আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

করোনা ভাইরাস ও আমাদের ছাতক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-১৩ ০০:২২:২০

আব্দুল আলিম :: ১০ মে থেকে দোকান-পাট খোলার একটি সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। তা আবার সীমিত আকারে। কিন্তু ছাতকে দেখা গেছে এর ভিন্ন চিত্র। ৮ মে থেকেই সকল দোকান-পাট খুলে গেছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ছাড়া সব রুটেই পণ্যবাহী সহ ছোট ছোট গাড়ী চলাচল করছে। এতে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনো ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব, গণ জমায়েত ও স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না। কাজেই করোনা এখানে মহামারি রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

ঢাকা থেকে নদী পথে বেশ ক'টি ভলগেট নৌকা ও কার্গো এসেছে এখানে। পাথর ও বালু নিতে আসা এসব কার্গো ও ভলগেট নৌকায় রয়েছে সুকানী, মাস্টার সহ কমপক্ষে ১০ জন করে শ্রমিক। তারা প্রকাশ্যে ছাতক বাজার, নোয়ারাই বাজার, পেপার মিল বাজারে ঘুরছেন। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ থেকে আসা এসব নৌ -শ্রমিকের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে।

এদিকে চলছে ছাতকে জমজমাট ঈদের বাজার। কাপড়ের দোকান, সেলুন ছাড়াও ইফতারীর দোকানে প্রচন্ড ভীড় লেগেই আছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার তো কথাই নেই। পূর্বের অবস্থায় চলে গেছে ছাতক শহরের রূপ। মানুষগুলা মনে করছে মরলে মরে যাবো ঈদ করেই ছাড়ব। গ্রাম থেকে মেয়েরাও শহরে আসছেন ঝাকে ঝাকে ঈদের বাজার করতে। শেষ পর্যন্ত আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি জানি না। মৃত্যুকে ভয় না করেই আমাদের ব্যাবসা ও ঈদ করতে হবে হয়তো এই প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামছেন সবাই।

গত কালের চেয়ে আজ (১২-মে) ছাতক শহরে ছিল ঈদের ব্যস্ততা বেশি। দিনে দিনে বেড়েই চলছে শহরে লোক সমাগম। আজ যেন শহরে ছিল মানুষের ঢল। হয়তোবা এ অঞ্চলের মানুষ ভাবছেন ঈদ চলে গেলে বছর পরে ঈদ আসবে। এতো দেরি কেমনে সহ্য করা হবে। করোনা ভাইরাস যাই করুক ঈদের বাজার আমাদের করতেই হবে।

শহরে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। ছেলে মেয়ে সাথে নিয়ে মহিলারা আসছেন ঈদ বাজার করতে। আর মনে হয় হয়তোবা করোনা ভাইরাসকে দাওয়াত করতেই তারা গ্রাম থেকে এসেছেন। মানুষ জেনে শুনে ও না শুনার ভান করছে। শহরে মাইকিং করা হয়েছে দোকান-পাট নির্দিষ্ট সময়ে খোলা ও বন্ধ করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দোকানে ক্রয়-বিক্রয় করা। প্রতি দোকানের সামনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যাবস্থা রাখা। কিন্তু কে কার কথা শুনে।

যার যার মতোই পুরুষ মহিলা মিলে চলাফেরা করছেন দল বেধে। ঈদের আমেজ যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে। কাপড়ের দোকান, চুল কাটার সেলুন আজও ইফতারির দোকানে ছিলো প্রচন্ড ঝামেলা। শহরের তিনটি স্থানে হাতাহাতি ও ছোটখাটো মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মনে হয় তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এসব করেছেন।

সামাজিক সচেতনতার জন্য সরকার,উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ, পুলিশ প্রসাশন, সামাজিক সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে ব্যাপক প্রচারনা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যেন এসব প্রচারনা কারো কানে পৌছায় নি।

পক্ষান্তরে এখানের লোকজন যেন দ্রুত করোনা ছড়িয়ে দিতে কাজে নেমে পড়েছেন। গণসচেতনতায় সামাজিক প্রচারনা নিয়েও কেউ কেউ ঢং-তামাশা করে যাচ্ছেন। জানিনা আমাদের ভাগ্যে কি রয়েছে। ঘরে থাকা মানুষের জন্য সরকারি বেসরকারি ত্রান ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে। এরপরও মানুষ ঘরে থাকতে চাচ্ছে না। আমরা সকলকে আল্লাহর ওয়াস্তে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিচ্ছি।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে আপনার এবং আপনার পরিবারের মঙ্গল হবে। আপনার সচেতনতার জন্য মঙ্গল হবে এলাকাবাসী ও দেশবাসীর।

আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করবেন।
সবাই ঘরে থাকেন, সুস্থ থাকেন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ছাতক প্রেসক্লাব।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন