আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ঝড়োয়া কি দর্শন-এর অপেক্ষায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৫ ১১:৫৩:৫১

মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন :: সম্রাট বাবুরের পুত্র হুমায়ুন। নানা বৈচিত্রে ভরপুর তার জীবন। প্রজাদের জন্য খেয়ালী এই রাজা বিশেষ এক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যার নাম ‘ঝড়োয়া কি দর্শন’।

দিল্লী যারা সফর করেছেন, যারা লাল কিল্লাসহ মোগল সম্রাটদের প্রতিষ্ঠিত দুর্গগুলো দেখেছেন, তাাদের জানা আছে প্রায় প্রতিটি কেল্লার এক পাশে রাজপ্রাসাদের সাথেই আছে খোলা মাঠ বা সড়ক। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর এই সড়কে প্রবেশের ফটক খুলে দেয়া হতো। সাধারণ প্রজারা প্রবেশ করে চলে যেতো সম্রাটের শোবার ঘরের একেবারে সন্নিকটে। সুর্যোদয়ের সাথে সাথে কেল্লার দোতলায় একটি জানালা খুলে যেত। ঘুম থেকে উঠে সম্রাট এসে দাঁড়াতেন সেই জানালার সামনে। কোন কোন সময় সম্রাটগণ সেই জানালা থেকে প্রজাদের উদ্দেশ্যে ছিটিয়ে দিতেন ফুলের পাঁপড়ি। কখনো বা আশরফি। প্রজারা আশ্বস্ত হতো তাদের সম্রাট জীবিত আছেন, রাজ্য ঠিকমত চলছে। সম্রাটের মুখ দর্শনের পর প্রজারা চলে যেত নিজ কাজে। সকালের সম্রাট কর্তৃক প্রজাদের দর্শন দেয়ার এই ব্যবস্থাটির নাম ‘ঝড়োয়া কি দর্শন’।

আমরা এখন সেই ‘ঝড়োয়া কি দর্শনের’ অপেক্ষায় আছি।

গত এক প্রায় ১১ দিন ধরে পুরো দেশ লক ডাউন। পুরো দেশের মানুষ কার্যতঃ গৃহবন্দি। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী অসহায়। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে এ ক’দিনে। কাজ নেই। আয় নেই। রোজগারও নেই। অনেকের ঘরে চাল ডাল নেই। মাত্র কদিন পরেই রোজা শুরু হচ্ছে। অনাগত দিনগুলো কেমন যাবে- এ নিয়ে উদ্বেগে দরিদ্র মানুষ।

এ অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে চোখ সবার। তাদের কাছ থেকে সহায়তা আসছে কি-না, সেদিকেই সবার লক্ষ্য।

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে এমপি আছেন ১৯ জন। সংরক্ষিত আসনের এমপি রয়েছেন আরো ২ জন। উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন পুরো বিভাগের প্রতিটি উপজেলায়। রয়েছেন দুজন করে বাইস চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার‌্যান মেম্বাররাও রয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনে মেয়র রয়েছেন, কাউন্সিলর রয়েছেন। পৌরসভাগুলোতে রয়েছেন পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর। জাতির এ চরম দুঃসময়ে তাদের কে কে মাঠে আছেন বলুন তো?

এই মাঠৈ থাকা মানে সশরীরে হাজির থাকা নয়। সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। সেই সাহায্য কি মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে? স্থানীয় এমপিরা কি তার খোজ নিচ্ছেন? স্থানীয় এমপিরা নিজ উদ্যোগে এলাকার মানুষের জন্য কোন বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন?

দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল এলাাকার মানুষের উত্তর হবে- না। মন্ত্রী এমপিদের সাড়া শব্দ নেই। দর্শন নেই। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের এমপিদের মধ্যে একমাত্র সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকেই দেখা গেছে নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করতে। গত ২৪ এপ্রিল থেকেই তিনি বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার প্রতিটি ইউনিয়নের নিজে উপস্থিত থেকে ত্রান বিতরণ করছেন। আর কারো কোন সাড়া শব্দ দেখছিনা। অবশ্য, ইত্যবসরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রও নিজ উদ্যোগে নগরীর দরিদ্র মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিজস্ব তহবিল গঠন করেছেন। কাউন্সিলদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বন্টন করা হচ্ছে। যদিও এই বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে জোর জবরদস্তি আর ইচ্ছাধীন বিতরণে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।

ভোটের সময় ্আসলে বসন্তের কোকিলদের আগমণ ঘটে। তারা ভোট চান। আশ্বাসের বাণী দেন। সেই ভোট প্রাথীদের অনেকেই আবার কোটিপতির উপর বিলিয়ন পতি। সেই পতিদেরও কোন খোজ নেই। যেমন আাওয়ামী লীগ, তেমন বিএনপি। সবাই যে গা ঢাকা দিয়েছেন।

মাননীয় নেতৃবৃন্দ। আপনরার সাড়া দেন। আমরা দেখি যে, আপনারা জীবিত আছেন। রাজ্য ঠিকমত চলছে। প্রতিদিন সকালে আমরা আপনাদের প্রাসাদের বাইরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি। ‘ঝড়োয়া কি দর্শন’-এর অপেক্ষায়।

লেখক : সাংবাদিক ও আইনজীবী।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন