আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ওয়াজ মাহফিলের নামে ভন্ডামী, গীবত, ইসলামের অপব্যাখা বন্ধ হোক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৭ ১১:২১:৪৫

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: ওয়াজ অর্থ উপদেশ, নসিহত, বক্তব্য। যিনি ওয়াজ করেন তাকে ওয়ায়েজ বা বক্তা বলে। বর্তমানে নানা নামে ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে। যেমন- তাফসীর, মীলাদ ,সীরাত, বার্ষিক ওয়াজ, ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ইত্যাদি। জুমআর নামাজের পূর্বে খতিব সাহেব কর্তৃক আলোচনা ওয়াজরুপে গণ্য হয়।

আরাফার মাঠে হাজীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খুতবা ওয়াজ হিসেবে গণ্য। ওয়াজ বলতে জিকির, খুতবা, বয়ান, ইত্যাদি বুঝায়। ইসলাম যে পরিপূর্ণ জীবন বিধান সেটি মানুষকে বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে সেদিকে আহবান করার নাম ওয়াজ। ওয়াজের মাধ্যমে মানুষ আলোর দিশা পায়। প্রকৃত সত্যের পথ খুজে পায়। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইসলাম সম্পর্কে যারা অধিক জ্ঞান অর্জন করে থাকেন তারা সাধারণত ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিয়ে থাকেন।আমাদের দেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্য বক্তা বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বর্তমানে আমাদের এই বাংলাদেশে যেন প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন বক্তার বড় অভাব।

এখন বিভিন্ন বক্তা ইসলামী তথা কোরআন, হাদিসের কথা বলার পরিবর্তে একে অন্যের দোষ খুজতে ব্যস্ত। জিকিরের নামে ভন্ডামী, ওয়াজ মাহফিলে নসিহতের পরিবর্তে গানবাজনা, বিড়ি সিগারেট খাওয়ার স্টাইল দেখানো, অন্যের গিবত করতে ব্যস্ত। পবিত্র কোরআন, হাদিসের আয়াত বানিয়ে বলা, কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করা, একে অন্যকে কাফির, বেদাতী, ইত্যাদি বলতে ব্যস্ত। কিন্তু এসব কেন? এর থেকে সাধারণ মানুষ কি শিখছে?

এতে তো মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বক্তা মহান আল্লাহপাক, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী গণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীদের শানে বেয়াদবীমূলক কর্তাবার্তা বলছে। তাদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে সাধারণ লোকদের ধোকা দিচ্ছে। যারা এসব বলছে তাদের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন দল উপদল সৃষ্টি হচ্ছে। এতে হানাহানি, মারামারির পরিবেশ সৃষ্ঠি হচ্ছে।অনেক জায়গায় ওয়াজ মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারির মত পরিবেশ সৃষ্ঠি হচ্ছে। এটি কি আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম শিক্ষা দেয়? উত্তর হবে অবশ্যই না।

যাদের এসব মিথ্যা কথা বলার জন্য, ইসলামের অপব্যাখার জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হচ্ছে তারা কি এর দ্বায়ভার এড়াতে পারবে? তাহলে কেন ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের নামে অপব্যাখা? এর দ্বায়ভার কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকরাও এড়াতে পারবেননা। এর কারণ হচ্ছে তারা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনের সময় বক্তা পছন্দ করার চিন্তা করেন এমন বক্তার আনার যার মাধ্যমে ওয়াজে জনসমাগম বেশী হয়। জনসমাগম বেশী হলে লোকে প্রশংসা করবে অমুক মাহফিলে বেশী জনসমাগম হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যারা ওয়াজের নামে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে তাদের মাহফিলে বেশী জনসমাগম হয়। এর কারণ হচ্ছে এসব বক্তারা ইলিম আমলের কথা না বলে ওয়াজে কৌতুক বলে, সিনেমার গান গায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনকে ক্রিকেট খেলার সাথে তুলনা করে। ঘ

রের কাছে ইসলামের অধিক জ্ঞান সম্পন্ন বক্তাকে দাওয়াত না দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিমানের টিকেট, হেলিকপ্টার বাড়া দিয়ে এসব বক্তাদের আনে। ওয়াজ মাহফিলের প্রকৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে এসব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনের ফলে সাধারণ মানুষ হেদায়তের পরিবর্তে বিভ্রান্ত হয় বেশী। এসব থেকে বের হওয়া আমাদের সাধারণ মুসলমানদের জরুরী নয়কি? বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক ও বক্তাদের এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরী নয়কি? যারা মাহফিল আয়োজক কমিটি আছেন তারা বিতর্কিত বক্তাদের পরিহার করে প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন বক্তাদের নিজেদের মাহফিলে দাওয়াত দেওয়া জরুরী। এছাড়া অনেক বক্তা আছেন যারা হাজার হাজার টাকা কন্টাক করে বিভিন্ন মাহফিল যান কিংবা হাজার হাজার টাকা মাহফিল কমিটির কাছ থেকে নিয়ে মাহফিলে উপস্থিত হননা আবার টাকাও ফিরত দেননা তাদেরকে বয়কট করা জরুরী।

যারা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে নসিহত নামে ভন্ডামী করেন, পরের নামে গীবত, ইসলামের অপব্যাখা করেন কথায় কথায় অন্য লোকদের কাফির, বেদাতী বলে থাকেন তাদের সংশোধন হওয়া জরুরী।তা না হলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে ইসলামের অপব্যাখা শিখবে। এর দ্বায়ভার মাহফিল আয়োজক কমিটি ও বক্তাদের নিতে হবে। সরকার তথা আইন শৃংখলা বাহিনীর এদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ওয়াজ মাহফিলের নামে যারা ভন্ডামী, গীবত, মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ, ইসলামের অপব্যাখা করে তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক: কলামিষ্ট, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন