আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বাড়ি নির্মাণে খুটিনাটি ও প্রাক প্রস্তুতি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০২ ০০:৩৯:২২

ফেরদৌস আব্বাস চৌধুরী :: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা আর চিকিৎসা এই মৌলিক চাহিদাগুলো কে কেন্দ্র করে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের বেঁচে থাকা। মৌলিক চাহিদার দিক থেকে বাসস্থান তৃতীয় হলেও মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়কে কাজে লাগিয়ে নিরাপদ বাসস্থান তৈরির স্বপ্ন লালন করে সারাটা জীবন জুড়েই। তবে স্বপ্নের এই বাসস্থান নির্মাণের পূর্বে বেশ কিছু প্রাক ধারণা ও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন যাতে তার কষ্টার্জিত অর্থ-শ্রম-সময় কোনোটিই যাতে বৃথা না যায়।

স্বপ্নের বাড়িটি নির্মাণের পূর্বে ও পরে থাকা চাই সঠিক কিছু পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই দ্বিধা-দ্বন্ধে থাকা সিদ্বান্ত না নেওয়াটাই উত্তম। নিজের মহামূল্যবান বাড়িটি কিভাবে নিরাপদ এবং পরিকল্পিত উপায়ে বানানো যায় তা আগে ভাগেই ঠিক করা চাই।

বাড়ি নির্মাণের প্রাক প্রস্তুতি সমূহ:

‌১. মণস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি
আপনার স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে মণস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি বা মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা। আপনি বাড়ি নির্মাণের জন্যে কতটুক প্রস্তুত তা এ পর্যায়ে নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। আপনার মানসিক দৃঢ়তার সাথে সঠিক সিদ্বান্তের সমন্বয় আপনাকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত করবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেও অনেকেই নানা সিদ্বান্তহীনতায় আর সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন না। ফলে স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ যেন অধরা আকাঙ্ক্ষা হিসেবেই রয়ে যায়।

২. অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
বাড়ি বানানোর জন্য অর্থনৈতিক প্রস্তুতি বা বাজেট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্মাণ কাজ যেহেতু ব্যয় সাপেক্ষ সেহেতু আপনার সেরুপ সঞ্চয় বা নির্মাণ ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা আছে কিনা বা ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ বা ডেভোলপার দ্বারা নির্মাণ করবেন কিনা এ বিষয়ে অগ্রীম পরিকল্পনা গ্রহণ করা চাই। আপনার স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণে কেমন খরচ হতে পারে তার আনুমানিক ধারণা একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর নিকট হতে আপনার চাহিদা মাফিক ভবন নির্মাণের প্রাথমিক খরচ সম্পর্কে জেনে নিন। ফলে আপনি খুব সহজেই সিন্ধান্ত নিতে পারবেন বাড়িটি কিভাবে বানাবেন। অনেকেই সার্বিক অর্থায়ন ও নির্মাণ খরচের সমন্বয় করতে না পেরে নির্মাণ কাজ শুরু করেও স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হোন। তাই এবিষয়ে স্পষ্ট ধারণা গ্রহণ করুণ।

৩. জমি নির্বাচন
বাড়ি নির্মাণে জমি নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্যে উত্তরাধীকার বা ক্রয়সূত্রে হোক আপনার ভেজালহীন এক খন্ড জমি অবশ্যই প্রয়োজন। যদি উত্তরাধীকার সূত্রে জমি আপনার থেকে থাকে তা অবশ্যই পারিবারিক ঝামেলামুক্ত হতে হবে।

জমি কিনে বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে জমির দলিল দস্তাবেজ থেকে শুরু করে পূর্বের মালিকানাসূত্র, ভূমিকর ও নামজারি সহ সর্বশেষ হালনাগাদ করা কিনা দেখে নেওয়া উচিত। তাছাড়া রাস্তা থেকে উঁচু জমি নির্বাচন, স্কয়ার জমি নির্বাচন, জমি সংশ্লিষ্ট পাবলিক/প্রাইভেট রাস্তা ও ড্রেণ আছে কিনা, জমিটি ভরাট করা বা পূর্বে পুকুর ছিল কিনা ইত্যাদি বিষয় খেয়াল করে ক্রয় করা উচিত। এক্ষেত্রে জমির কাগজাদি সমস্যা, পূর্বে পুকুর ও রাস্তা হতে নিচু জমি ক্রয় না করাই ভালো এতে বাড়তি ঝামেলা ও খরচ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৪. ক্রয়কৃত জমির কাগজ হালনাগাদ ও ডিজিটাল সার্ভে
আমাদের দেশে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময়ে আমিন বা সার্ভেয়ার দ্বারা জমির ফিল্ড সার্ভে করা হয় যাতে একটি হ্যান্ডস্ক্যাচ করা হলেও সেখানে জমির সঠিক মাপ পাওয়া ও বোঝা কষ্টকর হয়ে যায়। সেজন্যে বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত আধুনিক মেশিন দিয়ে আপনার জমিটির ডিজিটাল সার্ভে করে ফেলুন। এতে জমিটির কোন পাশ কতুটুকু বাঁকা রয়েছে ও তার কোণাগুলো কত ডিগ্রি এঙ্গেলে আছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। সেইসাথে ক্রয়কৃত জমির কাগজাদির সর্বশেষ হালনাগাদের কাজ ও সম্পন্ন করে ফেলুন। ফলে স্বপ্নের বাড়ি তৈরিতে অতিরিক্ত কোনো ঝামেলা পোহাতে হবেনা।

৫. নির্মাণ পরিকল্পনা
বাড়ি নির্মাণে জমি নির্বাচন শেষে এবার প্রথমেই সিন্ধান্ত নিন কেমন হবে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি। সেটি কি একান্ত নিজের ও পরিবার নিয়ে থাকার জন্যে হবে নাকি আর্থিক বিবেচনায় ভাড়া দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ হবে। একান্ত নিজের থাকার জন্যে হলে সেটি বাংলো বাড়ি, ডুপ্লেক্স বা ট্রিপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করতে চাচ্ছেন কিনা! আর নিজের থাকার পাশাপাশি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়িটি দুই তলা, পাঁচতলা নাকি দশতলা হবে সে সম্পর্কে সিন্ধান্ত স্থির করুণ। একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সাথে আপনার চাহিদা ও বাজেট মোতাবেক নির্মাণ কাজ সম্পর্কে পরিকল্পনা করুণ। এতে আপনি কম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই গ্রহণ করতে পারবেন।

৬.সয়েল টেস্ট
বাড়ি নির্মাণে জমি নির্বাচন, চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও সিদ্বান্ত গ্রহণের পরপর ই একজন প্রকৌশলীর মতামত নিয়ে জমির সয়েল টেস্টটা সেরে ফেলুন। আপনার স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সয়েল টেস্ট বলতে মূলত মাটির বেয়ারিং ক্যাপাসিটি বা ভারবহণ ক্ষমতা কত সেটা জানার প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ আপনার বাড়ির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি কেমন হবে তা নির্ভর করে এই মাটি পরীক্ষার উপর। অনেক বাড়ির মালিক সয়েল টেস্ট করতে অনীহা প্রকাশ করলেও তার স্বপ্নের বাড়ির নিরাপদ ও মজবুত ভিত্তি নির্মাণের লক্ষ্যে অবশ্যই সয়েল টেস্ট করা প্রয়োজন।

৭. বাড়ির প্ল্যানিং ও ডিজাইন
একজন অভিজ্ঞ স্থপতি ও প্রকৌশলীর সাথে আপনার ক্রয়কৃত জমির উপর আপনি যেমন বাড়ি নির্মাণ করতে চাচ্ছেন, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করুণ। অভিজ্ঞ প্রকৌশলী তার প্রকৌশল বিদ্যা ও বিল্ডিং কোড অনু্যায়ী (সেটব্যাক ও ফার এর হিসেবে) জমির আলোকে বাড়ি তৈরিতে কতটুকু জায়গা রাস্তা-ড্রেণ সহ চারিপাশে ছেড়ে দিতে হবে সে সম্পর্কে আপনাকে বিস্তর তথ্য জানাবেন। তাছাড়া জমির আলোকে আপনার ভবনটি কয় তলা হবে, কয়টি ইউনিট হবে, স্কয়ারফুট হিসেবে তাদের আয়তন কত থাকবে তার আনুমানিক ধারণা প্রদান করবেন।

এবার উক্ত বাড়ির কোন ফ্লোরে কোন ইউনিটটি আপনি নিজের জন্যে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন এবং ইউনিটতে মাস্টার বেডরুম কয়টি হবে, ড্রয়িং ও ডাইনিং সেপারেট বা এটাচ হবে কিনা, কয়টি বাথরুম-টয়লেট ও কয়টি বারান্দা থাকবে এসব নিয়ে আলোচনা করুণ। ভবনে বাকি ইউনিটগুলোর ফ্লোর প্লান সহ পার্কিং-বেইজমেন্ট, লিফট ও জেনারেটরের সুবিধা রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এসব বিষয়ে আপনার চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রকৌশলীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহণ করে ফেলুন।

চূড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহণের পর স্থপতি ও প্রকৌশলীর নিকট হতে আপনার চাহিদা মাফিক আর্কিটেকচারাল ডিজাইন তথা ফ্লোর প্লানের ড্রাফট কপি, বাড়িটি দেখতে কেমন হবে তার এলিভেশন ও থ্রিডি এ্যানিমেশন এবং বাড়ির ফাউন্ডেশন ডিজাইন, কলাম-বীম এবং ছাঁদের রডের বিন্যাশ সর্বোপরি বাড়ির স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বা কাঠামোগত নকশার ফাইনাল ডিজাইন বই গ্রহণ করুণ এতে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে স্থপতি ও প্রকৌশলীবৃন্দদের প্রাপ্য সম্মানী প্রদান করুণ।

নির্মাণের পূর্বে বাড়ির আর্কিটেকচারাল, স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং এর পাশাপাশি প্ল্যাম্বিং ও ইলেকট্রিক্যাল ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করুণ।

৮. ডিটেইল ইস্টিমেশন বা বিল অব কোয়ান্টিটি (BOQ) তৈরি
সব প্রকারের ড্রয়িং ও ডিজাইন শেষে প্রকৌশলী দ্বারা প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের ডিটেইল ইস্টিমেশন বা বিল অব কোয়ান্টিটি তৈরি করুণ। এটি হচ্ছে বাড়িটি নির্মাণ করতে ঠিক কত টাকা খরচ হতে পারে তার আনুমানিক লিখিত হিসাব। এর মাধ্যমে বাড়ির সার্বিক নির্মাণ খরচ সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।

৯. প্ল্যান পাস
একজন স্থপতি ও প্রকৌশলী কর্তৃক বাড়ির চূড়ান্ত প্ল্যান ও ডিজাইন প্রদানের পর আপনার বাড়িটি যে এলাকায় নির্মাণ করছেন সে এলাকার অথরিটি যেমন ঢাকার জন্য রাজউক, রাজশাহীর জন্য আরডিএ, খুলনার জন্য কেডিএ, সিলেটের জন্যে সিসিক প্রকৌশল শাখা ইত্যাদি হতে প্ল্যান পাসের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজাদি জমা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিয়ে নির্দিষ্ট ফি এর সহিত জমা দিতে হবে।

তবে খেয়াল রাখবেন যে, প্ল্যান এবং ডিজাইন প্রদানকারী স্থপতি ও প্রকৌশলী অবশ্যই উক্ত অথরিটির এনলিস্টেড হতে হবে। নতুবা তার প্রদানকৃত ডিজাইন উক্ত অথরিটি কর্তৃক পাশ হবেনা।

১০. নির্মাণ সামগ্রীর ধারণা
এ পর্যায়ে নির্মাণ সামগ্রী সম্পর্কে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর মতামত গ্রহণ করুণ। আপনার স্বপ্নের ভবন মজবুত ও শক্তিশালী ভিতের উপর নির্মাণ করতে কোন প্রকার নির্মাণ সামগ্রী যেমন রড, সিমেন্ট, বালু ও ইট ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত তা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ধারণা গ্রহণ করুণ। আপনার জমির আশপাশে কোথায় সুলভ মূল্যে গুণগত মানের নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যায় তার খোঁজ নিন। আমাদের দেশে সিজন এর উপর নির্ভর করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম উঠা-নামা করে, সেক্ষেত্রে নির্মাণের পূর্বে যেসব সামগ্রী সহজে নষ্ট হয়না (যেমন ইট বা বালু) তা সিজন অনু্যায়ী ক্রয় করেও রাখতে পারেন। এতে আপনার খরচ কিছুটা বাঁঁচবে।

১১. ঠিকাদার নিয়োগ
ঠিকাদার নিয়োগের বেলায় অবশ্যই অভিজ্ঞ ঠিকাদার নির্বাচিত করতে হবে যার নির্মাণ কাজের ভালো অভিজ্ঞতা ও দক্ষ লেবার আছে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ঠিকাদার ই অক্ষর জ্ঞানহীন বা অল্পশিক্ষিত। একজন অভিজ্ঞ এবং শিক্ষিত ঠিকাদার থাকলে বাড়ি নির্মাণ আরো সহজ ও ভালো হয়।এক্ষেত্রে ঠিকাদারকে অবশ্যই প্রকৌশলী কর্তৃক প্রদানকৃত ডিজাইন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

১২. চুক্তিপত্র ও কাজের সিডিউল তৈরি
ঠিকাদার নিয়োগ শেষে অবশ্যই ঠিকাদারের সাথে কাজের রেট নির্দিষ্ট করে কাজ সম্পর্কিত চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে ফেলুন। এক্ষেত্রে প্রকৌশলীর সহায়তা চাইলে গ্রহণ করতে পারেন। তিনি স্কয়ার ফিট ও রেট বিবেচনা করে কাজের ধাপ অনুযায়ী ওয়ার্ক এবং পেমেন্ট সিডিউল প্রস্তুতের খসরা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করবেন। এতে মালিক এবং ঠিকাদার উভয়ের মাঝে বিশ্বাস ও কাজের স্পৃহা উভয় বজায় থাকে। সেইসাথে কাজের একটা সিডিউল তৈরি করুণ যাতে নির্মাণ কাজের প্রতিটা ধাপ উল্লেখিত সময় মাফিক হারে সম্পন্ন করা এবং সেই অনুযায়ী ঠিকাদার কাজের বিল গ্রহণ করা এমন তালিকা করে নেওয়া জরুরী।

১৩. সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার
আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়ে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ প্রদান করা হয়না। শুধু মিস্ত্রি দিয়ে নির্মাণ কাজ চালানোটা একদমই অনুচিত। কেননা বাড়ি নির্মাণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, একজন অভিজ্ঞ সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করার জন্যে পরামর্শ দিতে পারবেন। এতে কাজের গুণগত মান ভালো হয়।

১৪.নির্মাণ কাজে জমি প্রস্তুতকরণ
নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে জমিটি অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোনো অপ্রয়োজনীয় গাছ বা আবর্জনা এমন কিছু না থাকে। এতে কাজ করতে সুবিধা হয়। সেই সাথে সাইটে লেবারদের থাকার জন্যে ও নির্মাণ সামগ্রী মজুদের জন্যে শেড তৈরি করা, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা সহ সর্বোপরি কাজে লেবারদের সেফটি নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. লে আউট চেক দেওয়া
আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং চূড়ান্ত শেষে নির্মাণ সাইটে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে লে-আউট চেক দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা ভালো। অনেকক্ষেত্রে আমাদের দেশে নির্মাণ কাজে লে আউট চেক করা হয় না। এর দরুণ ডিজাইন এবং নির্মাণ কাজের সমন্বয়ে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে নির্মাণ কাজে অনেক প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়। লে আউট চেকের ফলে জমির মালিকগণ তার প্রস্তাবিত ভবন সম্পর্কেও সঠিক ধারণা পেয়ে থাকেন এবং ঠিকাদার ও তার মিস্ত্রিদেরও কাজের সুবিধা হয়।

১৬. নির্মাণ কাজ শুরু এবং তদারকি
উপরের সকল প্রস্তুতি শেষে মালিক পক্ষ তার স্বপ্নের বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। নির্মাণ কাজ যেহেতু জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেক্ষেত্রে কাজে ব্যাপক তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।

পরিশেষে একজন প্রকৌশলী হিসেবে এটুকু বলতে চাই, আপনার স্বপ্নের ভবনকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ স্থপতি ও প্রকৌশলী দ্বারা মজবুত, নিরাপদ ও ভূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণ করুণ, যাতে আপনার কষ্টার্জিত অর্থ আর শ্রমে গড়ে উঠা বাড়িটি যেন হয়ে উঠে স্বপ্নের কানন হিসেবে।

লেখক: ডিজাইন এন্ড প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, কারিগর কন্সট্রাকশন এন্ড ইন্টিরিয়র বিডি।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন