আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা পরবর্তী খাদ্য সংকট: প্রস্তুতি আছে তো?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৮ ১১:১৭:০২

শাকিল জামান :: আপনারা হয়তো বলবেন মানুষ এখন বাঁচার চিন্তা করছে আর আমি কিসের খাদ্য সংকটের কথা বলছি। বলতে হচ্ছে, কারন পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার দরুনই আমরা বার বার সংকটে পড়ছি। করোনার পূর্ব প্রস্তুতি ছিলো না বলেই এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছি। শুধু এয়ারপোর্টটাকে লকডাউন করে রাখলে যে সমস্যা আমাদের হতো না, এখন পুরো দেশ লকডাউন করেও সেটি থেকে বাঁচা যাচ্ছে না। প্রবাসীদের জন্য ভালো মানের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জায়গা করা যায় নি বলেই এইদিন দেখা লাগছে। এখন যদি করোনা পরবর্তী খাদ্য সংকট নিয়ে না ভাবি তবে পুরো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে নিশ্চিত থাকুন।

কেনো এ কথা বলছি? যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থার কথা নিশ্চয়ই জানা আছে। আমরা যদিও দেখি নি তবে যতোটুকু জেনেছি তাতে একটা আশান্বিত জাতির আশাহত হওয়ার গল্পটাই চোখে ভেসেছে। নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো এবং দেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরত আসলেন। বাঙ্গালী ভেবেছিলো আর কি লাগে? দেশও স্বাধীন আবার সবার প্রাণের প্রিয় মুজিব ভাই সরকার গঠন করেছে, এখন শুধু শান্তি আর শান্তি।

কিন্তু অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালো ভঙ্গুর অর্থনীতি। নয়মাস যুদ্ধের ফলে দেশের উৎপাদন খাত সব বন্ধ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, সবদিকেই হাহাকার, সাহায্য যা আসে তা আর শহর থেকে গ্রামে পৌছায় না! বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পারেন নি। জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখর থেকে নেমে যাচ্ছিলেন অথচ চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না তার। কি দিয়ে লড়বেন তিনি, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অন্যের সাহায্য ছাড়া যে কিছুই ছিলো না।

এই করোনা যুদ্ধ এরচেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। সারাবিশ্ব এই করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। অর্থনীতির চাকা থেমে গেছে। এক কথায় পৃথিবীটাই যে উল্টোদিকে চলা শুরু করেছে। কতোদিন পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। যতোদিন পরেই হোক প্রত্যেকটা দেশ তার নিজের জনগণের খাদ্য, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাবে। ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারা সবাই দাঁড়াতেও পারবে না, ফলে প্রচুর লোক বেকার হবে। এই অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোর অনেক মাস কিংবা বছর লেগে যাবে। বাংলাদেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না কারো।

আমাদের অবস্থা চিন্তা করুন। আমাদের প্রধান যে দুটি খাত গার্মেন্টস এবং প্রবাসী রেমিট্যান্স দুটোই বাধাগ্রস্থ। করোনা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই দুটি খাত ই। যেহেতু উৎপাদন বন্ধ তাই সকল দেশেই খাদ্য সংকট দেখা দেবে, টাকা থাকলেও পণ্য আমদানি করা যাবে না। এই যে কয়দিন আগে ভারত নিজেদের সংকটের জন্য পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিলো; পেয়াজের দাম কোথায় উঠেছিলো নিশ্চয়ই মনে আছে। একইভাবে চাল, সবজি সবকিছুতেই সংকট দেখা দিবে।

তাহলে আমাদের করণীয় কি? আমাদের করণীয় অনেক কিছুই আছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে যেসব উৎপাদন খাত সচল রাখা যায় সেগুলো সচল রাখতে হবে। কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের যতোটুকু সম্পদ আছে সব কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করতে হবে। বেকার বাড়িতে বসে না থেকে যার যেখানে সুযোগ আছে চাষাবাদ করতে হবে। এক টুকরা জমিকেও অনাবাদি রাখা যাবে না।

কে ধনী, কে গরিব, কার ব্যাংকে কতো টাকা আছে সেটা দেখার সময় নেই এখন। দেশে খাদ্য না থাকলে ব্যাংকে জমানো টাকা চিবিয়ে খেতে পারবেন না। গায়ের স্যুট, বুট খোলে উৎপাদন কাজে লাগার সময় এখন-ই। তবে হ্যা, আগেই যেটা বলেছি নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে। কৃষি সম্পর্কিত কাজে একজনের গা ঘেষে দাঁড়ানোর দরকারও হয় না অবশ্য।

এই যে বর্তমানে ডেইরি খামারি, মৎস্য খামারি, পোল্ট্রি খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, এটা অশনিসংকেত! এই খাতগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও অনেক জায়গায় জেলা প্রশাসন এবং অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের জন্য এইসব খাতও লকডাউনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে করে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। একজন উদ্যোক্তা কমে যাওয়া মানে, দেশের উৎপাদিত পণ্য কমে যাওয়া।

একজন উৎপাদনকারীর ক্ষতি শুধুমাত্র তার একার ক্ষতি না, এটা মনে রাখবেন। দুধ বিক্রি করতে না পেরে খামারিরা অনেক জায়গায় লসে বিক্রি করে দিচ্ছে, আমরা খুব খুশি হচ্ছে এই ভেবে যে, দুধের দাম কমে গেছে। এই খামারি যখন লস সহ্য করতে না পেরে উৎপাদন বন্ধ করে দেবে তখন দ্বিগুন দাম দিয়েও আর দুধ পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকটা উৎপাদন খাতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই রকম। উৎপাদনকারীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হবে দেশের স্বার্থে, নিজেদের স্বার্থে। কারণ, উৎপাদনের চাকা সচল থাকলেই কেবল সামনের খাদ্য সংকট থেকে মুক্তি মিলবে। পাশাপাশি যার যেখানে সুযোগ আছে, বাড়ির উঠোনে কিংবা বাসার ছাদে, যেখানে পারেন উৎপাদনের সাথে যুক্ত হোন। সামনে ভয়ংকর খাদ্য সংকট আসছে। সতর্ক হোন, প্রস্তুত থাকুন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৮ এপ্রিল, ২০২০ / এস.জে / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন