আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিএসফের গুলিতে সীমান্তের কাঁটাতারে বাঙ্গলী ঝুলছে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-২৫ ০৯:২০:১৫

শহীদনূর আহমেদ :: অন্যদের নাগরিককে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করার নজির কেবল ভারতেরই আছে। একটি নর খাদক চরম সাম্প্রদায়িক দেশ ভারত। যার রাষ্ট্রপ্রধান আমার কাছে অশ্রদ্ধার পাত্র। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত। তাই সীমান্তের মানুষ বৈধ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করতেই পারে। তাই বলে বিচার বর্হিত হত্যা। তাঁর দেশে অনুপ্রবেশ করলে বা কোন অবৈধ কাজ সংঘটিত করতে চাইলে সে ধরে নিয়ে যেথে পারে। পতাকা বৈঠকে যথোপযুক্ত কারণ দর্শীয়ে নাগরিককে ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশের বিজিবি। নতুবা ভারত সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীর শাস্তি হবে।

তাহলে কেনও এই হতাজ্ঞ। প্রতিদিন কেন বিএসফের গুলিতে কারনে অকারনে মরতে হচ্ছে ফেলানীর মতো হাজারো অসহায় বাঙ্গালীকে।  যার একটার বিচারও কি এদেশের মানুষ পেয়েছে

গণমাধ্যমে আসা রিপোর্ট অনুযায়ি গত ২০ দিনে সীমান্তে বিএসফের গুলিতে প্রাণ গেছে অন্তত ১৭ নিরহ বাঙ্গালীর। গণমাধ্যমে আসে নাই এমন হত্যাকান্ডত আছেই। যদি মাস,বছর কিংবা যুগের হিসেব করি তবে কত ফেলানীর স্বপন্ন বিএসফের গুলিতে সীমান্তের তার কাঁটায় ঝুলছে তার ইয়ত্তা নেই। কত তরুণের মস্তক দানবদের রাইফেলের গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে রক্ত স্রোত গড়িয়ে এসেছে এই স্বাধীন দেশে ।

স্বাধীনতার কথা আসতেই স্মরণ হল মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশি ভারত সরকারের অবিস্মরণীয় অবদান আর ত্যাগের কথা। যুদ্ধাবস্থায় দেশের কোটি অসহায় মানুষকে সীমান্তের শরনার্থী শিবিরে স্থান দেয়া, তাদের আহারের সংস্থান করা, যুদ্ধ সমরে সরাসরি সহযোগিতা করাসহ অনন্য দৃষ্টান্ত। যাদের সমর্থন আর সাহসে রক্ত গঙ্গার বিনিময়ে নয় মাসেই অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতা। এর জন্যে ভারতের  কাছে চির ঋণী। তাই আজও কৃতজ্ঞচিত্তে এ জাতি স্মরণ করে ইন্দিরা গান্দিসহ ভারতকে।তবে এর বিনিময়েে কি কম দিয়েছি। পাকিস্তান সৈন্যরা নীতিগতভাবে বাংলাদেশের সেনা প্রধান জেনারেল ওসমানির কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা থাকলেও কারসাজি করে আন্তর্জাতিকভাবে কর্তৃত্ব নেয়া হল। সমর অস্ত্র গোলাবারুদ কে কত পেল তা ইতিহাস। বন্ধু রাষ্ট্রের  নামে স্বাধীনতার পর থেকে কম শোষণ করেনি ভারত । অর্থনৈতিক, ভোগৌলিক, রাজনৈতিকভাবে পায়দা লুটার পরিমাণ এক পাকিস্তানী আমালের ন্যায়। বর্তমান বাস্তবতায় এদেশের ব্যবসা খাতে বড় অংশ ভারতের দখলে।  তাঁর দেশের মাদকদ্রব্য সীমান্ত দিয়ে প্রাচার করে মাদকসেবীদের আগ্রাসনে গ্রাস করছে এদেশের তুরুণ সমাজকে। রাজনৈতিকভাবে  আন্তর্জাতিক চুক্তি করে গ্যাস, পানিসহ বিভিন্ন খাতে পায়দা লুটছে ভারত। বিনিময়ে কি পাচ্ছি আমারা। সম্প্রতি পেঁয়াজটা পর্যন্ত দেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে এক লাফে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজের দাম।

বন্ধু দেশ বলে গলা ফাটাই আমরা অথচ জাতিসংঘেে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ভারত। আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্য আর উন্নতি দেখে এনআরসির মতো নানা ইস্যু তৈয়ার করে উন্নয়ন ব্যহত করার নীল নকশা আর্টছে মোদি সরকার। এবার নাকি শত বছরের বসতি গড়া মুসলিম সম্প্রাদায়কে বের  করে দিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্রয় দিবে মোদি। সস্প্রতি মসজিদের মাইকে আযান বন্ধে রায় দিয়েছে ভারতের আদালত। যার প্রভাব পড়েছে আমার বাংলাদেশে।  শত বছরের হিন্দু মুসলিমের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল  করা ষড়যন্ত্র করছে চরম সাম্প্রাদিয়ক এ ভারত সরকার।

এবার আসি আগের কথায়,  অভিভাসনের আশায় নদী, সাগর,  বন,জঙ্গল পাড়ি দিয়ে তরুস্ক, গ্রীস, ফান্স, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমানা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ অনুপ্রবেশ করছে। কই গুলি করে হত্যা করার দৃষ্টান্তত কোথাও দেখিনি। বরং সাগরে ডুবন্ত ট্রলারকে উদ্ধার করে রিফিউজি ক্যাম্পে অভিবাসী লোকদের আস্রয় দিচ্ছে এই সকল দেশ।

আর আমাদের প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্র সীমান্তে প্রতিদিন পাখির মতো করে বাঙালী মারছে। কি করতে পারছি আমরা। আমরা কেবল ভারতকে এক তরফা বন্ধু হিসেবে দাবি করলেও তার প্রতিদান কতটুক পাচ্ছি। আমার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কি কখনও এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জবাব বা প্রতিকার চেয়েছেন। আদৌ কি এই সক্ষমতা আমাদের আছে।

তাহলে কি এভাবেই সীমান্তে বিএসফের গুলিতে কাঁটাতারে ফেলীনির মতো ঝুলবে লাশ। খালি হবে মায়ের বুক। বিধবা হবে আমার বোন। পিতা হারা হবে অবুঝ শিশু। এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নাই। জানি না আপনাদের কাছে আছে কি?

লেখক- সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী। 

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন