দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১২ শতাংশ। তারা বলেছেন, দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিতে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ একটি কারণ। দেশেগুলো দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে করে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে অনায়াসে সম্পৃক্ত হতে পারেন। যেমন, বিশেষ কৌটা করে বা বাড়তি সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসতে তাদের আকৃষ্ট করেন। যুক্তরাজ্যের সাথে চীনের একটি চুক্তি ছিল যার ভিত্তিতে চীনা ছাত্র/ছাত্রীরা যুক্তরাজ্যে গিয়ে লেখাপড়া করে দেশে ফিরে গিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। এই প্রবন্ধে তারা আরো বলেছিল ২০২০ সালের মধ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ পদে প্রায় বিশ শতাংশের মত লোক নিয়োগ পাবে। প্রবাসীরা যুক্ত হলে কেন উন্নয়ন হয় তার কারণ হিসেবে তারা বলেছেন; প্রবাসীরা সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত ও পেশাদারি মনোভাবাপন্ন যা থেকে দেশ অনেক লাভবান হয়।

তবে এখানে একটা কথা বলা বাঞ্জনীয় সে অনুপাতে বাংলাদেশে তেমন কোনও কার্যকর কোনো পদ্ধতি নেই যে যাতে করে প্রবাসীরা তাদের আধুনিক ও উন্নত দেশ থেকে লব্ধ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে দেশের কাজে লাগাতে পারে।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ রতœ শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় এর সুযোগ্য নেতৃত্বে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যার ফলে কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধাসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু দেশে এইসব দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী লোকের যোগান অপ্রতুল থাকার কারণে ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল সহ অন্য প্রতিবেশী দেশ থেকে লোক নিয়োগ দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তাতে করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

তাছাড়াও রাজনীতি ও প্রশাসনে দুর্নীতির ছড়াছড়ি উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখানে আশার কথা যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। টেকসই, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষের প্রয়োজন সে প্রশাসনেই হোক বা রাজনীতিতেই হোক। রাজনীতিতে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের একটি সমুজ্জ্বল উদাহরণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি নিজেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এছাড়া আরো অনেকেই আছেন যারা দেশের রাজনীতিতে অবদান রেখে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তবে ঢালাওভাবে সুযোগ দেওয়ার কথা বলছি না বরং তাদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিচার করেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছি।

দেশের প্রয়োজনে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এবং এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। তাই প্রবাসীদের ভোটাধিকার, দ্বৈত নাগরিকত্ব ও বিভিন্ন হয়রানি বন্ধসহ নানা প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার এই আন্তরিকতার কারণে প্রবাস থেকে অনেকেই দেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টাও বেশিদূর এগুচ্ছে না। তার কারণ, প্রবাসীরা,  ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র কথা প্রকাশ্যেই বলা হয়ে থাকে। তবে প্রবাসীরা কোনো ভাবে উড়ে এসে ঝুড়ে বসার নয়- কারণ স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজ অবদি যে অবদান রেখে যাচ্ছেন তা কোনো ভাবেই গৌন করে দেখার সুযোগ নেই। তাছাড়া তারা কারও স্থান দখল করেন না, বরং শূন্যস্থানই পূরণ করবেন। 

প্রবাসীরা দেশের একেকজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো বিশেষ সময়ে যখন দেশে আন্দোলন করা না গেলেও প্রবাসে করা সম্ভব হয়। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের শাখা প্রশাখা আছে এবং সবাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে। যেমন ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ফর বাংলাদেশিজ ইন ইউকে প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহ ও দেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে হাউস অফ কমন্সে ও ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেমিনার প্রণিধানযোগ্য। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন দেশি ও বিদেশি চক্রান্ত অপপ্রচার চালানো হয়েছিলো তখনও এই সংগঠন সেমিনারের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত্ব উপস্থাপন করে প্রতিবাদ করে এবং নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার আহ্বান জানায়, যা জননেত্রি শেখ হাসিনা লন্ডনের একটি সভায় এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ২০০৯ সালে দেশরতœ শেখ হাসিনা লন্ডনে ব্যক্তিগত সফরে গেলে তার নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হলে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এমপির মাধ্যমে হোম মিনিস্টারের কাছে চিঠি লিখলে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চত করা হয়।

লন্ডন হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবির অবমাননা করা হলে ‘বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরাম ইউকে’ প্রতিবাদ জানায় যা স্থানীয় ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। এই সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশরতœ শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে দেশে ও প্রবাসে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, টিউলিপ সিদ্দিক এমপি ও ব্রিটিশ এমপিদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান ও নারী উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা হাউস অফ কমন্সে সেমিনার উল্লেখযোগ্য। প্রবাসীদের অবদান দেশের একজন নাগরিকের চেয়ে কম নয় বরং বেশি। এ কারণে যে, তারা দেশমাতৃকা থেকে দূরে থেকেও দেশের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছে।
কিছু দিন আগে দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন করতে গিয়ে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব বাদ পড়ে যাওয়ার প্রস্তাবনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রবাসী বিনিয়োগ অনেকাংশে কমছে এবং অনেকেই বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাতে করে আবাসন খাতসহ নানা খাতে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তাই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের দেশের আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কর্তৃক তার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের একটি তথ্যভাণ্ডার করার উদ্যোগ নিলে তা বেশিদূর আগায়নি, বিদেশি মিশনগুলোর আমলাতান্ত্রিক মনভাবের কারণে। তাছাড়াও বিনিয়োগের জন্য সরকারের ‘ওয়ান স্টপ শপ’ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে বাস্তবে এর তেমন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। প্রশাসন ও দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছেন এবং দলের নেতৃত্ব সৎ ও যোগ্যদের হাতে তুলে দিচ্ছেন যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে এখানে যদি প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট করা যায় তাহলে তাদের সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও উন্নত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উন্নয়নকে টেকসই করে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে পৌছাতে অনেক সহজ হবে বলে আমরা মনে করি। 

বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর দল, স্বাধীনতার দল, শেখ হাসিনার দল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের দল- এ দলের কাছে অবশ্যই সকলের চাওয়া এবং পাওয়া অনেক বেশি। আমরা আশা করব সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এইসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ও প্রবাসীরা উভয়েই উপকৃত হবে এবং দেশের কল্যাণ সাধিত হবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ; উপদেষ্টা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। ই-মেইল : monirhussain_7@hotmail.com

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন