Sylhet View 24 PRINT

দেশ আজ আরেকটি রানা প্লাজার দ্বারপ্রান্তে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৫ ০৯:৫৪:৩৪

ডক্টর তুহিন মালিক :: সবাই যখন বউ বাচ্চা নিয়ে নিরাপদ ঘরে। তাদের খাবার যোগানের দায় তখন ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক নামের নব্য ক্রীতদাসের! যে ক্রীতদাসরা এতটা দিন ধরে লাখ লাখ কোটি টাকার যোগান দিয়েছে। অথচ আজ সেকেন্ড হোম আর বেগমপাড়ার প্রাসাদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সেই ক্রীতদাসের জীবনকে নির্বিচারে বলি দেয়া হচ্ছে।

পোশাক শিল্প অবশ্যই বাঁচাতে হবে। কিন্তু তা কোনভাবেই শ্রমিকের জীবনের বিনিময়ে নয়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ভিতরে পুড়ে মরে নয়। রানা প্লাজার মত বিল্ডিং ধ্বসে শ্রমিকের প্রাণ দিয়ে নয়। করোনা মৃত্যুর মুখে শ্রমিকদের জীবনকে ঠেলে দিয়ে নয়। রাষ্ট্রের অর্থনীতি কিংবা মালিকের মুনাফার সামনে শ্রমিক নামের ক্রীতদাসের জীবনটা যে কতটা মূল্যহীন, তা প্রমাণের জন্য আজকের ঘটনাই কি যথেষ্ট নয়? সংবিধানে প্রতিটা নাগরিকের জীবনের মূল্য সমান হলেও, আজ কোথায় সেই সাংবিধানিক নিশ্চয়তা?

মালিকরা বলছে, তাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের। অথচ বছরে মোট পোশাক রপ্তানি হয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। তারমানে ৯০% অর্ডার এখনও বহাল আছে। যা থেকে নিশ্চিতভাবে মুনাফা থাকবে। সাথে শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মালিকরা কি এতটাই নিঃস্ব সর্বশান্ত হয়ে গেলেন যে, শ্রমিকের বেতনের জন্য তাদের কাছে কোন টাকাই নাই? তাহলে শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ কার জন্য দিলো?

সরকারের আগাগোড়াই ব্যবসায়ী দিয়ে গড়া। বাণিজ্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপিরা সব বড় বড় গার্মেন্টস ওয়ালা। কি সুন্দর চালাকি! সরকার পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, এই দায় তারা নিবে না! সিদ্ধান্ত নিবে বিজিএমইএ। অন্যদিকে বিজিএমইএ আর বিকেএমইএ বলে দিলো, এই দায় তাদেরও না। সিদ্ধান্ত নিবে মালিকরা। গার্মেন্টস মালিক চাইলে গার্মেন্টস খোলা বা বন্ধ রাখতে পারবে! আর এদিকে এইসব দায়হীনতার সুযোগে মালিকরা দেখলো, ক্রীতদাসের মৃত্যুতে কারোই যখন কোন দায় নেই। তাহলে হোক না আরেকটা রানা প্লাজা! চাকরি হারানোর ভয়ে দাসরা তো দাসত্ব করবেই।

দেশের সবকিছু বন্ধ। গণপরিবহনও বন্ধ। অথচ দলে দলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঢাকার পথে ছুটছে পায়ে হেঁটেই। এদের জন্য নেই কোন সামাজিক দূরত্বের থিওরি! নেই কোন কোয়ারেন্টাইনের সবক। মানুষ হলে না এটা প্রযোজ্য হবে। এরা সব আধুনিক ক্রীতদাস। মরলে মরুক। মুনাফা যে হতেই হবে! শিল্পের চাকা চলতে হবেই। রেমিটেন্সের দরজা কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। প্রবৃত্তির সূচক উর্ধে রাখতেই হবে। জীবনের আগে মুনাফার জয় হতেই হবে। মুনাফাখোররা যাতে না ভুলে যে, যাদেরকে আজ আপনারা জরি করে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিচ্ছেন। কালকে এই ক্রীতদাসের সংক্রামণ আপনাদের রাজপ্রাসাদে হানা দিবেই।

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৫ এপ্রিল ২০২০/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.