আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

‘পাপিয়ার মুক্তি চাই’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৪ ২০:৪৮:০৮

দেলোয়ার হোসেন ফারুক :: পাপিয়া কে? তার রাজনৈতিক পদ-পদবি কী তা নিয়ে চলছে তুলোধোনা। কে তাকে নেতা বানালো তা নিয়েও চুলচেরা পর্যালোচনা থেমে নেই। অবশেষে গ্রেফতার হতে হলো; জেলে গেল পাপিয়া। পাপিয়া দৈনিক কত টাকা হোটেল ভাড়া দিল; কত বড় অনৈতিক কাজ করলো তাও আমরা জানলাম!

পুরো সমাজ পাপিয়াকে ছিছি করছে। শুধু জানতে পারলাম না হোটেলের ওই স্যুটে কাদের যাতায়াত ছিল! কিন্তু সত্যি বলতে কি জানেন, আমার কাছে পাপিয়া নির্দোষ!

সবাই পাপিয়াকে খুব আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বললেও বর্তমান প্রচলিত পরিস্থিতির কারণে আমি পাপিয়ার পক্ষে! পাপিয়া রাজনীতি করে, কর্মী চালাতে হয়; সংসারও করতে হয়! আর এসব করতে হলে টাকার দরকার!

আমি পাপিয়ার অবৈধ আয়কে সমর্থন করছি না কিন্তু কেন পাপিয়ারা এসব অপকর্ম করতে যায় তা বলার চেষ্টা করছি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় অথচ এই দলের নেতা-কর্মীদেরই আজকাল সৎ ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জায়গা একদমই কম!

বড় চেয়ারগুলোতে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেই পাত্তা দেয় না। আর পাপিয়া একটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাত্র!

বড় চেয়ার ওয়ালারা চান হয় বস্তা ভরা টাকা; না হয় সুন্দরী রমণীর ঝলকানো চেহারা!! কি বিশ্বাস হচ্ছে না? এমন বহু ভদ্র লোকদের আমিও চিনি। যাদের কাছে দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন দাম নাই। তারা চিনে উর্বশী!

গত দুই মাস আগে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি মন্ত্রণালয়ের একটি কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি ও দ্বিতীয় দরদাতাও হলেন আওয়ামীলীগের আরেক সমর্থক ব্যবসায়ী।

কিন্তু একই লটে তৃতীয় দরদাতা হলেন একজন উর্বশী। খাটি বাংলায় সুন্দরী ললনা। যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বিভিন্ন সময় তুলোধুনো করে সমালোচনা করেছেন অথচ শেষ পর্যন্ত কাজটি কিন্তু ওই জনৈক উর্বশীই পেয়েছেন!

এদেশে কথিত উর্বশীদের টার্গেট করে প্রজেক্ট হয় কিন্তু কখনো কি শুনেছেন দলীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের স্বাবলম্বী করার জন্য কোন প্রজেক্ট হয়েছে?

আমার জানা মতে, একজন মন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের এডিবি সভায় প্রকল্প পরিচালকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে প্রথমে বিএনপি-জামাতের লোকজনকে বাদ দিয়ে দিবেন।

এরপর দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যার কাগজপত্র আছে তাকে কাজ দিয়ে দিবেন। তখন ওই মন্ত্রণালয়ে কিছু দলীয় লোক কাজ পেয়েছিলও। এই রকম যদি সব মন্ত্রী হতেন তাহলে পাপিয়ারা অবৈধ পথে যেত না!

সরকারী কোন টেন্ডারে আওয়ামী ঘরানার কেউ সর্বনিম্ন দরদাতা হলে তখন তারা বলে কাগজ দুইটা কম আছে; এই সমস্যা তো সেই সমস্যা অর্থাৎ কাজ দেওয়া যাবে না।

গত মাসে সরকারী একটি সংস্থার নিয়োগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পরও চাকরি হয়নি। ছাত্রলীগের ওই ছোট বোনটির চোখের পানির কোন মূল্য দিতে পারিনি।

মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনসহ বহুবার ওই সংস্থার প্রধানের কাছে গিয়েছি কিন্তু মন গলেনি ওই কর্তার। অথচ এটাই ছিল তার শেষ সরকারী চাকরির ইন্টারভিউ।

জানি, এতে করে ওইসব কর্তাদের কিছুই হবে না বরং পদোন্নতি হবে। আর মহিউদ্দিন বা ওই বোনটির পক্ষে অন্য কেউ যদি ওই কর্তার শার্টের কলার ধরে দুইটা দেয় তখন আমাদের দলের লোকেরাই তাদের সন্ত্রাসী বানিয়ে দিবে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সরকারী প্রকল্পের শতকরা ৯৫ ভাগ প্রকল্প পরিচালক হচ্ছেন জামাত-বিএনপি সমর্থক। কিছু বড় চেয়ারের লোকজন এদের প্রকল্প পরিচালক বানায় কারণ তার কু-কর্ম করতে হলে এই ধরনের লোকই লাগবে।

আবার বড় চেয়ার থেকে ছোট চেয়ার সবাই বিএনপি-জামাতের লোকজন থেকে টাকা নিবে আবার কাজও তাদেরই দিবে; তারা আওয়ামীলীগ ঘরানার কাউকে দেখলেই বড় বড় নীতি কথা শোনাবে।

আর রাতের অন্ধকারে পাপিয়াদের কাছে গিয়ে সেই নীতি উড়ে যায় হুইস্কির বোতলে-মেতে উঠে আদিম খেলায়। তারা তখন ভুলে যায় দলীয় কমিটমেন্ট, জলাঞ্জলি দেয় নীতি আদর্শ। বিশ্বাস ঘাতকতা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্তা ও বিশ্বাসের সঙ্গে।

তাই আমি পাপিয়াকে দোষ দিচ্ছি না। আমি স্বজ্ঞান বশত পাপিয়ার মুক্তি চাই। নতুবা সেই হোটেল রুমে কারা গিয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন।

পাপিয়া যেসব অপকর্ম করেছে সেগুলোর বিচারও হওয়া উচিত কিন্তু যারা পাপিয়াকে এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে; এসব অপকর্ম করতে সহায়তা করেছে তাদেরও বিচার হওয়া দরকার।

পাপিয়াকে যারা পাপিয়া বানিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দল ও সরকার থেকে বের করতে না পারলে আরও বহু পাপিয়ার সৃষ্টি হবে!

দেলোয়ার হোসেন ফারুকের ফেসবুক স্ট্যাটাস

সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন