Sylhet View 24 PRINT

করোনা প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠন ‘পরিবর্তন’র উদ্যোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৫ ১১:৫০:২০

মিসবাহ আহমদ :: বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। যেখানে উন্নত দেশ করোনার প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। তাই এখন সরকার কি করছে বা করবে এসব আমাদের ভাবার বিষয় নয়। আমাদের প্রয়োজন আমাকে, আমার পরিবারকে এবং আমার এলাকাকে করোনা প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ এবং কাজ করা।

আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেকটা এলাকা/গ্রাম যদি তাদের নিজস্ব সামাজিক দায়-দায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এলাকা/গ্রাম থেকে ওয়ার্ড/ইউনিয়ন/শহর/উপজেলা/জেলা/বিভাগ সর্বোপরি সমগ্র বাংলাদেশে করোনা(কোভিড-১৯) প্রতিরোধ করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ ।

যুবসমাজকে মনে রাখতে হবে- অতীতে যারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দৃশ্যমান শক্তির সাথে লড়াই দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছে, সেই দেশকে অদৃশ্য শক্তি করোনা মুক্ত করতে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে আমাদের আরেকটি সামাজিক যুদ্ধ করতে হবে ।

সময় এসেছে এবার-মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়িয়ে নৈতিক দায়িত্ব পালন করার। এটা কারো জন্য করা নয়, এটা আপনার নিজের জন্য করা, নিজেকে বাঁচানো…

কিভাবে যুক্ত হবেন?
আপনি চাইলে যুক্ত হতে পারেন সংগঠনের সাথে। সেই সাথে প্রথমেই সংগঠন ‘পরিবর্তন’ এর একটি ফরম প্রদেয় তথ্য দিয়ে আপনাকে পূরণ করে নিতে হবে। এই কার্যক্রম হবে দ্বি-মুখী। অর্থ্যাৎ অনলাইন এবং অফলাইনে।

কার্যক্রম ১.
১. ৫-১০ জন অবজারভার দল গঠন।
২. ১০-১৫ জন অনলাইন স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন।
৩. ১০-১৫ জনঅফলাইন স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন,(পিপিই- পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট সাপোর্ট সহ)।
৪. এলাকায় বসবাসকারী ডাক্তারদের নাম ৩-৫ জনএবং মোবাইল নাম্বার তালিকাকরন (এলাকায় না থাকলে বাইরে থেকে) যারা ২৪ ঘন্টা হটলাইনে সার্ভিসদিতে প্রস্তুত এবং তারা এলাকাবাসীদের প্রয়োজনে হটলাইনে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করবে।
৫. অফলাইন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান-( পিপিইসহ ফ্রিঅনলাইন/ অফলাইন প্রশিক্ষণ প্রদান করবে পরিবর্তন)।
৬. এই দশ জনের জন্য এবং এলাকার সিকিউরিটি গার্ড ক্লিনার ও একজন ড্রাইভার(যদি থাকে)এর জন্য প্রয়োজনীয় পার্সোনাল প্রটেকিটিভইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা যেমন মাস্ক,এপ্রোনবুট,গ্লাভস,পকেট স্যানিটাইজার ইত্যাদি।
৭. এলাকার নাম দিয়ে ফেইসবুকে নতুন একাউন্ট করে এলাকার প্রত্যেক ঘরের/বাসার একজন কওে সদস্য কে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।
৮. প্রত্যেক ঘরের/বাসার একজনের নাম্বার নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করতে হবে যেখানে অবজারভার,ডাক্তার এবং স্বেচ্ছাসেবক অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৯. ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ এবং হোয়াটস অ্যাপে কার্যক্রম সক্রিয় থাকবে। একান্ত প্রয়োজনে তিন থেকে পাঁচজনের অফলাইন মিটিং হবে (জরুরী হলে)।
১০. এলাকায় বাইরে থেকে আগত প্রবাসীদের কোয়ারান্টাইন নিয়ম মেনে চলছে কিনা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে (না করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে)।
১১. এলাকার মানুষের সমাগম ঘটে এমন কোন অনুষ্ঠান, ছেলেরা খেলাধুলা, প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে পুরো এলাকাকে কোয়ারেন্টাইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১২. মসজিদে শুধুমাত্র ফরজ নামাজ এবং অসুস্থ ব্যক্তি বাসায় নামাজ আদায় করার পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
১৩. করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক বিষয় এবং এলাকায় দায়িত্বরত ব্যক্তি,স্বেচ্ছাসেবক,ডাক্তারদের মোবাইল নাম্বারসহ লিফলেট করে হোয়াটস অ্যাপএবং ফেসবুক গ্রুপে অবহিতকরণ।
১৪.কলোনী/বস্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাতে একজনমাত্র ব্যক্তি দ্বারা ঘরে ঘরে বিতরণ করা হবে প্রয়োজনে হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে শুনানো হবে।
১৫. সন্দেহজনক কোন রোগীর ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত করোনা টেস্টের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরন (একত্রে অবজার্ভার দল সংশ্লিষ্ট জায়গায় আগে থেকে তাদের নিজস্ব যোগাযোগ সম্পর্ক রাখবেন)।
১৬. সার্বক্ষণিক যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য একটি গাড়ি (উদারমনের কোন ব্যক্তি এ কাজে ব্যবহারের জন্য সুযোগ দিবেন)এবং একজন ড্রাইভার নির্ধারিত থাকবে।
১৭. এলাকার ভিতরে প্রবেশদ্বারে বাইরে থেকে আগত ব্যক্তি এবং তার যানবাহন লিকুইড স্প্রে (যা খুবই সহজলভ্য) ব্যবহারের মাধ্যমে এলাকার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন এক্ষেত্রে দুজন স্বেচ্ছাসেবক স্প্রেসহ এলাকার প্রবেশমুখে অবস্থান করবেন এক্ষেত্রে রাতে সিকিউরিটি গার্ডের নিকট স্প্রে মজুদ থাকবে।

কার্যক্রম-২.

১. করোনা পরিস্থিতিতে সহযোগিতার জন্য এলাকার/গ্রামের স্বচ্ছল প্রত্যেক বাসা থেকে নির্ধারিত চাঁদা(৫০০-১০০০) এবং এলাকার ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও প্রবাসী এর কাছ থেকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যাকাতবা দানসাপেক্ষে করোনা পরিস্তিতিতে দরিদ্র জনগোষ্টির সহযোগিতায় দরিদ্র তহবিল ফান্ড গঠন করতে হবে।
২. মসজিদের ইমাম ২.মোতওয়াল্লী ৩. গ্রাম/এলাকা/ ক্লাব এর সভাপতি বা ইউপি সদস্য এই তিনজনকে নিয়ে বা এলাকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দরিদ্র তহবিলফান্ড সংগ্রহকমি ঠিম গঠন করা হবে।
৩. চাঁদাকালেকশনে নিরাপত্তা সজ্জিত দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন ব্যক্তি রশিদের মাধ্যমে চাঁদা কালেকশন করবেন যেহেতু প্রত্যেক এলাকার বা গ্রামের ক্লাব কমিঠির কাছে প্রত্যেক বা সার সমালিকের নাম, বাসানং, লিপিবদ্ধ বা জানা আছে সেক্ষেত্রে এটি খুবই সহজ হবে।

কার্যক্রম-৩.

১. কলোনি/ বস্তি বা নিম্নআয়ের লোকজনদের অবাধে চলাফেরার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্য আহবান করা হবে।
২. ঘরে বসে থাকার কারনে এলাকার কোন গরিব পরিবার যেন অনাহারে কষ্ঠনা করে সেজন্য এলাকার দিনমজুরও হতদরিদ্র পরিবার চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চাল,ডাল,পেঁয়াজ রসুন,লবণ, তেল কমপক্ষে এক মাসে রজন্য সরবরাহ করাহবে।
৩. যার যার এলাকার মেম্বার, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র এবং সরাসরি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সরকারি সহযোগিতায় খবর নেয়া, গ্রহণ এবং সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. দরিদ্র তহবিল থেকে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় খরচের পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সামগ্রীপ্যাকেজ (ন্যূনতম ১০০০-২০০০ টাকা) তালিকাভুক্ত প্রত্যেক ঘরে ঘরে শুধুমাত্র দুজন ব্যক্তি দ্বারা রাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
৫. আক্রান্ত বা আক্রান্ত সন্দেহে কোনো ব্যক্তির হাসপাতালের খোঁজ খবর পরিবারকে দেয়া এবং আল্লাহর হুকুমে (আল্লাহ না করুন) যদি এলাকার কোন ব্যক্তি মারা যান তাহলে পিপিই- পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট সজ্জিত স্বেচ্ছাসেবক দল লাশ দাফন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তাসহ সব ধরনের বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ সম্পাদন করবে এবং পরিবারকে অবহিত করবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, পরিবর্তন।


সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.