আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা সতর্কতা : অবিলম্বে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ করা হোক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৬ ১১:১৭:০৯

কাসমির রেজা :: করুনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সারাবিশ্ব যখন বিচ্ছিন্নতার নীতিতে চলছে, এক দেশ থেকে অন্য দেশ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে; সেখানে সিলেটে এখনো লন্ডন থেকে যাত্রীরা এসে সরাসরি নামছেন। ২৪ মার্চ হিথ্রো থেকে ৩০ জন এবং ম্যানচেস্টার থেকে ৩৫ জন মোট ৬৫ জন যাত্রী সিলেটে আসেন। এদেরকে শুধু থার্মো স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করে এবং হাতে একটি সীল মেরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে এ পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এরা অনেকেই কোয়ারেন্টাইন এর নিয়ম সঠিকভাবে মানছেন না। গাড়ি ভর্তি করে স্বজনেরা এদেরকে রিসিভ করতে এসেছেন এবং সেভাবেই বাড়ি ফিরেছেন। তন্মধ্যে জগন্নাথপুরের গোরাকালী গ্রামের আব্দুল আউয়াল নামে একজন প্রবাসী জিন্দাবাজারে এক ব্যাংকে যান। সেখান থেকে আবার গাড়ি করে জগন্নাথপুর যান । খোদ সিলেটের জেলা প্রশাসক বলেছেন, সিলেটে বিদেশফেরত ৬০০ লোকের বাড়িতে খবর নিয়ে জানা গেছে এরা কোয়ারেন্টাইন এর নিয়ম মানছে না। এদের কেউ কেউ এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরেফিরে স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করছেন। অনেকেই তাদের কে ও দেখতে আসছেন। এদের কারো শরীরে কোভিড-১৯ থাকলে সিলেটের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা ভাইরাস।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চরম ঝুঁকির এইকালে এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তাই প্রবাসীদের তাদের নিজেদের পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন ও দেশের স্বার্থে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার দাবি জানাই।

ঢাকা বিমানবন্দরে যারা নামছেন তাদেরকে সরাসরি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এ নেওয়া হচ্ছে। সিলেট বিমানবন্দরে যারা নেমেছেন তাদেরকে এভাবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। যেহেতু সিলেটে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই তাই লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট অবিলম্বে স্থগিত করার দাবি জানাই।
প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সিলেটে এখনো করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। এক মহিলা মারা যাবার কয়েকদিন আগে থেকেই তার করোনা ভাইরাস আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করার চেষ্টা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের আগেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর পরে তার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এভাবে চলতে থাকলে সিলেটের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের আরো কয়েকটি স্থানে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে ২৫ মার্চ জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। কিন্তু আওতা বাড়ানোর স্থানের মধ্যে নেই বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল সিলেট। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে সিলেটবাসীর মধ্যে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবরেটরি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এ পরীক্ষা পদ্ধতি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এই তালিকায় নেই সিলেটের নাম। অবিলম্বে সিলেটে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার দাবি জানাচ্ছি।

আমরা কেউই চাইনা সারা দেশে এবং হযরত শাহজালালের এই পূণ্যভূমিতে কোন ধরনের মহামারী হোক। এ জন্য সরকারিভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, "১৯৭১ সালে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে জয়ী হয়েছি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলাও একটি যুদ্ধ। ...আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধে জয়ী হব ইনশাআল্লাহ।"

এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। তাই সব ধরনের সর্তকতা সকলকে মেনে চলতে হবে। অবস্থান করতে হবে নিজ নিজ গৃহে।

আমরা জানি- প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর। একথাটি করোনার মতো অতি ছোঁয়াচে ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য। সারাবিশ্বে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো ধরনের গাফিলতি কাম্য নয়।

কাসমির রেজা, সভাপতি, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন