আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অস্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও আমার কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১৫ ২৩:০৪:২৫

জান্নাতুল শুভ্রা মনি :: যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে -এমন দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশি নয় মোটেও। তবে এর একটি যখন বাংলাদেশ, তখন বিশ্বের বুকে এ দেশটি কেনো আলাদাভাবে মর্যাদা পাবে না? কেনো স্বাধীনচেতা, লড়াকু আর যুদ্ধজয়ী বীর-বাহাদুরদের জন্মভূমি হিসেবে দেশটির পরিচিতি হবে না? সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকী উদযাপন করছে দেশের আপামর জনতা। প্রতিবছরই বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-আমোদধর্মী নানা আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জাতি উদযাপন করে আসছে দিনটি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম থেকে গেলাম আমি। আমি আনন্দিত হতে পারিনি একটা মুহূর্তের জন্যও। তীব্র চাপা কষ্ট প্রতিনিয়ত আমাকে আহত করে, কাঁদায়! আর্তনাদ করে ডুকরে কাঁদি এই দিনটি আসলেই।

অতৃপ্তি বাসা বাধে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির কারনে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি বলে। ভুলতে পারিনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার বাবার অকৃত্রিম অবদানের কথা। কিছুতেই মানতে পারিনা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারি ও দরকারি স্বীকৃতিটুকু না পেয়েই তার পারপারে চলে যাবার কথা। আমার তো মনে হয়- পারপারে এখনও আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মা অতৃপ্ত, সেই সাথে আমারও। কারন বাবা জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধজয় করেও এর স্বীকৃতিটুকু পাননি আর আমি সেই হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা পিতার কন্যা হয়েও কেবল স্বীকৃতির অভাবে জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধার কন্যা’র গৌরবোজ্জ্বল মুকুটখানি মাতায় ব্যবহার করতে পারি না।

প্রতি বছরই আমি বিজয় দিবস উদযাপন করি। দিনের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু করি পবিত্র এ দিনটি। আজন্ম এভাবেই পালন করছি শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস, শহীদ দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস। বাবার জীবদ্দশায় তার হাত ধরে মধ্যরাতেও শহীদমিনারে ফুল দিতে যাওয়া হতো। এভাবেই ধমনীতে, শোনিতে মিশে আছে শহীদ মিনার আর শহীদ স্মৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা। আর তাই এবারের মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আমি আমার বাবাকে নিয়ে কিছু কথা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই।

দুই.
ছাতক থানার পূর্ব দিকের কিয়দংশ এবং ভোলাগঞ্জ (বর্তমানে কোম্পানিগঞ্জ থানা) অঞ্চল ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল হক এম এন এ। সংগঠক ও ক্যাম্প ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে যারা ছিলেন যথাক্রমে হেমেন্দ্র কুমার দাস পুরকায়স্থ, কমরেড মানিক মিয়া, ড. হারিছ আলী, ড. আব্দুর রহিম, মদরিছ আলী, বি এ এম এ খালেক, ময়নুদ্দিন (শ্রীমঙ্গল) ও আব্দুল গণি (দিরাই)। উনারা সকলেই নিষ্ঠার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। এ সাব-সেক্টরটির কিছু উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ছিল গৌরীনগর যুদ্ধ। রণক্ষেত্রের জন্য গৌরীনগর এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

ফলে সেখান থেকে সালুটিকর ও বিমানবন্দরের দুরত্ব মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার। ফলে সালুটিকরে পাক বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে আঘাত হানা সম্ভব ছিলো। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বাম ফ্রন্টের গেরিলা গ্রুপ তৈরির একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছুটা ট্রেনিং এর জায়গা ও পান তারা। সুনামগঞ্জ অঞ্চল হতে এরকম একটি গ্রুপকে ট্রেনিং-এ পাঠানো হয়েছিলো। তাঁরা ট্রেনিং সমাপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এ দলটির মধ্যে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সাইফুর রহমান শামসু (আরপিন নগর, সুনামগঞ্জ), শিবনাথ চৌহান (হাছন নগর, সুনামগঞ্জ), বামপন্থি নেতাদের মধ্যে বরুণ রায়, আলী ইউনুস এডভোকেট, গুলহার আহমেদ, নজির হোসেন, আব্দস শহীদ চৌধুরী (দিরাই), আব্দুল গণি (দিরাই) ও সৈয়দ আব্দুল হান্নান (জগন্নাথপুর) মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে এবং বামপন্থি গেরিলা বাহিনী তৈরি করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

উল্লেখ্য যে, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি (দিরাই) দীর্ঘ নয় মাস সেলা ও ইউথক্যাম্প ভোলাগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতার পর সেলা সাব-সেক্টরের কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি সমস্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করে যুদ্ধ শেষ হবার এগারো দিন পর দেশে ফিরে আসেন। সেই সময় উনার সাথে যারা ছিলেন অনেকের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকলেও আমার হতভাগ্য বাবা ‘আব্দুল গণি (দিরাই)’ এর নামটি তালিকায় নাই। স্বাধীনতার পর আমার বাবা দিরাই উপজেলায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (মরহুম) যুগ্ম-সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকারের সহযোগিতায় দিরাই উপজেলায় একটি গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক হিসেবে পাঠাগার গড়ে তোলেন যা আজও বিদ্যমান। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীও সহযোগিতা করেন। এই পাঠাগারে হাজার হাজার বই তিনি সংগ্রহ করে গেছেন। তিনি সুনামগঞ্জ বার্তা, যুগভেরী ও জাতীয় দৈনিক সংবাদ -এর সাংবাদিক ছিলেন। তাছাড়া মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, পীর হাবীবুর রহমান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রসুন কান্তি বরুন রায় এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও খুব স্নেহভাজন ছিলেন আমার বাবা।

আজ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলো, পার হয়ে গেলো বাবার মৃত্যুর চৌদ্দটি বছর। কিন্তু আজ পর্যন্তও আমার বাবা পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনও স্বীকৃতি রাষ্ট্রের কাছ থেকে। আমি বিশ্বাস করি- প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য, কোনও স্বীকৃতির জন্য নয়। আমার বাবাও এর ব্যতিক্রম নন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জীবন-সংসারের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। পাক হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা অস্ত্র জাতির পিতার আহ্বানে তার পায়ের সামনে বিছিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছিলেন সাধারন জীবনে। কিন্তু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমার বাবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পবেন না, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থাটুকু হবে না, তার কন্যা হিসেবে এমনটি মেনে নেয়া যে কতো কষ্টের, তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।

তিন.
আজকাল প্রায়ই আমাকে প্রশ্নের সম্মূখীন হতে হচ্ছে- আমার বাবা আদৌ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না! কারন এর কোন ডকুমেন্ট বর্তমানে আমাদের কাছে নাই। যেটুকুই ছিলো ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার বাবা ছিলেন আত্মপ্রচার বিমূখ মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। কখনও এসবের স্বীকৃতি চান নি। আজ যখন এমন প্রশ্ন তুলা হচ্ছে আমার মৃত বাবাকে নিয়ে, তখন তো আর আমি নিশ্চুপ থাকতে পারি না। কন্যা হিসেবে আমার বাবার ন্যায্য অধিকারটুকু আদায় করে নেয়া এবং প্রকৃত ইতিহাস ও সত্য কথাগুলো সমাজে তুলে ধরা প্রমান করা আমার দায়িত্ব। আর তাই আমার বাবাকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলায়, লিখতে লাগলাম তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের রোমাঞ্চকর কথামালা।

একটা পর্যায়ে এগিয়ে আসলেন দৈনিক সিলেটের ডাকের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সাঈদ নোমান। এ ব্যাপারে সাহায্য করলেন আমাকে। আমাকে মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেকগুলো বই পেলাম জসিম বুক হাউস থেকে। আমি বইগুলো পড়তে লাগলাম, আর একে একে পেয়ে গেলাম প্রিয় বাবার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার, সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করার এবং যুদ্ধজয় করে বীরের বেশে ফিরে আসার নির্ভরযোগ্য ও প্রকৃত অনেক ঘটনাবলী। এ ব্যাপারে মাসুম আহমেদ এবং কে এইচ মামুন ভাইও সাহায্য করেছেন প্রচুর।

চার.
সিলেট থেকে আমাকে পাঠানো হলো আমাদের এলাকার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমানের কাছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন লিস্টে কি আমার বাবার নাম এসেছে কি না? তিনি এটা শোনা মাত্রই রূঢ় ব্যবহার করলেন আমার সাথে। স্পষ্ট বলে দিলেন, আমার বাবা কোন কালেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। আমি তখন বিনীতভাবে জানতে চাইলাম- আমার বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা না হতেন, তাহলে এতোগুলো বইয়ের মধ্যে নাম আসলো কি করে? উনি তখন টিটকারি সুলভ আচরণ করতে লাগলেন। কোন রকম সাহায্য তো দূরের কথা উল্টো আমি মেয়ে বলে ক্রিটিসাইজ করছিলেন। তার পাশে চামচা গোছের যারা ছিল তারাও ক্রিটিসাইজ করছিল। আমি অসহায় বোধ করছিলাম তখন। অসহায় বোধ করছিলাম একারনেই যে, একজন মুক্তিযোদ্ধার আচরণ এতোটা নিকৃষ্ট হতে পারে দেখে।

অথচ এরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিস্টেড করেন। এরকম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের কারনে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বার বার। আমি হতাশ হইনি মোটেও বরং আরও উদ্যম, সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যাই। প্রচন্ড জেদ চাপে মনে। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এটা আমি প্রমান করলে তো মেয়ে হিসেবে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না যে কোন কালে। অবশেষে “রক্তাক্ত একাত্তর” নামের একটি বই আমার হাতে আসলো। বইটি লিখেছেন সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সুনামগঞ্জ বারের সাবেক সভাপতি বজলুল মজিদ খসরু। বইটিতে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বাবার কথা লিখা আছে। পরে একসময় উনার সাথে সরাসরি দেখা করি এবং কথা বলি। কথা বলার পর জানতে পারলাম আমার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।

এখন সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো- আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং সরাসরি এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, জীবদ্দশায় তিনি কখনো এসবের স্বীকৃতি চান নি। কোনো কিছু পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব করে নয়, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সম্মুখ সমরে। ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র। অথচ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিবার্তায় আজও আমার বাবার নাম উঠেনি। অথচ উনার সঙ্গী-সহযোদ্ধা সকলের নাম আছে। এখন আমি বিভাবে অগ্রসর হবো? প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতি কি করে আদায় করবো? বাবার সাথে সহযোদ্ধা যারা ছিলেন, কেউ আজ জীবিত নেই। একমাত্র বজলুল মজিদ খসরু মৌখিকভাবে সাক্ষী দিয়ে চলেছেন।

পাঁচ.
বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার বাবা আজ জীবিত নেই। কিন্তু উনার নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এই জন্য যে, আমার বাবা আজ নেই, কিন্তু উনার নাম তালিকা ভুক্ত করলে আমরা তাঁর সন্তান হিসেবে গৌরববোধ করব ও সম্মানিত হবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ তো শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে উঠার যে গৌরবময় ইতিহাস তার অপর নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে পুরো বাংলাদেশ বিজয়ী হয়, কিন্তু আওয়ামীলীগ হেরে গেলে যে পুরো বাংলদেশ হেরে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে স্বীকৃতিটুকু দিন।

হয়তো বাবা নিজে স্বীকৃতিটি নিজের হাতে নিতে পারবেন না, কিন্তু অপার থেকে ঠিকই দেখে পুলকিত হবেন, প্রাপ্তির আনন্দে হয়তোবা বাবার বিদেহী আত্মায় প্রশান্তি সঞ্চারিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! দেশমাতৃকার জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন আমার বাবা, হয়তোবা সেই ঋণ শোধ করার ধৃষ্টতা আমরা কেউই দেখাবো না। কিন্তু তাঁর নামটি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তালিকাভূক্ত করে তাঁর প্রতি কিছু দায়িত্ব কি আমরা পালন করতে পারি না?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আপনার এবং আপনার সরকারের উদ্যোগ কম নয়। কিন্তু আলোর নিচে অন্ধকারের মতো বেঁচে থেকে আমার বাবা চলে গেছেন পারাপারে। জীবিত থাকতে শুনে যাননি তিনি একজন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগেই আমার বাবার মতো সুবিধা বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত করার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে মরোণোত্ত্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসহ তাদের কবর সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।

লেখক : কবি ও এপ্রেন্টিস ল’ইয়ার

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন