আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নাদেলের কাছে সৈয়দ হকের খোলা চিঠি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-০১ ০১:১৪:৫৫

প্রিয় নাদেল,
চিঠির প্রথমে আমার বুক ভরা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভাল আছো। দীর্ঘ প্রায় ২৩/২৫ বৎসর পরে তোমাকে যে চিঠি লিখবো সেটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু লিখতে হচ্ছে। চিঠি লিখার আমাদের মধ্যে একটা চর্চা ছিল। প্রেম পত্রও লিখেছি একসময় লুকিয়ে। যাক সে গুলো আমাদের প্রথম প্রেম। তোমার আমার প্রথম প্রেম ছিলো রাজনীতি।

মনে পড়ে সন্ত্রাস দমন আইনে তোমার নামে মামলা হলো। তুমি জেলে গেলে। আমাদের সবার নামে তখন মামলা। তোমার ‘সাজা’ হয়ে যায় এরকম পরিস্থিতি। তোমাকে আমি জেলে গিয়ে দেখতে পারি না। একদিন বিজিত দা ( বিজিত চৌধুরী ) জিন্দাবাজারে আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, তোমার বন্ধু তোমারে একখান চিঠি লিখছে। তাঁর জিন্স প্যান্ট থেকে বেরিয়ে এলো একটি ছোট কাগজ মোড়ানো চিঠি। রাতে আমি বাসায় থাকি না। তোমার বাংলা ইটালিক ফ্রন্টের মতো লিখা টা পড়লাম।

অসাধারণ লিখা। পারিবারিকভাবে বেড়ে উঠা লেখাপড়া পরিবারের সন্তান তুমি। চিঠির মধ্যে তাঁর কিছু প্রকাশ আছে। জেলের জীবন, বাইরের জীবন। আহা ! চিঠি টা আমার সংগ্রহে ছিলো। কিন্তু দেশ বদলের সাথে সাথে চিঠিটাও কোথায় হারিয়ে গেছে জানি না। পর লিখি। ভূমিকাটা একটু নিতে হলো। গত ২৬ শে ডিসেম্বর ২০১৯ আমাদের ব্রিটেন ইউরোপ আমেরিকায় বক্সিং ডে পালিত হচ্ছে। মেহমান আর গ্যাস্টের ফাঁকে ফোনে আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষণা শুনলাম। তোমার নামটা আমার কানে এসে বাজলো। কাদের ভাই রিপিট করেই বললেন, সে এবার নতুন এসেছে। সে আমাদের ছাত্রলীগের নাদেল। সেই কাদের ভাই মনে পড়ে। সম্ভবত স্কুলে পড়ি তখন কোন এক হরতালের দিনে মুক্তিদের বাড়ির উল্টো মাঠে আম গাছের নীচে মাইক লাগিয়ে একটা সংগঠন করলাম ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’। তোমার বাবা পরদিন আমাকে বললেন স্মৃতি পরিষদ করেছ ভাল কথা। জানো বঙ্গবন্ধু কত বড়। নজরুল ভাইকে বললাম সোলেমান হলে একটা মিটিং করব। কারে বলা যায়? নজরুল ভাই বললেন, কাদের ভাইরে বলে দিচ্ছি ফোনে। তখনকার দিনে ট্রাঙ্ককল। কাদের ভাই লক্কড় ঝক্কর সুরমা মেইলে উঠলেন। রাতে ঘুমিয়ে পরের দিন সিলেট।

আমরা ফজরে গেলাম। সুরমা মেইল আর আসে না। এগারোটার দিকে যখন সোলেমান হলে চেয়ার সাজাচ্ছি তখন একটি রিকশায় করে একা কাদের ভাই সোলেমান হলে আমাদের নাম ধরে ডাকলেন। এই কাদের ভাই আবার তোমার নাম ডেকেছেন। টাইমস রিপিট। যে কথা বলতে চেয়েছিলাম আজ এতো বছর পরে তুমি আজ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এটা তোমার পাওনা বলছি না বলছি কর্ম। ঐ যে তুমি শুরু করেছ তাঁর ফলাফল আর নেত্রীর মুল্যয়ন। কত কিছুই তো আমরা করলাম। স্কুল ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, স্মৃতি একাত্তর, পাঁজর, গানের ক্যাসেট– হৃদয়ে আমার মুজিব, রেড ক্রস, নজরুল একাডেমী, শহীদ মিনার, সাইক্লোন, খেলাঘর, শুভেচ্ছা কত কিছু। হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রহ। তোমার আমার আমাদের কত প্রাণান্ত চেষ্টা। মনে আছে শামিম ভাইয়ের বাসায় বঙ্গবন্ধুর ক্রেচ করা একটি বিশাল ছবি ছিল।

মিছিলের সামনে আমি আর তুমি ছবিটা ধরতাম। কখনো কোন শোক দিবসে আমি কালো পতাকা ধরতাম আর তুমি ধরতে জাতীয় পতাকা সেই পতাকাই আজ তোমার হাতে। তোমার পতাকা যারে দাও তাঁরে বহিবারে দাও শক্তি। বিশ্বাস করো তোমার নাম প্রকাশের সাথে সাথে সমগ্র সিলেট জুড়ে এবং সিলেট অধ্যুষিত পরবাসে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি এই উচ্ছ্বাস টা দেখেছিলাম সুলতান ভাই যখন ছাত্রলীগের ভিপি হলেন তখন। এই স্বস্তি শুধু তোমার দলের মানুষের মাঝে নয় যারা দল করে না তাঁরাও উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন এটাই তোমার আমার পাওনা। বলেছিলাম না আমাদের সাত ভাই চম্পা আমাদের বোন আমাদের নেত্রী মানুষ চিনেন। তিনি আমাদের মনে রেখেছেন।

এজন্যই তুমি উঠে এসেছ। আর মানুষের দোয়া। মনে পড়ে আ ন ম শফিক ভাই অসুস্থ। তাঁকে দেখতে গেছি। আসার সময় তাঁর বাসার নীচে একটা যুবক তোমার পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেছে তুমি আঁতকে উঠেছো। ছেলেটার চোখে পানি। কি রে চাকুরী পেয়ে তো আমারে মিষ্টি খাওয়ালে না। এটাই ক্ষমতা। এটাই পাওয়ার। মানুষের দোয়া। মানুষের ভালবাসা। আরেকটা ব্যাপার রাজনীতি একটা সময় ছিলো আভিজাত্যের বিষয়। প্যাশন। ভাল পরিবারের মানুষগুলো রাজনীতিতে এসে নিঃস্ব হতো। তুমি সেই এপিসোডের শেষ সূর্য। ভদ্রতা শিষ্টাচার বিনয় মায়া এগুলো আবার ফিরে আসুক এই বাংলায় এই শঙ্খচিলের দেশে। বসন্তের সু বাতাস ফিরুক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়। জয় বাংলা। ইতি

তোমার এক অভাজন বন্ধু (সৈয়দ তাহমিম) লেচেষ্টার, ইউ কে।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন