Sylhet View 24 PRINT

কর্পোরেট দায়িত্বশীলতা ও করোনা ফান্ড

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৫ ১৪:০৫:৩৬

মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন :: ড. ইউনুস করোনা ইস্যুতে বিশাল বিবৃতি দিয়েছেন। তার দীর্ঘ বিবৃতিটা ধৈর্য্য সহকারে পড়লাম। করোনা পরিস্থিতিতে কে কি করতে পারে- তার দীর্ঘ বয়ান দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, দেশের দরিদ্র মানুষদের চরমতম এই দুঃসময়ে তার প্রতিষ্ঠিত ড.ইউনুস ফাউন্ডেশন বা নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক বা তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফোন কি করেছে তার কোন হদিস পেলাম না।

অবশ্য বিশ্বের নাম করা সুদখোরের কাছ থেকে খুব বেশী আশাও করিনি। রক্তচোষা গ্রামীণ ব্যাংক নাকি এই মহাপ্রলয়ের মাঝেও কিস্তি আদায়ের জন্য হানা দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি।

শুধু ড. ইউনুসের এই আচরণ নয়। আমাদের কর্পোরেট জায়ান্টদের আচরণও মর্মাহত করেছে সাধারণ মানুষকে।

দেশের নামী শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা, স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসএ গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, আরএফএল, ইউনিলিভার- যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ দখল করে আছে, তাদের কারো পক্ষ থেকেই কোন ঘোষণা আসেনি এখন পর্যন্ত।

অন্যদিকে, আলীবাবা নামের অনলাইন মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের প্রধান জ্যাক মা নাকি ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় বিশাল অংকের অনুদান প্রদান করেছেন। বিশ্বের আরো অনেক নামজাদা প্রতিষ্ঠান করোনা চিকিৎসা ও দুর্গত মানুষের সহায়তায় বড় অংকের অনুদান নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

দেশের কর্পোরেট হাউসগুলোতে ‘কর্পোরেট রেসপন্সিবিলিটি’ নামের একটি বিশেষ টার্ম চালু আছে। এই কর্পোরেট দায়িত্বশীলতার আওতায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আয়ের একটি বড় অংশ সমাজসেবার কাজে ব্যয় করে। বর্তমান এই মহাদুর্যোগে দেশের কর্পোরেট হাউজগুলোর পক্ষ থেকে সেই কর্পোরেট দায়িত্বশীলতার কোন উদাহরণ স্থাপনে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি কেউ।

উপরে যে সব শিল্প পরিবারের নাম উল্লেখ করেছি, তাদের সকলেই সরকারের সুবিধাভোগী। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র দেশের একটি শিল্প পরিবারের ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ বিশেষ বিবেচনায় মওকুফ করেছেন সরকার। অথচ, এই গ্রুপেরও কোন নড়াচড়া চোখে পড়েনি।

দেশের এই প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপগুলোর অধিকাংশই সরকারের বেনিফিসিয়ারি। স্কয়ার, বেক্সিমকোসহ প্রায় সবগুলো দেশীয় ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঔষধ রপ্তানী করে। এ সব রপ্তানীতে বাংলাদেশ সরকার বিশাল ইনটেনসিভ দিয়ে থাকে। কিন্তু, দেশের এ মহাদুর্যোগে একটি কোম্পানীর পক্ষ থেকে এক বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের খবরও কোথাও চোখে পড়েনি।

অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই দিয়াগো ইন্ডিয়া নামের একটি কোম্পানী তাদেও ১৫টি শিল্প ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রেখে ৩ দিনের মধ্যে ৩ লাখ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরী করে সারা দেশে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। বেদান্ত রিসোর্সেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান করোনা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ১শ’ কোটি রুপি সহায়তা প্রদান করেছে। মুকেশ আম্বানীর প্রতিষ্ঠান মুম্বাই ও মহারাষ্ট্রে জরুরী ভিত্তিতে ১শ’ শয্যার করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। আমাদের যেমন বিকাশ, তেমনি ভারতে পেটিএম নামের একটি স্থানীয় ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। তারাও ৫ কোটি রুপি দিয়েছে করোনা চিকিৎসা সহায়তায়। গাড়ী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্র তাদের রিসোর্টগুলো করেনা রোগীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। ভারতের এসব কর্পোরেট ডিক্লারেশনের বিষদ বর্ণনা দিতে গেলে পৃথক একটি আর্টিকেল লিখতে হবে।

এর বিপরীতে বাংলাদেশের চিত্র কী? বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত কোন দান অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে- এমন তথ্য কী কারো কাছে আছে? করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর দান অনুদান সম্পর্কে মিঃ গুগলকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও তন্নতন্ন করে খুঁজে কোন তথ্য দিতে পারেন নি।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বা সরকার কী করতে পারেন। দেশের একজন নগন্য মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখনই করোনা সহায়তা তহবিল নামের একটি তহবিল গঠন করতে পারেন। দেশের বড় বড় কর্পোরেট হাউজ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সম্পদের একটি অংশ এই তহবিলে দান করার নির্দেশ দিতে পারেন। দেশের যে দরিদ্র মানুষগুলোর কোন কাজ নেই, মহাদুর্যোগে করোনা পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে যারা অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে, তাদের মাঝে সেই টাকা বিলিয়ে দিতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। স্কয়ার হসপিটার, ইউনাইটেড হসপিটাল, এপোলো হসপিটালের মত বড় বড় হাসপাতালগুলোকে সরকার নির্দেশ দিতে পারেন তাদের হাসপাতালে পৃথক করোনা ইউনিট স্থাপনের।

বাংলার বেনিয়ারা বড় অদ্ভুত প্রজাতি। এরা চোখ বন্ধ করে ড্রাকুলার মত রক্তপান করে। সাধারণ মানুষকে চোষে নিঃশেষ করে দেয়। দেশের মহাদুর্যোগে এরা কুম্ভকর্ণের ঘুমে। সারা দেশ অচল। চারিদিকে হাহাকার। তবুও এদের ঘুম ভাঙছেনা। এদের শক্ত মুগুরের বাড়ি দরকার।

লেখক ঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.