Sylhet View 24 PRINT

জীবন বাঁচলে জীবিকা

দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-০৯ ১৪:৪৫:২৩

সালাম মশরুর :: সিলেটের স্বতন্ত্র ইতিহাস ঐত্যিহ্য রয়েছে। এই ঐতিহ্যের পথ ধরেই এখানে সামাজিক  রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের একটি পরিমন্ডল তৈরী হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে এখানকার মানুষ রাজনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, ক্রান্তিকাল, উৎসব পার্বনে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অবস্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছেন।  জাতীয় সংকটে আন্দোলনে সংগ্রামে শত বছরের ইতিহাসে সিলেটের অনন্য অবদান দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। মরন ব্যাধি করনার আক্রমনে আজ মানুষের জীবন বিপন্ন। ক্ষুধার তাড়না মেঠাতে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে উন্মুখ। ঢাকাসহ সারা দেশে নিজেদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে ব্যবসার জন্য বাইরে বেরিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী। এই পর্যায়ে সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।  সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট চেম্বারের সভাপতি এটি এম শুয়েবসহ  সিলেটের সকল মার্কেটের ব্যবাসায়ী সমিতির নেতুবৃন্দ বৈঠক করে  মার্কেট দোকানপাট  না খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।  এর আগে বৃহস্পতিবার সিলেটের অভিজাত বিপনী এলাকা নয়াসড়কের ব্যবসায়ীরা ঈদে ব্যবসা বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছেন। দেশ ব্যাপী সরকারের লক ডাউন ঘোষনার পূর্বেই নয়াসড়ক বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধের ঘোষনা দেন।  ব্যবসায়ীদের এমন সিদ্ধান্ত সচেতন মহলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সমগ্র দেশের ব্যবসায়ীমহল একই সিন্ধান্তে অবস্থান নেবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।  জীবনের সাথে জীবিকার প্রয়োজন থাকলেও জীবন না বাঁচলে জীবিকা দিয়ে কি হবে। একদিকে করনা অপরদিকে মৌসুমী ব্যবসা। করনা নিয়ে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন দেশের মানুষ। এর মধ্যে এসেছে ঈদ। করনার আক্রমনের কারনে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচল, ব্যবসা প্রতিষ্টান শপিং মলও বন্ধ রাখতে বলা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ ইতোমধ্যে ১৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। করনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার লক্ষ্যেই লকডাউন ঘোষনা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত করনা আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বলতে গেলে দেশে এটা এখন নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে মানুষের বন্দি দশায় জীবন পরিচালনায় নানান সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রোজগারের তাগিদ তীব্র হচ্ছে। তা সত্ত্বেও জীবন জীবিকায় কষ্ট হলেও মানুষ  করনা থেকে বাঁচতে চায়।

বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্টান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ায় করনা  পরিস্থিতি মোকাবিলা  কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সম্প্রতি ৫/৬ ঘণ্টা দোকান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠির প্রেক্ষিতে সরকার ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  বিভিন্ন ধরনের বিধি নিষেধ মেনে নিয়ে শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্টান পরিচালনার কথা বলা হলেও বাস্তবে মার্কেটে-বাজারে সেটা মেনে চলা সম্ভব হবেনা। বর্তমান লকডাউনের সম্পুর্ন বিধি নিষেধের মধ্যেও নগরীর হাট, বাজার রাস্তা ঘাটের দিকে থাকালে সহজেই বুঝা যায় নগর জীবনের সচেতনতার ভয়াবহ চিত্র। সেই দৃষ্টি থেকে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিয়ন্ত্রিত জীবনের আকাশ কুসুম কল্পনা না করাই ভালো। ঢাকা নগরীতে পুলিশ শপিংমল ও কেনাকাটার ব্যাপরে বিধি নিষেধ আারোপ করেছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ক্রেতাগণ তাঁদের নিজ নিজ এলাকার ২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত শপিংমল সমূহে ঘোষিত সময়ের মধ্যে কেনা-কাটা করতে পারবেন। এক এলাকার ক্রেতা অন্য এলাকায় অবস্থিত শপিংমলে কেনাকাটা বা গমনাগমন করতে পারবেন না।  বসবাসের এলাকা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য প্রত্যেক ক্রেতা তার নিজ নিজ পরিচয়পত্র (যেমন: ব্যক্তিগত আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানির বিলের মূল কপি ইত্যাদি) বহন করবেন এবং তা প্রবেশমুখে প্রদর্শন করবেন।  প্রত্যেক শপিংমলের প্রবেশমুখে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল বা চেম্বার স্থাপন করতে হবে এবং তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়াও প্রত্যেক দোকানে পৃথকভাবে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে হবে।  প্রতিটি শপিং মলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করতে হবে। মাস্ক পরিধান ব্যতীত কোন ক্রেতা দোকানে প্রবেশ করতে পারবেনা। সকল বিক্রেতা ও দোকান কর্মচারীকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস্ পরিধান করতে হবে।  প্রতিটি শপিংমল/বিপণি বিতানের সামনে সতর্কবাণী “স্বাস্থ্য বিধি না মানলে, মৃত্যু ঝুঁকি আছে” সম্বলিত ব্যানার টানাতে হবে।  প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশ, বাহির ও কেনাকাটার সময় ক্রেতা-বিক্রেতাকে কমপক্ষে ১ মিটার (প্রায় ৪০ ইঞ্চি) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দোকানে যতজন ক্রেতা অবস্থান করতে পারেন তার বেশি ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দেয়া যাবেনা।  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রত্যেক দোকানের সামনে দূরত্ব মেপে মার্কিং করতে হবে।  শপিংমল গুলোতে বয়স্ক, শিশু ও অসু¯’দের (হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য) গমনাগমনে নিরুৎসাহিত করতে হবে।  কেনা-কাটা শেষে মার্কেটে অযথা জটলা বা ভীড় সৃষ্টি করা যাবে না। যাদের কেনাকাটা শেষ হয়ে যাবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে তাদের বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।  শপিংমল গুলোতে প্রবেশ ও বাহিরের আলাদা পথ নির্ধারণ করে দিতে হবে।  ারা মাস্ক না পড়ে আসবে তারা মার্কেট থেকে কিনে নিবে অন্যথায় যাতে মার্কেটে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।  প্রত্যেক শপিংমলের পার্কিং লটে গাড়ী জীবাণুমুক্ত করণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও ড্রাইভাররা যাতে একত্রিত হয়ে আড্ডা না দেয় এবং নিজ নিজ গাড়ীতে অবস্থান করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।  শপিংমল গুলোতে যাতায়াতের জন্য সীমিত পরিসরে সাধারণ রিকশা ও সিএনজি চালু থাকবে। তবে সিএনজি-তে ২(দুই) জনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে নিরুৎসাহিত করা হলো। প্রতিটি যাত্রী এবং চালক মাস্ক পরিধান করবেন। বিষয় হল এতোগুলো শর্ত মেনে মার্কেট শপিংমল খোলা রেখে ক্রেতা বিক্রেতাদের কেনা বেচা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে কতটুকু তা ভেবে দেখতে হবে। সচেতন সমাজের ৯৯% দেশের এই পরিস্থিতিতে কোন বিধি নিষেধ না থাকলেও কেনা কাটা করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার কথা নয়।  সমস্যা হচ্ছে অন্য শ্রেনী কে নিয়ে। মার্কেট শপিংমল খুলে দেয়ায় বাইরে অবাধে চলা ফেরার সুযোগ গ্রহনকারীদের দ্বারা ক্ষতিসাধনটাই হবে বেশী।  করনার আক্রমনের প্রথম ধাপে আমাদের এই অঞ্চল নিরাপদই ছিল। সিলেটে করনার উৎপত্তির কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের ইতিহাস থেকে জানা যায় তাদের শতভাগই বাইরে থেকে আমদানী হয়েছে। সুতরাং শুধু আমরা নিরাপদ থাকার চিন্তা করলে নিরাপদ থাকতে পারবোনা। আমাদেরকে নিরাপত্তাহীন করার উৎসগুলো থেকেও রক্ষা পেতে হবে। প্রশ্ন হল লক ডাউন শিথিল করে বাইরে বেরিয়ে আসাটাকি এতটাই প্রয়োজন যা আমাদের জীবন সংহারের চেয়ে বেশী। বিপদের এই চরম সত্যটিকে উপলব্ধি করে দেশের সকল ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন সিলেট ব্যবসায়ীসমাজ। ব্যবসার লোভ সংবরণ করে সরকারের ১০ মের ব্যবসা প্রতিষ্টান খুলে দেয়ার সিন্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে আগলে রাখতে তারা ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ রাখার ঘোষনা ব্যক্ত করেছেন।

লেখক : ব্যুরো প্রধান, দৈনিক জনকণ্ঠ


সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.