আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘লকডাউন’ ভেঙ্গে সীতার পরিণতি ও সদৃশ বার্তা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৭ ২২:১২:৪০




|| জসিম উদ্দিন ||

মহাকাব্য রামায়ণে আছে-রাবণ যখন সীতাকে হরণ করতে চাইল তখন সে একটা মায়া হরিণের বেশ ধারণ করল। সীতার দৃষ্টি আকর্ষন করতে মায়াহরিণ তার চোখের সামনে এসে লাফালাফি করতে লাগল। সীতা অল্পবয়সী মেয়ে। সুন্দর মায়া হরিণ দেখে সে হরিণটিকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠল। রামকে বলল, যেভাবেই হোক আমি এই হরিণটিকে চাই! আসলে সেটা তো হরিণ ছিলো না। এটা ছিল মায়া, রাবণের ফাঁদ। যাই হোক, রাবণ গেল হরিণটিকে শিকার করতে। আর ভাই লক্ষণকে রেখে গেল সীতাকে পাহারা দেয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই সীতা শুনতে পায়, আহ, ভাই লক্ষণ! এই শব্দ শোনার পর সীতা লক্ষণকে বলল, রাবণকে মনে হয় রাক্ষসরা মেরে ফেলছে! তুমি যাও ভাইকে উদ্ধার করো। লক্ষণ যাওয়ার সময় সীতার চারপাশে একটি রেখা টেনে দিয়ে সীতাকে সতর্ক করে দিয়ে বলল যে, সে যেন ওই সীমারেখার বাহিরে না যায়। বাহিরে গেলেই কিন্তু বিপদ! এই বলে ভাইকে উদ্ধার করার জন্য ছুটলো লক্ষণ।

এদিকে লক্ষণ চলে যাওয়ার পর রাক্ষসরাজ রাবণ সীতার কাছে আসলেন ভিক্ষুকের বেশে। সীতার কাছে চাইলো ভিক্ষা। সীতা তার সীমানার ভিতর থেকে ভিক্ষা দিতে চাইল। কিন্তু ছন্দবেশী ভিক্ষুক রাবণ জানালো যে, সীতা যদি ওই সীমারেখার বাহিরে এসে ভিক্ষা না দেয় তাহলে সে ভিক্ষা গ্রহণ করবে না। অভিশাপ দিয়ে চলে যাবে!

নারীমন , আবেগ একটু বেশি। কোমল মন তাদের। দয়া হল সীতার। যেই সীতা ভিক্ষা দেয়ার জন্য সীমারেখার বাহিরে পা রাখল, সাথে সাথে সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে চলল রাবণ! ততক্ষণে রাম-লক্ষণ দুই ভাই এসে পৌঁছল সীতার কাছে। ক্রোধের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো রাম। এখানে উল্লেখ্য, রামের এই ‘ক্রোধ’ হোমারের মহাকাব্য ‘ইলিয়ড’র অ্যাকিলিস এর ‘ক্রোধ’ এর মধ্যে একটা মিল রয়েছে। ভাই হত্যার খবর শুনে অ্যাকিলিসও ক্রোধান্বিত হয়ে ট্রোজানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। যাই হোক, রামায়ণের কাহিনী তখন ‘ক্লাইম্যাক্স’ বা চরম পর্যায়ে পৌঁছল। সর্বত্র শুধু উত্তেজনা আর উত্তেজনা! অনেক ঘাত-প্রতিঘাত! সেদিকে আর নাই বা গেলাম।

এবার আসি মূল কথায়। ওই যে লক্ষণ তার ভাই রামকে উদ্ধার করতে যাওয়ার সময় সীতাকে একটা সীমারেখা টেনে দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল ওই সীমারেখাটাই হল ‘লকডাউন!’ সীতা যদি লকডাউন ভেঙ্গে সীমারেখার বাহিরে না যেত তাহলে রাবণ তাকে অপহরণ করতে পারতো না। সামান্য ভুলের কারণে অপহৃত হল সীতা।

এই করোনাকালে সারাদেশে চলছে লকডাউন। আমরা যদি লকডাউনকে অবহেলা করি। লকডাউন ভেঙ্গে সীমার বাহিরে গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করি তাহলে করোনাভাইরাস কি আমাদের আদর করবে? মনে রাখতে হবে বাহিরে গেলেই কিন্তু বিপদ। করোনাভাইরাস কিন্তু ওঁৎ পেতে বসে আছে! তাই সাবধান!

সবার কাছে অনুরোধ, এখনও সময় আছে। আসুন আমরা সচেতন হই। আমরা যদি এখনও অন্যান্য নিয়মের পাশাপাশি পুরোপুরি লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি বজায় রেখে চলি তাহলে আমাদের দেশে প্রাণহানি অনেকটাই কমে যাবে। একসময় সত্যিই বিদায় নিবে করোনা নামক প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। সবাই সচেতন থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক: প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ। 

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন