Sylhet View 24 PRINT

প্রধানমন্ত্রীর অর্জন কি ম্লান হয়ে যাবে ‘অকর্মা’ মন্ত্রীদের জন্য!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৭ ১২:৩৯:৫৫

শাহীন রহমান :: করোনার শুরু আছে, শেষ কোথায় কেউ জানে না। ৩ মাসের বাচ্চাটা এর মধ্যেই হাটি হাটি পা করে সারা দুনিয়াতে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ খেয়ে ফেলেছে। ১২ লাখের উপরে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার জন্য আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাজপুত্র, রানি, রাজনীতিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, অভিনয় শিল্পী কিংবা ধনী, গরীব কেউই বাদ যাচ্ছে না অদৃশ্য এই রোগের হাত থেকে।

বাংলাদেশেও করোনা আতঙ্ক বিদ্যমান, দেশে মারা যাবার তালিকা এখনও দুই ডিজিটও ছাড়ায়নি, তাতেই দুনিয়ার অন্য আর দশটি দেশের মতোই ধর্মপ্রাণ মুসল্লির এই দেশে কম বেশি আতঙ্কে সবাই আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু আমরা দেখছি, তার সাথে গতি মিলিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা দৌঁড়াতে পারছেন না ! ফলে করোনা ভয়াবহতার দিকেই আগাচ্ছে।
ব্যক্তিগত জিদের উপরে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ নিজস্ব অর্থায়নে শেষ করে এনেছেন। সারাদেশে অন্তত দুই ডজন মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করেছেন। ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের একজন অভিভাবক, মায়ের আদর দিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন, খাওয়াচ্ছেন।

আজ সারা বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলা বাংলাদেশ রীতিমতো উন্নয়নের এক রোল মডেল। সেই শেখ হাসিনার অর্জন কি এবার শেষ হয়ে যাবে কিছু অদক্ষ মন্ত্রীদের কারণে?

দেশে অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থল ও নৌ বন্দর, সব বন্ধ। গণপরিবহন বন্ধ। দেশি, বিদেশি সব ফ্লাইট বন্ধ। পরপর দুই সপ্তাহে কেবিনেট মিটিং হয়নি, একনেকের মিটিংও হয়নি। কেবিনেট মিটিং স্থগিত হবার মধ্য দিয়ে করোনার ভয়াবহতা সহজেই অনুমেয়। একইভাবে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতি সৌধে জনগণের যাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পোশাক শিল্পে অশনি সংকেত চলছে। হাজার কোটি টাকার অর্ডার এরই মধ্যেই বাতিল হয়েছে। বিদেশ থেকে গেল মাসে ১৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স কম এসেছে। চলতি মাসে আরও কম আসবে।

৭০ জনের উপরে প্রবাসী বাংলাদেশি এর মধ্যেই বিভিন্ন দেশে মারা গেছেন। আমাদের দেশেও ১৩ জন মারা গেছেন এই রোগে। এর বাইরেও ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের ব্যাখ্যায় বলেছেন তারা করোনাতে নয়, নিউমোনিয়ায় মারা গেছেন, জ্বর, শ্বাস কষ্টে মারা গেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসা খাতে অস্থিরতা দূর করতে রবিবার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা হিসেবে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। দেশের ১৭ কোটি মানুষের চিন্তা মাথায় রেখেই তার এই প্যাকেজ।

একটা বিষয় লক্ষণীয়, শেখ হাসিনা খুব ধীর, স্থির অথচ অভিভাবকের চেয়ারে বসে সার্বিক বিষয়টি হ্যান্ডেল করছেন। মাঠ পর্যায়ে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা কথা বলেছেন। ওপাশ থেকে যে বা যিনিই তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন, কাউকেই তিনি নিরাশ করেননি।

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শেখ হাসিনা যেমন তাদের কথা নিজ থেকেই শুনতে চেয়েছেন তেমনি তাদের কথাও শুনেছেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন নার্স এসে যখন বললেন, আমি আপার সঙ্গে কথা বলব তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নার্সের মতো মহান পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার কথা শুনেছেন মন দিয়ে। একইভাবে দলের এমপি, নেতা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র, সিভিল সার্জন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সবাইকে তিনি সম্মান দিয়েই কথা বলেছেন। গুরুত্ব দিয়ে কথা শুনেছেন। এটাই শেখ হাসিনা, এটাই জাতির জনকের কন্যা।

করোনা বাংলাদেশে শুরু হতেই শেখ হাসিনার সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যতটা সক্রিয় সরকার যেনও তার থেকে পিছিয়ে আছে অনেক।

শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই লকডাউন ঘোষণা না করলেও দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। তিন দফায় ছুটি বেড়ে এখন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঠেকেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা নিয়ে তার দ্বিতীয় ভাষণে, শবে বরাতের নামাজ বাসাতে পড়তে দেশবাসীকে বলেছেন। পয়লা বৈশাখও বাসার ভেতরে পালন করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও এসব নির্দেশ পালন হচ্ছে না। বেশ দেরিতে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য নিয়ে দৌঁড় ঝাপ করছেন।

মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার বিষয়টাই বলি। এই কথা প্রধানমন্ত্রী রবিবার বলছেন। দুদিন পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেটি পালনের জন্য মুসল্লিদের প্রতি অনুরোধ বা নির্দেশ দিলেন।

একই অবস্থা, সারাদেশের উপজেলাগুরোতে কিট সংগ্রহ করে করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটা পরীক্ষা করতে বলেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত এক সপ্তাহেও সেটি কার্যকর হয়নি।

লক্ষণীয়, খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নিজ থেকে বলেছেন, মন্ত্রী হিসাবে তিনি করোনা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি নিজেই কিছু জানেন না। তাকে কেউ কিছুই জানান না।

মহাখালীর এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমই তার অধীনে নয়, তিনি গার্মেন্টস খুলতে বলেননি। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার এই অসহায়ত্ব প্রকাশের চিত্র এখন মিডিয়াতে হট কেক।

লেখক: শাহীন রহমান, সম্পাদক প্রথম সময় ডটকম

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৭ এপ্রিল ২০২০/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.