Sylhet View 24 PRINT

অপরূপা দ্বীপ মাফুশি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৩ ০১:৪৬:৪১

সুদীপ্ত অর্জুন :: ডিসেম্বর, ২০১৯ এর কয়েকটি দিন পরিবারসহ মালদ্বীপে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রের অভাবনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা কে না জানে। এর শান্ত মনোরম পরিবেশ, সাদা বালুরাশির সৈকত আর ক্রান্তীয় প্রবাল প্রাচীর সৌন্দর্যে দিয়েছে অন্য মাত্রা। যারা সমুদ্র বিলাসী, নীল নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চান আর পেতে চান নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, তাদের জন্য মালদ্বীপ আদর্শ গন্তব্য।

১৩-১৮ ডিসেম্বর এই ৬ দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করলাম। এ যাত্রায় আমাদের মূল গন্তব্য মাফুশি আইল্যান্ড। মালদ্বীপের এই স্থানীয় জনসাধারণ অধ্যুষিত দ্বীপটি সারা বিশ্বের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। তাছাড়া যারা অপেক্ষাকৃত কম খরচে মালদ্বীপ ঘুরে আসতে চান, তাদের কাছে মাফুশির বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ‘অন এরাইভাল’ ভিসা সুবিধা থাকায়, সেই ঝাক্কিও নেই একদম।

পরিকল্পনা অনুযায়ী মালদিভিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় উড়াল দিলাম আমরা ৪ জন- আমি, আমার স্ত্রী নিবেদিতা, কন্যা সৌমন্তী ও শিশুপুত্র সান্ময়। ভারতের চেন্নাইতে ৩৫ মিনিট যাত্রাবিরতিসহ বেশ আরামদায়কই মনে হল এই বিমান ভ্রমণ। মালে ভেলেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যখন পৌঁছলাম, ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় রাত প্রায় ৯টা। ইমিগ্রেশন শেষ করে যখন বাইরে এলাম তখন রাত ১০টা বেজে গেছে। বিমানবন্দরের পাশেই স্পীডবোট/ফেরী জেটি। রাতেই চাইলে স্পীডবোট ভাড়া করে মাফুশি যাওয়া যায়। কিন্তু আগেই ঠিক করেছিলাম এতো রাতে শিশুসহ সমুদ্রযাত্রা করবোনা। হুলহুমালে-র Season Holidays হোটেল তাই আগেই বুক করা ছিল প্রথম রাতটি কাটানোর জন্য। বিমানবন্দরেই হোটেলের একজন প্রতিনিধি আমাদের স্বাগত জানালেন। রাতে হোটেলের সামনে নেমেই কানে এলো অন্ধকারে অদূরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের গর্জন। ততক্ষণে দীর্ঘ ভ্রমণের প্রচণ্ড ক্লান্তিও পেয়ে বসেছে আমাদের। তাই আর দেরি না করে খাওয়া দাওয়া সেরে সকলে ডুব দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি ৯টা বেজে গেছে। আমাদের হোটেল রুম ২য় তলায়। নীচ তলায় ব্রেকফাস্ট করতে নেমে রেস্তোরার গ্লাস দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই এক অদ্ভুত মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের রাস্তা পার হলেই বিস্তীর্ণ সাগর তট। ধবধবে সাদা বালুরাশির উপর স্বশব্দে আছড়ে পড়ছে নীল-সবুজ-পান্না রঙের ঢেউ। আছে অসংখ্য নারকেল গাছ আর বসার বেঞ্চ। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি, দুপুর ২টায় স্পীডবোটে রওয়ানা হব মাফুশি। কাজেই দ্রুত নাস্তা সেরে আমরা বের হলাম এ অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। হুলহুমালে-র চারদিক ঘিরেই আছে মহাসাগরের অন্তহীন জলরাশি। তবে পশ্চিম দিকের সৈকত আর ভারত মহাসাগরের পাশ ঘেঁষে হেটে চলার রাস্তা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। একের পর এক ছবি তুললাম অনেকগুলো। সকলে হাতে হাত ধরে পা ভিজিয়ে সৈকতে হাঁটলাম কিছুক্ষণ।

প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে কাটিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। ফ্রন্ট ডেস্কে আমাদের জানানো হল জেটিতে পৌঁছে দেয়ার গাড়ি আসবে দুপুর ১টায়। আমরাও তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই লাগেজসহ নিচে নেমে অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে সেই গাড়ি এলো প্রায় পৌণে ২ টায়। ফলে জেটিতে পৌছে ২টার স্পীডবোট ধরা গেলনা। খোঁজ নিয়ে জানলাম পরবর্তী যাত্রা বিকেল সাড়ে ৩টায়। যেহেতু আগে থেকেই icom tours- এর টিকিট কাটা, কাজেই অতিরিক্ত খরচ করে ভাড়া করা বোটে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম আমরা। বিমানবন্দর বা জেটি এরিয়ার মধ্যেই অত্যাধুনিক সব কফিশপ আর ফুড কর্নার। এই সুযোগে তাই আমরা সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিলাম।

যথাসময়ে আমরা যাত্রা করলাম মাফুশির উদ্দেশ্যে। প্রায় ৪৫ মিনিটের সমুদ্র ভ্রমণ। চমৎকার আবহাওয়ায় ভ্রমন পথে চোখে পড়ল নানা রকম মাছ ধরার নৌযান, ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে ছুটে চলা ট্যুরিস্ট স্পিডবোট, সাধারণ ফেরী আর বেশকটি বিলাশবহুল প্রাইভেট রিসোর্ট আইল্যান্ড। প্রায় ১২০০ ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের অন্যতম স্থানীয় দ্বীপ মাফুশি, যা প্রায় ১.২৭ কি.মি. দীর্ঘ ও ০.২৬ কি.মি. প্রশস্ত। প্রায় ৩০০০ মানুষের বসবাস দ্বীপটিতে। মাফুশি জেটিতে স্বাগত জানালেন Salt Beach Hotel এর ম্যানেজার আমাদের স্বদেশী মি. কামাল ওয়েলিয়া। তিনিই জানালেন প্রায় প্রতিটি হোটেলে রুম সার্ভিস থেকে শুরু করে রেস্তোরা- সবখানেই বাংলাদেশীরা কাজ করছেন। সেখানে হোটেল, রিসোর্ট আর কন্সট্রাকশন প্রজেক্টগুলোতে যারা কাজ করছেন, তাদের শতকরা ৭০ ভাগই বাংলাদেশী।

জেটি থেকে আমাদের হোটেল হাটা দূরত্বে। সেখানে যেতে যেতেই আশপাশের প্রকৃতির মোহনীয় রূপ চোখে পড়ল। হোটেলে পৌঁছে আনন্দটা বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। অসাধারণ লোকেশন। হোটেলের সামনেই বিস্তৃত সৈকত। মি. কামাল আমাদের দ্বিতীয় তলায় যে সুবিশাল রুম দিলেন, তার প্রশস্ত বেলকনিতে বসেই আপনি উপভোগ করতে পারেন সমুদ্র আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। সকলেই একটু বিশ্রাম নিলাম। এখানে আমরা থাকব পুরো ৩ দিন। কাজেই তাড়া নেই কোন।

সূর্যাস্তের ঠিক আগে হাঁটতে বের হলাম। হোটেলের সামনেই জুস কর্নার। সন্ধ্যার পর থেকে পর্যটকদের জন্য সৈকতেই রঙিন আলোকসজ্জায় চেয়ার টেবিল দিয়ে ওপেন এয়ার রেস্তোরার ব্যবস্থা করা হয়। চাইলে সেখানেই ডিনার পর্যন্ত সারতে পারেন আপনি। আমরা চিপস আর লেমনেডের সাথে উপভোগ করলাম আকাশ আর সাগরের বুকে সূর্যাস্তের বিচিত্র রংয়ের প্রদর্শনী। অস্তমান সূর্যের অতুলনীয় এ সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করার সাধ্য নেই কারো। অসংখ্য পর্যটকের সান্ধ্যকালিন এক মিলনমেলা যেন। বেশির ভাগই ইউরোপিয়ান, এসেছেন পরিবারসহ বেড়াতে। আমরা কিছুক্ষণ সৈকত ধরে হাঁটাহাঁটি করলাম। প্রতিটি নারকেল গাছেও সুদৃশ্য আলোকসজ্জা। কিছুক্ষণ পরপরই রয়েছে জুসের দোকান। মালদ্বীপে সবখানেই ইউএস ডলার চলে স্থানীয় মুদ্রার মতোই। কাজেই ডলার না ভাঙ্গাতে পারলেও অসুবিধা নেই কোন। আমরা দুটি ডাব কিনে খেলাম ৪ ডলারে, স্থানীয় মুদ্রায় যা ৬০ রুফিয়া। এভাবেই আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করে সময় কেটে গেলো। ফিরে এসে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতেই ডিনার টাও সেরে নিলাম।

১৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে বের হলাম মাফুশির বীচ দর্শনে। মালদ্বীপে সারা বছরই গরম, তবে আদ্রতা তুলনামূলক কম। তীব্র সূর্যালোকে সান স্ক্রিন লোশন আর সানগ্লাস ব্যবহার আবশ্যকীয়। আমার সৌভাগ্য যে, প্রায় ২ বছর বয়সী পুত্রের জন্যও একটা রঙিন চশমা নিয়ে গিয়েছিলাম কি মনে করে। সেটাও কাজে লাগলো পুরোপুরি। বের হয়ে প্রশস্ত বালুরাস্তা পেরোলেই দীগন্ত বিস্তৃত ধবধবে সাদা বালির সৈকত। রয়েছে নারকেলসহ অন্যান্য গাছের সারি, হাল্কা নীলাভ পানিতে ভাসছে দু-একটি ছোট বোট, শান্ত নিরিবিলি চারিদিক। মনে হল, সেখানে বসেই কাটিয়ে দেয়া যায় দিনের পর দিন। আমার পুত্র কন্যা প্রায় নুয়ে পড়া একটা নারকেল গাছে চড়ে বসল। গাছগুলোর ফাকে ফাকে রয়েছে বসার ব্যবস্থা। কোন কোন স্থানে দুটি গাছকে কেন্দ্র করে দোলনা ঝুলানো রয়েছে। সৈকত ধরে প্রায় ৩০/৪০ গজ হাটতেই দেখলাম বড় বড় পাথর দিয়ে প্রশস্ত বাঁধের মত সৃষ্টি করা হয়েছে। বাঁধের একটা অংশ চলে গেছে সৈকত থেকে সমুদ্রের খানিকটা ভেতরে। চাইলে হাটা যায় এর উপর দিয়ে। আর বাঁধের ঠিক ওপর পাশেই বিখ্যাত বিকিনি বীচ। পর্যটকরা এই বীচেই ভিড় জমান সমুদ্র স্নানের জন্য। দ্বীপের এই দিকটা পুরোটাই নানা মানের হোটেল আর রিসোর্টে ঠাসা। ছোট্ট একটা দ্বীপ, স্থানীয় মানুষের বসবাস, শত শত পর্যটক, অথচ কোথাও এতটুকু ভিড় বা বিশৃঙ্খলা নেই। কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে বুঝতেই পারিনি আমরা। বিকিনি বীচেই সমুদ্র স্নান সারবো বলে হোটেল থেকে তাই প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় নিয়ে এলাম। আসার সময় কামাল ভাই স্নরকেলিং প্র্যাকটিস করার জন্য কয়েকটি মাস্কও দিয়ে দিলেন, কারণ পরের দিনই আমরা স্নরকেলিং এ যাবো। শত শত পর্যটক ততোক্ষনে বীচে জড় হয়েছেন। কেউ সানবাথ করছেন, কেউ বা মগ্ন ধবল বালুরাশিতে শুয়ে বই পড়াতে, অন্যরা সাতার বা নানা ওয়াটার স্পোর্টসে ব্যস্ত। বিকিনি বীচের অদ্ভুত রঙিন অথচ স্বচ্ছ অগভীর পানিতে প্রায় ২ ঘণ্টা সাতার কাটলাম, মাস্ক লাগিয়ে পানির নিচে মুখ ডুবিয়ে দেখা আর শ্বাস নেয়া চর্চা করলাম। সৌমন্তী আর সান্ময় বালি দিয়ে খেলাও করল অনেকক্ষণ। দুপুর বিকেলে গড়ালে ফিরে এলাম হোটেলে। ভীষণ ক্লান্তিও ভর করেছে ততোক্ষণে। সেদিন বিশ্রাম নিয়ে আর বেলকনিতে বসেই উপভোগ করলাম বাকিটা সময়।

মাফুশিতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় সব ট্যুর প্যাকেজ আর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ। আইল্যান্ড হপিং, স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, ডলফিন ওয়াচিং, স্যান্ড ব্যাঙ্ক ট্যুর, প্যারাসেইলিং, ডে-নাইট ফিশিংসহ নানা রকম ওয়াটার স্পোর্টস তো আছেই। তবে স্কুবা ডাইভিংয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে আগে ট্রেনিং নেয়া উচিত, আর সেই সুযোগও আছে মাফুশিতে। নিবেদিতা আর আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা স্নরকেলিংয়ের। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।

১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় আমাদের যাত্রা শুরু হল বড় স্পীডবোটে। আমাদের প্যাকেজে আছে ডলফিন দেখা, কোরাল আর টার্টল রিফ স্নরকেলিং আর শেষে স্যান্ড ব্যাঙ্ক এ লাঞ্চ। এ গ্রুপ ভ্রমণে আমরা মোট ১৮ জন আছি যারা বিভিন্ন হোটেল বা রিসোর্ট থেকে এসেছেন। পরিচয় হল এরাবিয়ান, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ ও ভারতীয় যুগলদের সাথে। সকলেই অত্যন্ত আন্তরিক। এছাড়াও আছেন ৪/৫ জন দক্ষ গাইড কাম ইন্সট্রাকটর। এদের মধ্যেও একজন বাংলাদেশী, নাম মাসুদ। আমার মেয়ে স্নরকেলিং করতে চায় শুনে বললেন ‘কোন চিন্তা করবেন না দাদা, আমি নিজে থাকব তার সাথে।’

প্রায় ২০ মিনিট নীল জলরাশির উপর দিয়ে চলার পর চোখে পড়ল ঝাকে ঝাকে ডলফিন। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ছুটে চলেছে ওরা। হঠাৎ দেখি একদম বোটের গা ঘেঁষে সাতার কাটছে একটি দল। আমরা সকলেই ইচ্ছেমত ছবি আর ভিডিও তুললাম। আমার পুত্র-কন্যার তো আনন্দের সীমা নেই। পারলে ডলফিনের সাথেই ছুটে ওরা। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা ছুটে চললাম কোরাল রীফের দিকে। এবার বহু প্রতীক্ষিত স্নরকেলিংয়ের পালা। কোরাল রীফের কাছাকাছি পৌঁছে ইন্সট্রাক্টররা আমাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ বুঝিয়ে দিলেন কি করতে হবে। সান্ময়কে নিয়ে বোটেই থাকল নিবেদিতা। আমি আর সৌমন্তী নেমে পড়লাম সাগরে। মি. মাসুদ নিজে সৌমন্তীকে দেখাতে নিয়ে গেলেন কোরাল রীফের জগৎ। ততোক্ষণে আমিও ডুব দিয়েছি সেই নীল অসীমে। যে অভিজ্ঞতা হল, তা ঠিক ভাষায় বর্ণনা করা যায়না। নানা রঙের, নানা রুপের প্রবাল। আর তার মাঝে ছুটে চলেছে কত শত প্রজাতির রঙ বেরঙের মাছ। আমিও ছুটে চললাম তাদের সাথে। ক্লাউন আর অরেঞ্জ গ্রিন ট্রিগার ফিশ, ফ্যালকো হকফিশ, নানা বর্ণের বাটারফ্লাই ফিশ, নীল এঞ্জেল ফিশ, কমলা-সাদায় মেশানো ক্লাউন ফিশ কি নেই সেখানে!! কোন এক স্বপ্ন রাজ্যে বিচরণ করছি যেন। একটু দুরেই দেখলাম আমার মেয়ে একটা ক্লাউন ফিশ ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এর মাঝে ইন্সট্রাক্টররা একের পর এক আন্ডার ওয়াটার ছবি আর ভিডিও তুললো, যা পরে আমাদের দেয়া হবে। আমি উঠে আসার পর নিবেদিতাও নামলো স্নরকেলিংয়ে।

এ পর্ব শেষে আমাদের গন্তব্য টার্টল রীফ। সেখানে একই ভাবে স্নরকেলিং করে দুটো বিশাল সামুদ্রিক কচ্ছপকে অনুসরণ করলাম আমরা। বেশি কাছে গেলে আবার কামড় দেয় ওরা। কাজেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হল আমাদের। অসাধারণ রোমাঞ্চকর এ সাগর তলের অভিজ্ঞতা মনে থাকবে চিরকাল।

এর মাঝেই বেজে গেছে প্রায় ২টা। এবার আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য স্যান্ড ব্যাঙ্ক। সাগর মাঝে গজিয়ে ওঠা সাদা বালুর আর সবুজ উদ্ভিদে ছাওয়া এই চরে গিয়ে সী ফুড দিয়ে লাঞ্চ সারলাম সবাই। ক্লান্ত হলেও অসাধারণ সব অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ঝুলি নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম সকলে। সেদিন সন্ধ্যায় সৈকতে বসে লক্ষ্য করলাম অদূরেই আলো ঝলমল একটা শীপ ভাসছে। আগের রাতেও দেখেছিলাম এটা। খবর নিয়ে জানলাম এটা ভাসমান বার। নাম ‘কানি প্রিন্সেস’। মাফুশিতে যেকোনো ধরণের এলকোহল সমৃদ্ধ পানীয় নিষিদ্ধ। কেউ যদি বিয়ার বা এ রকম পানীয় চান, সেক্ষেত্রে তিনি ছোট বোটে করে চলে যেতে পারেন সেই বারে। এমনকি সেখানে থাকারও সু ব্যবস্থা আছে।

পরের দিন সকালে আমরা বের হলাম দ্বীপের স্থানীয় জনজীবন আর দক্ষিণ দিকের সৈকত দেখতে। বিকিনি বীচের উল্টো দিক দিয়ে সোজা রাস্তা চলে গেছে একদম দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত। সেদিকেই হাটতে থাকলাম আমরা। চোখে পড়ল সারি সারি ছোট খেলনা আর কাপড়ের দোকান। কিছুটা ভেতরে যেতে দেখলাম আমাদের দেশের পুরনো পাকা বাড়ির মতোই ছোট ছোট বাড়ি। কয়েকটি বাড়ির সামনে দেখলাম মহিলারা বসে গল্প করছেন। একটা বেশ বড় সুপার শপে ঢুকলাম। মূলত নানা ধরনের ক্যাপ, কাপড় আর স্যুভেনির পাওয়া যায় এখানে, দামও অত্যন্ত চড়া। ছোট্ট এই দ্বীপে এতো লোকের বাস, কিন্তু কোথাও কোলাহল চোখে পড়ল না। স্থানীয় মানুষজন অত্যন্ত ভদ্র আর মার্জিত। বীচ, দোকানপাট বা রাস্তাঘাট কোথাও পর্যটকদের নিয়ে কোন টানা হ্যাচড়া বা উৎপাত নেই। প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে উপভোগ করছেন জীবন। এ সংস্কৃতির চর্চা অবশ্যই শিক্ষনীয়। এক পর্যায়ে চলে এলাম একেবারে দক্ষিণ দিকের সৈকতে। বিস্তৃত সৈকত হলেও এ দিকটা পর্যটন এলাকা নয় বলে একেবারেই লোকজন নেই। কোন হোটেল, রিসোর্টও চোখে পড়ল না। সেই শান্ত নিরব পরিবেশে প্রায় ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। সেদিনই বিকেল বেলা ফিরে এলাম হুলহুমালে। কারণ পরের দিন অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় আমাদের ফ্লাইট। এবারের মতো দেশে ফেরার পালা। মাফুশি থেকে ফিরে আসার সময় কামাল ভাই আমাদের সকলকে একটা করে স্যুভেনির উপহার দিলেন। মাফুশিবাসীর আথিথেয়তায়, আন্তরিকতায় মুগ্ধ আমরা।

পরের দিন ঠিক সময়েই উড়াল দিলাম প্রিয় মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে। সাথে নিয়ে এলাম অসংখ্য আনন্দময়, রোমাঞ্চকর স্মৃতি। পেছনে রেখে এলাম এক বর্ণিল স্বপ্ন রাজ্য।

লেখক: আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.