আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা এবং আমাদের আগামীর পরিবেশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৪ ০০:৫৬:৪০

পি. কে. বিবেকানন্দ :: কোভিড- ১৯ অথবা নোভেল করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়েছে মাত্র কয়েক মাসে৷ যে সকল রাষ্ট্র এখন এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে তার মধ্যে বেশি যে দেশগুলো আক্রান্ত হয়েছে সবগুলোই উন্নত। কখনো আমরা হয়তো চিন্তাও করতে পারিনি যে, উন্নত বিশ্ব ভাইরাস সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণে এত হিমসিম খাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখনও চেষ্ঠা করে যাচ্ছে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বের করতে, যা এখনো আশার আলো দেখে নি।

আমাদের দেশেও আক্রমণ করেছে এই করোনা ভাইরাস, আমরাও চেষ্ঠা করছি। করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক বড় বড় শহর হয়েছে লকডাউন বা মানুষকে ঘর বন্দী করা হয়েছে। যার দরুন বড় বড় শহরগুলোর কল-কারখানা, দেশ বিদেশে মানুষের যাতায়াত, গাড়ির চলাচল অনেক কমে গেছে।

শুনতে অবাক লাগলেও চিনের বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং কার্বনডাই-অক্সাইড নিঃস্বরণের মাত্রা কমেছে বহুগুন। শুধু চিনে নয়, আমেরিকা সহ ইরোপের অনেক গুলো শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা কমেছে বহুল পরিমাণে। ইতালির ভেনিসের নদী গুলোর দূষণ মাত্রাও কমে এসছে, যা পর্যটক বা পর্যটনের জন্য অনেকদিন ধরেই ছিল দূষিত পানির প্রবাহ। কিন্তু একবার যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে আমরা পর্যালোচনা করি, তা যে অনেকটাই করোনার থাবায় মুখ থুবরে পড়েছে এবং যা বিশ্ব মানবতার উপরে এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর কোন এক অদৃশ্য কাল থাবা৷

চীনে, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছিল আনুমানিক ২৫ শতাংশেরও বেশি, যা নাসা তাদের অনেকগুলো রিপোর্টেও বলেছে৷ নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, শিকাগোর মতো শহরের দূষণের মাত্রাও বদলেছে। কিন্তু আমরা কি এই করোনার আক্রমণ থামার পর আমাদের বৈশ্বিক অর্থনীতির কি হবে এবং তার প্রভাব কি আমাদের পরিবেশে পরবে কিনা সেটা কি একবারও চিন্তা করেছি? অনেক বড় বড় মিডিয়াই এই বিষয় নিয়ে ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷ তারা বলছে, বিশ্বের এই পরিস্থিতিতে হয়তো ইতালির মতো অর্থনৈতিক মন্দা দেখতে হবে অনেক দেশকেই।

যেখানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শেষ বছরে ছিল ৫.৭ %, কিন্তু এবছর এসে দাড়িয়েছে ৪.৯% বলে মনে করছে বিশ্বের অর্থনৈতিক বিষয়ক সংস্থা ওইসিডি। এই অবস্থায়, আগামী দিনগুলোতে এই দেশ গুলো তাদের অর্থনীতির চাকা সচল করতে আরো বেশি উঠে পরে লাগবে বলে আমি মনে করি। বেড়ে যাবে কলকারখানায় কাজ, বাড়বে কার্বনের নিঃসরেণের মাত্রা৷ অন্য দিকে অনেক বিজ্ঞানীরাও মনে করছেন পরিবেশের এই ভাল অবস্থা হয়তো বেশি দিন টিকবে নাহ্, যদি নাহ্ আমরা আমাদেরকে পরিবর্তন করি। মিডিয়ায় এই করোনা নিয়ে অনেকেই অনেকভাবে মন্তব্য দিচ্ছেন। কয়েকদিন আগেই দেখলাম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলাবলি করছেন, করোনা আমাদের নিয়মিত দূষিত পরিবেশ থেকে নাকি আমাদের এখনকার পরিবেশ অনেক ভাল। সে ঠিক আছে, আর যাই হোক কিছু দিনের জন্য ভালো, এটা বলতেই হবে। শুধু কি করোনার পরে?

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাপান সহ আরো দেশের পরিবেশ বিষয়ে মুটোমুটি সবাই অবগত আছেন। কিন্তু এবার আমরাই পারি, করোনা পরবর্তি সময়ে আমাদের পরিবেশকে নিজেরাই ঠিক রাখতে। অনেকেই মনে করেন, মানুষ যারা অনেক দিন ঘরে বন্ধি তারা করোনা শেষ হওয়ার পরেই, বিভিন্ন দূর দেশে পারি জমাবেন বিভিন্ন প্রয়োজনে। এই একটা বিশেষ কারণেই কিন্তু কার্বণ নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক আংশেই। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য পর্যায়েও কেউ কেউ করণাভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠনের নীতিমালার মূল অংশ হিসাবে সবুজ হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য নিয়ন্ত্রক এবং দেশের বৃহত্তম পাবলিক পেনশন তহবিল, ক্যাল্পার্সের বোর্ড সদস্য, কার্নির পাশাপাশি উপস্থাপনায় বলেছিলেন যে, সরকারী ও বেসরকারী সকল অর্থায়নে "জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল " থাকা উচিত ।কিন্তু আমরা যদি সেই ঘুরাঘুরির কাজটা অতি স্বল্প পরিসরে করতে পারি, কলকারখানায় প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে পারি, খাওয়া দাওয়ায় নিজেদের লাগাম টানতে পারি, পরিবেশ আর আমাদের ভালোর কথা চিন্তা করি, করোনার সময় যতটুকু আমরা আমাদের পরিবেশ ঠিক করতে পেরেছি, তার থেকে হয়তো কিছুটা খারাপ হবে অর্থনৈতিক চাপে কিন্তু তারপরও আমরা পরিবেশ দূষণের মত মহামারীকে আটকাতে পারবো।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন