আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শরীর ও মন ভালো রাখার অন্যতম মাধ্যম 'দৌঁড়'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-০৪ ১০:১৯:৫৬

মভি সূত্রধর :: সেই ছোট্ট বেলা থেকে নিজের মত করে নিজেকে গড়ে তুলার তীব্র প্রবণতা কাজ করতো নিজের মধ্যে। বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারী হিসেবে কত ধরণের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে হয়! তা হাজার বছরের ইতিহাস থেকে আজ অবধি লক্ষ করলে বুঝা সম্ভব। তাই সর্বদাই আমার প্রচেষ্টা থাকতো নারীর পদবী নিয়ে এই সমাজে আমাকে একজন মানুষ হয়ে উঠতেই হবে।
 
জীবনে যাই কিছুর করার উদ্দেশ্যে থাকুক না কেনো সর্ব প্রথম শরীর ও মন ভালো রাখা চাই। তাই শরীর ও মন ঠিকঠাক রাখতে আমি শরীর চর্চার মাধ্যমটি প্রথমে বেচে নেই।

শুরু করি যুদ্ধের প্রথম ধাপ প্রতিদিন
ভোর ৫ টায় এক গ্লাস জল খেয়ে দেড় মাইল পথ হেঁটে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে অন্যান্য রানার্সদের সাথে ৫মিনিট ওয়ার্মআপ করি শরীর গরম হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপর দৌঁড়াতে যাই।
আমার এখন অবধি ২৬ মিনিটে ৫ কিলোমিটার দৌঁড়ানোর রেকর্ড আছে সিলেট বিভাগে।

যেহেতু, একটি মফস্বল শহরে আমার বেড়ে উঠা তাই প্রতিদিন দৌঁড়াতে বের হওয়ার জন্য পরিবারের দিক থেকে তেমন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে হয়েছে সমাজের কত ধরণের কুটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি! শুনতে হয়েছে কত রকমের অমার্জিত কথাবার্তা!  তারপরও আমি থেমে যাইনি। কারণ আমি বিশ্বাস করি নিজের মত করে বাঁচতে হলে, নিজের লক্ষে নিজের মত করে পৌঁছাতে হলে অনেক বাঁধা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি'কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবে একজন নিবেদিত মানুষ পেয়েছিলাম কমল কৃষ্ণা রায় (দাদা)  যিনি আমাকে সর্বদা সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এখনো দিচ্ছেন। আশা রাখি ভবিষ্যৎতেও উনার দেওয়া সাহস ও অনুপ্রেরণা অব্যহত থাকবে।        

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সাফল্যের রমরমা গল্প শুনতে সবাই উদ্বিগ্ন কিন্তু ছিটকে গেলে কেউ খবরও নিতে চায় না! তাই জীবনে যতই ঝড়-তুফান আসুক না কেনো সেগুলো'কে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। যখন ভালো কিছু একটা অর্জন করেছি তখন পরিবার আর আগের মত তেমন কিছু বলে না। বরং আমার বাবা আমাকে আরো উৎসাহ দিচ্ছেন, আমার দিদি, ছোট ভাই, বোনের জামাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
কোন জায়গায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার আগে মায়ের মনে খুব ভয়ের ছাপ থাকে তবে উনার একটি বিশ্বাসও কাজ করতো আমার উপর। সেটিও আমাকে অনেক সাহস যোগাত কোন অংশগ্রহনে যাওয়ার আগে মাকে জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে যেতে হয় তিনিও আদর করেন। এটা হলো আমার মায়ের আর্শিবাদ।

শরীর চর্চার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দৌঁড়। যার ফলে এনডরফিন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

বর্তমান যুব সমাজকে এখন নানাভাবে হতাশাগ্রস্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত হতে দেখা যায় স্বচক্ষে! এর কারণ মূলত হাতে হাতে মুঠোফোন বা স্মার্টফোন নামক আধুনিক ডিভাইস! যার ফলে মানসিক ও শাররিক ভারসাম্য অনেকটাই লুপ পায়।

শরীর সুস্থ রাখতে দৌঁড় এক দারুণ উপকারী ব্যায়াম। দৌঁড়ানোর ফলে প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হ্রদপিন্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই সাধারণ অভ্যাস।
যাদের সারাদিনের একটা বড় সময় বসে কাজ করতে হয় বা শারীরিক পরিশ্রম কম হয়ে থাকে তাদের জন্য দৌঁড়ানোটা অত্যন্ত উপকারী।

আপনারা খুব ভোরে এক ঘন্টা বা আধা ঘন্টার মতো সময় বের করে নিতে পারেন। দৌঁড়ালে শরীরের প্রতিটি পেশী সচল থাকে। মন ভালো রাখার ক্ষেত্রে মানসিক চাপ দূর করার সবচাইতে কার্যকরী উপায় হলো পরিশ্রমের মাধ্যমে ঘাম জড়ানো। আর তার সহজ উপায় একমাত্র দৌঁড়। তাই এক্ষত্রে দৌঁড়ও শরীরচর্চার অন্যতম একটি আদর্শ।

এখনকার প্রজন্মদের শরীরচর্চার মাধ্যমটি কেড়ে নিয়েছে মোবাইল ডিভাইসের নানা রকম গেইম। তাই অভিভাবকদের উচিত পড়াশুনার পাশাপাশি বাচ্চাদের খেলাধুলার ও শরীরচর্চায় মনোনিবেশ করা।

নিয়মিত দৌঁড়ান, নিজের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দৌঁড়ান। অন্যকে উৎসাহিত করুন। দৌঁড়ানোর জন্য আলাদা করে কোন মাঠের প্রয়োজন নেই। নিজের পছন্দ মতো জায়গা বেছে নিন দৌঁড়ানোর জন্য।

উল্লেখ্য, ১৫ নভেম্বর ২০১৯, সিলেট মিনি ম্যারাথন আয়োজনে অংশগ্রহণ করি সেখানে ১০ কিলোমিটার দৌঁড়ানোতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি, যেখানে আমার সময় লেগেছে ৬৯মিনিট ২৯ সেকেন্ড।

তারপর ২২ নভেম্বর ২০১৯, মৌলভীবাজার হাফ ম্যারাথন আয়োজনে অংশগ্রহণ করি
সেখানে ৭:৫০ কিলোমিটারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। যেখানে সময় লেগেছে ৪৫মিনিট ০৯ সেকেন্ড।

আমার এই ক্ষুদ্র অর্জনে যখন আত্নীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব ছোট ভাইবোন গুলো অনেক খুশি হয় গর্ববোধ করে তখন মনটা ভরে যায় এবং আমার পরিশ্রমটুকুও সার্থকতা পায়, অনেক দায়িত্ব বেড়ে যায় এই ভেবে যে আমাকে আগামীতে আরো ভালো কিছু করতেই হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৪ জানুয়ারী ২০২০/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন