Sylhet View 24 PRINT

অক্ষয়, ১৯৭১

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৬ ০১:০৫:২২

বদরুল আলম :: একেকটি কবিতা একেকটি প্রাণ। কবিতা মানুষকে অনেক কিছু দেয়। কবিতা ইতিহাসের কথা বলে, অতীতের কথা বলে, সময়ের কথা বলে, সমাজের চিত্র মানুষকে জানান দেয়। কবিতা মানুষের কথা ও বলে। কবিতার প্রতি প্রত্যেক মানুষের একটা প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে । আমারও। একটি প্রিয় কবিতা দিয়ে শুরু করা যাক-
 মাস এটি মার্চ !
 ইংরেজি মার্চ !
 বাংলা-কুচকাওয়াজ
 একে একে গেল এতটা বছর
 আজও বাংলায় সেই আওয়াজ
 বন্ধু, তাহলে রাজপথে এসো
 একবার পিছে ফিরে তাকাই।
'৭১ দেখি। ১৯৭১। স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখি। স্বাধীনতা দিবসের অর্থ হলো মহান বিজয়ের পবিত্র ঐতিহ্যকে রক্ষা করা। সমুন্নত রাখা। সমুন্নত রাখার প্রধান শর্ত-ই হলো একতা। দেশে দেশে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু সেজন্য বৃহত্তর দেশের কোন অমঙ্গল হতে পারে, মহান স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এমন কোন কিছু কাম্য নয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বার বার বিভিন্ন সভা সমিতিতে বলতেন, বাঙ্গালি বড়ই আত্নবিস্তৃত জাতি। তারা বার বার ভুলে যায় পলাশী বিপর্যয়, সিপাহী বিপর্যয় আর ভাষা শহীদদের কথা। আরো কত অজানা বিপর্যয় ভুলে যায় বাঙ্গালি। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে আমাদের বড় দু:খের এ দেশটি স্বাধীন হয়েছে। অর্জন করেছি লাল-সবুজ একটি পতাকা। এ পতাকার মর্যাদা অনেক বেশি যদি আমরা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। যতকাল দেশ থাকবে, মানুষ থাকবে ততকাল স্বাধীনতার মতো বড় অর্জনের সত্য অক্ষয় হয়ে থাকবে জাতির জীবনে। যুদ্ধ, মৃত্যু, জীবন, রক্ত, শহীদ, শহীদের আত্মদান , মুক্তিযুদ্ধা ইত্যাদি শব্দ আমাদের প্রিয় স্বদেশের শুধু ভাষার সম্পদ নয় । এসব শব্দ আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপাদান। আমাদের স্বাধীনতা দিনের দীর্ঘ ইতিহাস।

 এই সব শব্দের মধ্যে স্থির হয়ে গেছে এদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন। যাদের অভাব-দারিদ্র আছে, কিন্তু সে দারিদ্র তার সাহসকে ছুঁতে পারে না। তাই তারা মুখ তুবড়ে পড়ার আগে বলতে পেরেছিল, শত্রুর গুলি নিতে হলে সেটা বুকেই নেব, পিঠে নয়। এভাবেই স্বাধীনতা আমাদের হয়েছে। এভাবেই টিকে থাকবে অনাগত মানুষের সাহসী হৃদয়ে। তাই কবির কন্ঠে আশার বাণী উচ্চারিত হয়েছিল-
 শাবাশ বাংলাদেশ , এ পৃথিবী
 অবাক তাকিয়ে রয়
 জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
 তবু মাথা নোয়াবার নয়।
বাঙালি মাথা নোয়ায় না। কখনো না। কারন, সে জানে '৭১। তাঁর রক্তে মিশে আছে ত্রিশ কোটি রক্তের কালিমা। বুকে আছে 'আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না' মন্ত্রের মতো অক্ষয় শক্তি। সে শক্তিই বাঙালি জাতির প্রেরণা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ এই উপমহাদেশের একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা। হাজার বছরের বাঙালির বিশাল অর্জন। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে মুক্তি ও স্বাধীনতার অভয় বাণী শুনিয়েছিলেন। প্রিয় শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক , ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন স্যার প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কথা, বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মাচর্ের ভাষণের কথা। তিনি বলতেন, ৬ দফা না জানলে বাংলাদেশের ইতিহাস জানা হবে না, ৭ ই মাচর্ের ভাষণ না জানলে, জানা যাবেনা স্বাধীনতার ইতিহাস। সম্প্রতি UNESCO , ৭ ই মাচর্ের ভাষণ কে স্বীকৃতি দিয়েছে ( সমগ্র জাতির অহংকারের বিষয় )।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মাচর্ের জনসভায় ইয়াহইয়ার বেতার ভাষণের জবাবে ৪ টি দাবীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি শেষে বলেছিলেন, "The struggle this time is a struggle for emancipation. The struggle this time is a struggle for independence ". সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হলো। আজও মোরা শুনতে পাই সেই ধ্বনি। রাজনীতির কবি কী শুনিয়েছিলেন সেদিন ? এক স্বাধীনতা, এক বিজয়। একটি কবিতা ( ! ) । শ্রেষ্ঠ একটি কবিতা। অসম্ভব প্রিয় একটি কবিতা ।
 পৃথিবীর জন্য যে কোন দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে তুলনীয় ৭ মার্চের ভাষণ, তুলনীয় স্বাধীনতার বর্াতা। মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজন । স্বাধীনতা ছাড়া কিভাবে উচ্চারিত হবে মানুষের সম মর্যাদার কথা, স্বাধীনতা ছাড়া কিভাবে বলা হবে যে, আদম-সন্তান সবাই সমান। মানুষের কল্যানের সাথে যাত্রার জন্য স্বপ্নের বাস্তবায়ন দরকার। দরকার শুভ মঙ্গলের জয়ধ্বনি। এ ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল একাত্তরের দিনগুলিতে। আমাদের বার বার ফিরে দেখতে হবে একাত্তর'কে। জানতে হবে একাত্তরের ইতিহাস। শুনতে হবে মুক্তিযুদ্ধের গান। কবি নির্মলেন্দু গুন'র কন্ঠে বলি-
গাও, গাও, পরান উজাড় করে গাও / আমাকে শুনাও জর্জ হ্যারিসন / আমাকে শুনাও রবিশংকর / আমাকে শুনাও মুক্তিযুদ্ধের গান।
 কিভাবে যুদ্ধ করলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধারা (?) ।আমাদের দেশের ভুখন্ড কি তাদের সাহায্য করেছিল (?)। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত নদীমাতৃক ভুখন্ডের নদীগুলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধাদের সাহায্য করেছিল। বয়ে যাওয়া স্রোত পারাপার করে দিত মানুষদের । পারাপার করে দিত গোলাবারুদ এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে। নৌকা বেয়ে অপারেশনে যেত যোদ্ধার দল। শান্ত নদীর সহিষ্ণু আচরণে ভরে উঠেছিল ভুখন্ডের পলিমাটি। বর্ষায় স্ফীত হয়ে আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছিল পাকিস্তানী সেনাদের। এই সেনারা পশ্চিম পাকিস্তানে নদীর এমন ভয়াবহ চেহারা দেখেছিল। এই নদী সাঁতার দিয়ে পাড়ি দেয়ার সাহস তাদের ছিলনা। আমাদের নদী হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি। স্বাধীনতার এ মাসটি আমাদের শুধু সংগ্রামী প্রেরণায় উজ্জীবিত করেনা, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে জাতি গঠনমুলক আত্মনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার পথে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা ও অতন্দ্রভাবে দেশের আর্থিক কাঠামো কে শক্ত ও মজবুত করার জন্যে কাজ করে যাওয়া। স্বাধীনতার মাসটি পরম পবিত্র । আর স্বাধীনতার দিবসটি মর্যাদার সাথে পালন করা আমাদের কর্তব্য । স্বাধীন জাতি হিসেবে, আত্নমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে স্বাধীনতা দিবসের শিক্ষাকে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে । তবেই আসবে প্রকৃত স্বাধীনতার সুখ বাংলার ঘরে ঘরে।
 বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমাদের গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আমাদের সমাপ্ত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগনকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতেন আমাদের সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হবে । এগিয়ে আসতে হবে আমাদের তরুণদের । তরুণই এখন ভরসা। তরুণদের আছে অসম্ভব বড় হৃদয়। আছে ভালোবাসা । জয় করার মতো ভালোবাসা । জুনাথন সুইফট একবার বলেছিলেন, "we have enough religion to make us hate but not enough to make us love one another "
মানুষকে ঘৃনা করে নয়, মানুষে -মানুষে হিংসা- বিদ্বেষ ও হানাহানি করে নয় বরং মানুষে প্রেম -প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরী করে মানুষকে মানবের পযর্ায়ে উন্নীত করা যেতে পারে । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, বিবাদ নয় সহায়তা, বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাব গ্রহন , মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি। তাহলেই আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারবো। গড়তে পারবো বঙ্গবন্ধুর সোনার বংলাদেশ। সার্থক হবে স্বপ্নের সেই স্বাধীনতা। অক্ষয় স্বাধীনতা।।

লেখক: গবেষক ও প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ। সিলেট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.