আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আমি কেন বিশ্ববিদ্যালয় সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণে হওয়ার পক্ষে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-০২ ২১:৩১:৪৪




|| শহীদনূর আহমেদ ||

নিবন্ধের শুরুতেই কৃতজ্ঞতা জানাই পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয়কে। যার চেষ্টা আর প্রজ্ঞায় সুনামগঞ্জে সরকারের বড় বড় অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে বা চলমান রয়েছে, কিংবা আগামীতে আরো বাস্তবায়িত হবে। যা একদিন কল্পনার আঙ্গিনায় উঁকি দিতো তা আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এ ভাবা যায় কখনও। কেউ  কি মনে করেছিল সুনামগঞ্জে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয় হবে? কেউ কি ভেবেছিল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট হবে, হবে নার্সিং ইন্সটিটিউট, হবে পলি টেকনিক্যাল, বিটাক? কিছুদিন আগেও কি সুনামগঞ্জবাসী ভাব তো ছাতক থেকে রেল সুনামগঞ্জে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে, যা জেলার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। কেউ কি স্বপ্ন দেখিয়েছিল হাওরের বুকে উড়াল সেতুর কিংবা চার লেনের সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক।

এই সকল অজস্র স্বপ্নের রূপকার পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। জেলাবাসী অতীতে অনেক এমপি, মন্ত্রী দেখেছেন। হাওর জনপদের ভাগ্যের পরিবর্তন হল কই? অতীতে তাদের এমন কি দৃশ্যমান অর্জন ছিল যা দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কষ্টের লাঘব হয়েছে। কেউ কেউ তো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।  বাড়িগাড়ির মালিক হয়েছেন জনগনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী এম মান্নান। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছেন  স্বমহিমায়। কর্মনিষ্ঠার ফলেই প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে উন্নীত হয়েছেন সরকারের উচ্চমহলে। প্রতিমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী হয়ে জেলার জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন বড় বড় প্রকল্প। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সুনামগঞ্জ সামিল হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্তরে হচ্ছে ব্যাপক উন্নয়ন। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি  জেলাবাসীর জন্যে  রচিত হল বড় সুখবর। কেবিনেটে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। আমলাতন্ত্রের নাগপাশ কাটিয়ে শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে। এমন সংবাদের আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ হাওরবাসীর। সকল বিভেদ ভুলে স্বাগত জানাচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে।

এবার আসল কথায় আসি। অনুমোদন হওয়ার পরপরই আমার কিছু পরিচিত মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের কিছুজন। আমি তাদের মত শ্রদ্ধার সাথে রেখে আমার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করছি। তারা অত্যন্ত আবেগপ্রবন হয়ে আঞ্চলিকতার দৃষ্টিকোন দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করছে। স্থান নির্ধারণের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় শহরে হওয়ার ঢোল পিটাচ্ছেন, যা বাস্তবসম্মত নয়। সুনামগঞ্জ শহর ছোট আয়তনের একটি শহর। যার একপাশ কেটে দিয়েছে সুরমা নদী। কয়েক বছর আগেও যে জমিগুলো উন্মুক্ত ছিল আজ তাতে বসতি গড়ে উঠেছে। একসময় যে মাঠে পাঁচ বছর আগেও নিজে খেলাধুলা করেছি বর্তমানে সেই স্থানে প্রতিযোগিতা দিয়ে বহুতল ভবন হয়েছে। মানুষের চাহিদার এক পর্যায়ে ছোট্ট এই শহরে স্থান সংকুলান হবে না। শহরে ব্যাপ্তি হবে সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত দিরাই রাস্তা পর্যন্ত। কেউ বলছেন আব্দুজ জহির সেতুর ওপারে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্যে। ইতোমধ্যেই ঐ পারে উপশহরের জন্য জমি অধিকরণ করা হয়েছে। এই স্থানটি জেলার কর্ণার। দুয়েকটি উপজেলা ছাড়া বাকি উপজেলাগুলো জন্য উল্টো। তাছাড়া শহরের কাছাকাছি জাউয়ার হাওরে কিছু জমি থাকলেও তা শহরের ১ কিলোমিটারের ভেতরে হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশাল আয়তনের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়া শহরে জন্য মঙ্গলজনক হবে না। হলে নানা সমস্যার ভুক্তভোগী হতে হবে শহরবাসীকে। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতেই গরম হতে পারে শহর। হতে পারে আন্দোলন  সংগ্রাম। স্থবিরতা দেখা দিতে পারে জনজীবনে। আর রাজনৈতিক ইস্যুতো আছেই। এছাড়াও ট্রাফিকজ্যাম, আবাসনসহ একাধিক সমস্যার কথা নাই-বা বললাম।

কাজেই সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শহরের বাইরে  হওয়ার পক্ষে আমি। শহরের সম্মুখদ্বার আবহমান কাল থেকে  দক্ষিণমূখী। তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। সভ্যতার ক্রমবিকাশে উন্নত হচ্ছে জেলার দক্ষিণাংশ। যা ইতোপূর্বে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নামে। আর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চল। যা জেলা সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর উপজেলার জন্য সবচেয়ে সুবিধা। যোগাযোগের সংযোগস্থল হচ্ছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ। এসকল দিক বিবেচনায় সুনামগঞ্জ  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হোক জেলার প্রবেশ দাঁড় দক্ষিণে। এটি কেবল আমার ব্যক্তিগত মত।

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের মধ্য দিয়ে জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হোক। জয় হোক সুনামগঞ্জের।

লেখক: সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন