Sylhet View 24 PRINT

ওয়াজ, পু‌জা মিথ আর মিথ্যার রাজনীতি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৫ ১১:৩২:৩৩

মুনজের আহমদ চৌধুরী :: ওয়া‌জ মাহ‌ফি‌লের নামে অ‌নেক ক্ষে‌ত্রে বিভ্রা‌ন্তি আর বি‌দ্বেষ ছড়া‌নো হ‌চ্ছে। সবার কথা বল‌ছি না। কিছু কিছু বক্তা প্রকাশ্য ওয়া‌জের মাহ‌ফি‌লে অন্য বক্তা‌কে ভুল প্রমান করার জন্য, নি‌জের পা‌ন্ডিত্য জা‌হির করা আর বাজার ধ‌রার জন্য অন্য বক্তাকে কা‌ফির বল‌ছেন,‌ অ‌ন্যের বক্তব্য‌কে ভুল প্রমান করার জন্য প‌বিত্র ধর্মের,হা‌দিসের অপব্যাখ্যা কর‌ছেন। একশ বছ‌রের বে‌শি বয়স্ক একজন বক্তা তার বক্ত‌ব্যের অ‌র্ধেক জায়গা জু‌ড়ে বল‌ছেন, কিভা‌বে হে‌লিকাপ্টারকে কিভা‌বে তি‌নি রিক্সার মত ওয়াজ মাহ‌ফি‌লে অাসা-যাওয়ার জন্য ব্যবহার ক‌রেন। কী দা‌ম্ভিকতা,আত্বপ্রচার! প‌বিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বার বার দা‌ম্ভিকতা,অহংকার‌কে প‌রিত্যাগ করার জন্য ব‌লে‌ছেন। অথচ মাহ‌ফি‌লগু‌লো‌তে বে‌শিরভাগ বক্তার বক্ত‌ব্যের মুল বিষয় জু‌ড়ে থা‌কে,অা‌মি এই,আমার মাহ‌ফি‌লে এত লক্ষ দর্শক হয়,অমুক বক্তা এই সে‌দিনও আমার হাত ধরে কাদঁত...হাত মেলাবার জন্য দা‌ড়ি‌য়ে থাকত,এমত সব আমিত্ব, আর অন্য‌কে ছোট দেখাবার ক্ষুদ্রত্ব।

অ‌নেক বক্তা স্যোশাল মি‌ডিয়ায় হিট বাড়া‌নোর জন্য মাহ‌ফি‌লের ম‌ঞ্চে,‌নেতা- অ‌ভি‌নেতা‌দের মত আচরন কর‌ছেন, কেউ কৌতু‌কের সু‌রে অশ্লীলতা ক‌র‌ছেন। রাজনী‌তি‌বিদ‌দের মত অ‌নে‌কে স্রেফ আলোচনায় আসার জন্য ধ‌র্মের মত স্পর্শকাতর বিষয় নি‌য়ে উ‌দ্দেশ্যমুলকভা‌বে চটুল কথাবার্তা বলে চ‌লে‌ছেন।

একজন মানুষ  হিসে‌বে, বিশ্বাসী মুসলমান হি‌সে‌বে ইসলাম সম্প‌র্কে জানবার আগ্রহ আমার প্রবল। ইউ‌টিউব আর ফেসবু‌কের ভি‌ডিও অপশন এখন ওয়া‌জ মাহ‌ফি‌লের বক্ত‌ব্যে একাকার। কিন্তু, একই বিষ‌য়ে একেক বক্তা একেক রকম বক্তব্য দি‌চ্ছেন। যা অ‌নেক ক্ষে‌ত্রে পরস্পর‌ বি‌রোধী। এ‌তে ক‌রে আমরা যারা কম জানা মানুষ, তারা বিভ্রান্ত হ‌চ্ছি। সমা‌জে ছড়া‌চ্ছে ভ্রা‌ন্তি।

ধর্ম আর ধ‌র্মের অনুশাসন‌কে নি‌জের মত ব্যাখা আপ‌নি কর‌তেই পা‌রেন। কিন্তু আপনার ব্যাখ্যায় যেন আর একজন বিশ্বাসী মানুষ‌কে আঘাত না ক‌রে,তার বিশ্বা‌সের জায়গাটা আক্রান্ত না হয়,‌সে‌টি নিশ্চিত করার দা‌য়িত্বও আপনার। 

দুই.
স্বরস্বতী পুজার দি‌নে ঢাকার দুই সি‌টি ক‌র্পো‌রেশ‌নের ভোটগ্রহ‌নের দিন ধার্য্য করে‌ছে নির্বাচন ক‌মিশন। এ নি‌য়ে ই‌সি মুখপা‌ত্রের সর্ব‌শেষ বক্তব্য নি‌য়ে একদল সমা‌লোচক বিদ্রুপ ক‌রে বল‌ছেন, ভোট তো রা‌তে হ‌য়ে যাবার সংস্কৃ‌তি‌তে আমরা বাস কর‌ছি, তাই দি‌নে পু‌জো ঠিকঠাকই হবে! অনেক হিন্দু্ ধর্মাবলম্বী আক্ষেপ আর বেদনা নি‌য়ে বল‌ছেন, সংখ্যালঘু‌দের জন্য ভোট তো ‌পেছা‌নো যা‌বে না,বরং পু‌জোই না হয় পি‌ছি‌য়ে দেয়া হোক। আমার কথা‌টি হল, পু‌জোর দিন‌টি‌তেই কেন ভোট হ‌তে হ‌বে? স্বরস্বতী পুজা শিক্ষা প্র‌তিষ্টানগু‌লো‌তে উদযা‌পিত হয়। সেখা‌নে আবার ভো‌টের দি‌নে ভোট‌কেন্দ্র হি‌সে‌বে কিভা‌বে ব্যবহৃত হবে?

মু‌ক্তিযু‌দ্ধের মাধ্য‌মে অর্জন করা আমা‌দের সং‌বিধা‌ন দে‌শের সব নাগ‌রিকের নিজ নিজ ধর্ম পাল‌নের অ‌ধিকার ও স্বাধীনতা দি‌য়ে‌ছে। কোন ধর্ম‌কে বা ধর্মের অপব্যাখ‌্যা-কটাক্ষ করা, ধর্ম‌ বিশ্বা‌সের জায়গাটুকু নি‌য়ে  বিভ্রা‌ন্তি ছড়া‌নোর মত অসততা সমাজে বিভ‌ক্তি ছড়া‌চ্ছে। মানু‌ষে মানু‌ষে ছড়া‌চ্ছে বি‌দ্বেষ। পু‌জোর দি‌নে ভো‌টের তা‌রিখ রে‌খে ই‌সি জনগন‌কে কি বার্তা দি‌লেন?

‌তিন.
‌সামা‌জিক মাধ্যমগু‌লো‌তে আমরা সবাই এক একজন সর্বরোগ বিশেষজ্ঞ হি‌সেবে মতামত দি‌চ্ছি। তাৎক্ষ‌নিকতার স্রোতে গা ভাসাতে গি‌য়ে ক্রিয়ার আগেই প্র‌তিক্রিয়া ছড়া‌নোর মহামা‌রি সর্বত্র।খোদ ধ‌র্ষনের শিকার হওয়া নারী যা‌কে ধর্ষক হি‌সে‌বে সনাক্ত কর‌ছেন,‌ সেটা নি‌য়েও আমরা বিভ্রা‌ন্তি ছড়া‌চ্ছি।

চেতনার মহাজনী ব্যবসায়ীরা ‌নিজ নিজ মোকা‌মের উৎপা‌দিত চেতনা ব্যবসার বেসা‌তি চালা‌চ্ছেন সর্বত্র। একদল মি‌থ্যে‌কে মিথ বানা‌তে চাই‌ছে। আরেকদল ছড়া‌চ্ছে গুজব। এক অদ্ভুত রক‌মের আধা‌ঁর গ্রাস কর‌ছে সময়টা‌কে।

‌শিল্প, সংস্কৃ‌তি, সাংবা‌দিকতা এবং  রাজনী‌তি, যা‌দের যেখা‌নে থাকবার কথা তারা সেখা‌নে নেই। যোগ্যতার পা‌ল্টে দেয়া সংজ্ঞায়‌নে অ‌পেক্ষাকৃত যোগ্যতর মানুষরা টিক‌তে পার‌ছেন না হাই‌ব্রিড‌দের দাপটে।

এরশাদ‌কে হটাবার পর সরকারগু‌লো সর্বক্ষে‌ত্রে যে নির্লজ্জ দলীয়করনের সংস্কৃতি শুরু ক‌রে‌ছিল,তা ক্র‌মে ক্র‌মে গ্রাস কর‌ছে সব‌কিছু‌কে।

প্র‌তিবাদ দু‌রে থাক, গঠনমুলক সমা‌লোচনা কর‌তেও ভয় দেখা‌নোর সংস্কৃ‌তি‌তে সম‌য়ের বাস। সর্ব‌ক্ষে‌ত্রে অসহিষ্ণুতা, বি‌ভাজন আর বিচারহীনতার উদাহরন। অথচ ন্যায়,সা‌ম্য ছিল মু‌ক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা।
যে অসাম্প্রদা‌য়িক, পরম‌তের প্র‌তি শ্রদ্ধাশীল

বাংলা‌দে‌শের সপ্ন লালন ক‌রি বু‌কের ভেত‌রে, সেই স‌প্নের বাংলা‌দেশ সন্তান‌কে দে‌খি‌য়ে যে‌তে পারব,‌সে আশাটুকু করবার ভরসা না পাবার দায় প্রধানত রাজনী‌তির। রাজনী‌তি যে‌হেতু সব‌কিছু‌কে নিয়ন্ত্রন বা প্রভা‌বিত করে,‌সে কার‌নে রাজনী‌তি এবং রাজনী‌তি‌বিদ‌দের গুনগত অর্থবহ প‌রিবর্তন দরকার সবার আগে।

রাজনী‌তিবিদরা যে সমাজে ভো‌টের আগে শ্র‌মিকের সা‌থে মা‌টি কাটার,দোকা‌নে ঢু‌কে চা বানি‌য়ে ভোটার‌কে খাওয়াবার,‌রিক্সা চালাবার অ‌ভিনয়ের মত চটুুল কী‌র্তিকলাপ ক‌রেন,‌সেখা‌নে সমাজের অন্য সেক্টরগু‌লিও রাতারা‌তি পা‌ল্টে যা‌বে, সে আশা নেহা‌য়েৎ আত্মপ্রবঞ্চনা। বরঞ্চ অন্য ক্ষেত্রগু‌লিও রাজনী‌তির নী‌তিহীনতার নে‌তিবাচকতায় দারুনভা‌বে আক্রান্ত হয়‌।

রাজনী‌তি যখন জনগন‌কে বিভ্রান্ত কর‌বে না, তখন ধর্ম নি‌য়ে সমা‌জে কেউ বিভ্রা‌ন্তি ছড়াবার সাহস পা‌বে না। রাজনী‌তির নী‌তি‌তে ফির‌বার প্রতীক্ষায় পথ চে‌য়ে থা‌কি।

লেখক- লন্ড‌নে কর্মরত সাংবা‌দিক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.