আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

করোনাভাইরাস এবং বাংলাদেশ: আমার ভাবনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২০ ১৯:০৮:৪০

অ্যাডভোকেট শাকী শাহ ফরিদী :: আমরা কতটাই না অসহায় প্রকৃতির কাছে-কোলাহলপ্রিয় জগতবাসী আজ কোলাহল এড়িয়ে আপন নীড়ে গা গুটিয়ে মহান রবের কৃপার আশায় দিনাতিপাত করছে। বুলেট-বোমার সামনেও আমরা সাহসের পরীক্ষা দেই আর আজ অদেখা অচেনা এক ভাইরাসের কাছে আমরা কুপোকাত, ধরাশায়ী- এ যেন প্রকৃতির খামখেয়ালি আর সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার প্রদর্শনী।

যদি ইহা মনুষ্যসৃষ্টও হয়, তবুও মহান রবের কাছে তার কুদরতি সাহায্য চাওয়া ছাড়া আপাতত আর কিছু করার আছে বলে মনে হয়না।

বাংলাদেশে এর বিস্তার মারাত্মক রুপ নিতে পারে। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা, কুদরতি শক্তির দ্বারা এর বিনাশ হউক সেই কামনা। সাথে ডাক্তার আর সরকারের বাতলে দেয়া নিয়মগুলি মেনে চলি আমরা, ভালো হবে৷ বুঝানোর কিছু নাই, নিজের ভালো সবাই বুঝি আমরা৷ বাকিটা আল্লাহর হাতে। সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।

বয়স্কদেরকে নিয়ে বেশি চিন্তা- আল্লাহ আমাদের আব্বা-আম্মাকে তোমার কুদরতি শক্তি দিয়ে শিফা দাও, হায়াত দাও, বিপদমুক্ত রাখো মাবুদ, আমীন।

Necessity knows no law- প্রয়োজন আইন মানে না, কথাটি দুইপক্ষই প্রয়োগ করবে হয়তো বাংলাদেশে (আমজনতা আর সরকার)।

এক, এদেশ কানাডা নয় যে সরকার একমাস সবার ভরণপোষণ দিতে পারবে, সে সাধ্য আমাদের নেই বরং আগামী কিছুদিন কিছু দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থদের কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যবানে বিব্রত হবার অপেক্ষায় থাকুন। এদেশে একটা বিরাট অংশের এখনো নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, পেটে ক্ষুধা নিয়ে আইন মানা যায়না, কেউ মানবেনা। অভাব দরজায় কড়া নাড়লে ভালোবাসা ভেন্টিলেটর দিয়ে ফাঁক পেলেও পালানোর পায়তারায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে, অতএব সরকারকে সহযোগিতা করে ভালোবাসা দেখানোর এত সময় বা ইচ্ছে এই জাতির নেই বা অভাবের তাড়ানায় তা সম্ভবও না। সো, মানুষজনকে ঘরে বসিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। অভাবে স্বভাব নষ্টের দেশে লকডাউন হলে কেউ চুড়ি পড়ে বাসায় বসে থাকবে না বরং ক্রমবর্ধমান অভাবের মারপ্যাঁচে আর মাস্ক পড়ার সুবিধায় মুখোশধারী চুর-ডাকাত বাড়বে, সাথে লাফ দিয়ে আকাশে উঠবে দ্রব্যমূল্য।

দুই, অনুরোধে ঢেঁকি গেলা জাতি না আমরা, বিদ্যায় কিংবা বুদ্ধিতে স্ব-অনুভূত বিশ্বমানের বা তারও উপরে হলেও আদতে "Common sense is not common to all" পর্যায়ে আমাদের জাতিগত জ্ঞানের সামষ্টিক পরিধি, সো এহেন অবস্থায় সরকারের আদেশ-নিষেধও কেউ মানবে বলে মনে হয়না উল্টো সরকারের গুষ্টি উদ্ধারে আটঘাট বেধে মাঠে নামবে।  এর কিছু নমুনা দেখুন- বিদেশ ফেরতরা এসেই এদিক ওদিক ঘুরতেছে, মানেনা শাসন আর বারণ- এক বিদেশি বিয়ে করেছেন কোয়েন্টারিন অবস্থা থেকে পালিয়ে অতঃপর আরো চার সাহসী যুবক-যুবতী তাদেরকে অনেক খুজে বের করে ধরেছেন, পুরো এলাকাবাসী সাহসী এই চারজনকে মাথায় তুলে মিছিল দিয়ে দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিয়ে গেছেন, সেথায় এক বিরাট জনসমাগম- সেখানে চলছে হাতধোয়া শেখানো, মাস্ক বিতরণ---এরকম চলছে, চলবে- আহা বাংলাদেশ।

বাচ্চাদের স্কুল ছুটি, এরকম ছুটি আর আসবেনা এই জনমে তাই বেকুবের জাত দল বেধে বেধে কক্সবাজার কিংবা এখানে-ওখানে ঘুরতে বেড়িয়েছে, কোচিং ব্যবসাও রমরমা। যেখানে আল্লাহর ঘর কাবা চত্বর সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে সেখানে আমরা গনজমায়েত করে দোয়া করে করোনা ঠেকাবো, শরীয়াহ আইনে চলা কয়েক দেশে আল্লাহর রাসুলের বিধান মেনে আজানে "হাইয়া আলাস সালাহ" এর পরিবর্তে "ঘরে নামাজ পরুন" বলা হচ্ছে আর আমরা এমন হলেতো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামব ইসলাম গেলো ইসলাম গেলো, সরকার নাস্তিক বলে বলে।

না গো-মূত্রে না তাবিজে, কিছুতেই কাজ হবেনা। মহান রবের কাছে মাফ চাই, দোয়া করি মাফ করো প্রভু, এ জাতিকে হেদায়াত নসিব করো মাবুদ। তুমি চাইলেই সৃষ্টির বিনাশ এক নিমিষেই সম্ভব, না চাইলে হাজার বছরেও হবেনা, মানুষের ক্ষমতা আর পারদর্শিতার সীমা দেখেছি এই ক'দিনে, মানুষের ক্ষমতার শেষটা তোমার শুরুর ধারেকাছেও না৷ সুতরাং, কুদরত দাও, উছিলা দাও যেন কেউ না কেউ এটার বিনাশের ম্যাজিক ক্যাপসুল আবিস্কার করে, তোমার সৃষ্টির মাঝেই করোনার দাওয়াই লুকায়িত আছে এ আমার বিশ্বাস, আমীন।

সরকারও আইন মেনে পরিস্থিতি কতটুকু সামাল দিতে পারবে জানিনা, ইংল্যান্ড-আমেরিকার মত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে। আর জনতা- আইন বা নিয়ম মেনে নেয়নি কোনোকালে, নিবেওনা। আমরা সকল কিছুতেই রাজনীতি টেনে আনব, আওয়ামী-বিএনপি কাঁদা ছোড়াছুড়ি নিয়েই থাকব, দুর্যোগ কিংবা মহামারী কোনো কিছুতেই আমরা আর এক হতে পারবনা, দ্বিধাবিভক্ত জাতি একে অন্যকে নিয়ে বিপদেও হাসি-তামাশা করব, ট্রল করব, আকাশচুম্বী সরকারি সাহায্য চাইব আর নিজে সমস্ত অনিয়ম করে বেড়াব, এইতো, যা আছে কপালে, চলছে, চলবে...

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির উদ্দেশ্যে প্রিয় বিটিভিতে এসে কিছু বলুন- না হলে বিটিভির খবরে করোনা আতংকে বাতাবি লেবুর চাষ ব্যাহত হওয়ার খবর চলতেই থাকবে। এইদেশের জনতার উপরে আল্লাহ আর মাটিতে আপনি, এসে বলুনঃ- মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়দের লাগামহীন কথা বলা মুখের লকডাউন জরুরি, পরে দেশ লকডাউন।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন