আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আসুন কোয়ারেন্টিন, গৃহবন্দীর দিনগুলোকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৬ ১২:৫৫:১২

জসিম উদ্দিন :: করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে মহামারি রুপ ধারণ করেছে। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে বাংলাদেশেও। দিনদিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার সারাদেশে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। যাদের সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত অথবা যারা বিদেশ ফেরত তাদেরকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হয়েছে।

জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না দেশের বাহিরমুখী মানুষদের। গণমাধ্যমে আমরা প্রায়ই দেখি প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষদের জরিমানা করছেন। কারণ তারা আইন ভেঙ্গে রাস্তায় বা বাজারে বেড়িয়ে পড়ছেন। আসলে গৃবন্দীর এই দিনগুলোকে আমরা আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।

কোয়েরেন্টিনটা আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত জীবনের জন্যে। কারণ মানুষ আসলে খুব কম সময় পায়, সুযোগ পায় এইরকম নির্জন থাকার। একা থাকার। কোয়ারেন্টিনে থাকার।

কোয়ারেন্টিনঃ রাসুল (সঃ) যে ধারণার প্রবর্তন করেন আসলে যদি আমরা খুব সহজভাবে বলি যে- রসুলুল্লাহ (স) হচ্ছেন কোয়ারেন্টিনের পথ প্রদর্শক। রসুলুল্লাহ (সঃ) এর নির্দেশ ছিল যে- ‘যখন কোনো এলাকায় কোনো মহামারী ছড়ায়, ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায় সেখানে কেউ যাবেও না, সেখান থেকে কেউ বেরও হয়ে আসবে না।’ পাশ্চাত্যের এই কোয়ারেন্টিনের ধারণা আসে এরও ৭০০ বছর পর!
 
সিরিয়ার প্লেগ এবং হযরত আবু উবায়দাঃ
কোয়ারেন্টিন পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন রসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং কোয়ারেন্টিনের শুধু ধারণাই যে তিনি দিয়েছেন তা না; ওনার সাহাবীরা এটা পালনও করেছেন।

রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরিয়াতে প্লেগ দেখা দিল। যে শহরে প্লেগ দেখা দিয়েছিল সেখানে আবু উবায়দা তখন কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন।
 
হযরত উমর তাকে ওখান থেকে ডেকে পাঠালেন যে ওখানে থাকলে তো সে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আবু উবায়দা খুব বিনয়ের সাথে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন- যে না। আমি রসুলুল্লাহ (স) এর হাদিস স্পষ্টভাবেই শুনেছি যে, “যদি আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত এলাকায় কেউ প্রবেশ করবে না এবং আক্রান্ত এলাকায় যে থাকবে সে ওখান থেকে বেরিয়েও আসবে না।” তিনি প্রথম কোয়ারেন্টাইন পালনকারী সাহাবী এবং তার সাথে যে সৈন্যদল ছিল কেউই ওখান থেকে বেরিয়ে আসেন নি।
 
কোয়ারেন্টিন চমৎকার উপলব্ধির পথ হতে পারে এখন বুঝতে পারছেন যে কাজের নির্দেশ রসুলুল্লাহ (স) দিয়েছেন সেটা পালন করা, অনুসরণ করা কতটা পুণ্যের, কতটা সওয়াবের, কতটা উপকারি!

অতএব আপনি যখন কোয়ারেন্টিনে থাকছেন, আপনি আল্লাহর রসুলের একটা নির্দেশ পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন, সৌভাগ্যবান হচ্ছেন- এই আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টিনে থাকুন। এই কোয়ারেন্টিন আপনার জন্যে আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হতে পারে। সেটা হোম-কোয়ারেন্টিন হোক অথবা ক্যাম্প-কোয়ারেন্টিন হোক বা হসপিটাল-কোয়ারেন্টিন হোক।
 
আপনি এই সময়টা নিজের মতো করে, নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যে, নিজের মনের পরিশুদ্ধির জন্যে, মননের পরিশুদ্ধির জন্যে, সৃজনশীলতার পরিশুদ্ধির জন্যে এবং ব্রেনটাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্যে এই সময়টা ব্যয় করতে পারেন।

এই সময়ে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে প্রাণায়ামের চর্চা করা, মেডিটেশনের চর্চা করা এবং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্য চাওয়া।

যারা সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী রয়েছেন- ঐসময়ও তারা তাদের একাগ্র নিমগ্ন প্রার্থনায় ডুবে গিয়ে একটা নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে পারেন।
 
তো কারো যদি কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার সুযোগ হয় এটাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করে আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টিন পালন করে নতুন সুস্থ-সবল মানুষ হিসেবে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন।
 
লেখক: প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ। 
সূত্র: কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন