আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

একজন আলোকিত নির্মাতার নাম আব্দুশ শহীদ খান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-০১ ২১:৩১:১৩

জসিম উদ্দিন, বানিয়াচং প্রতিনিধি :: মরহুম আব্দুশ শহীদ খান। যাত্রাপাশার ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের আলোকিত নির্মাতা। শিক্ষানুরাগী, পঞ্চায়েত ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। বানিয়াচংবাসীর কাছে তিনি শহীদ খান নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। এলাকার ছোট বড় সবাই ‘খানসাব’ বলে সম্ভোধন করতেন। শিক্ষা ও সমাজসেবায় আজীবন কাজ করেছেন।

সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজ, বানিয়াচং সিনিয়র আলিয়া মাদরাসা, জনাব আলী ডিগ্রি কলেজ, এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ এই অঞ্চলের সবকটি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ছিলেন অগ্রগামী। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের দাতা ও পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত গ্যানিংগন্জ বাজার কমিটি, বানিয়াচং পশ্চিম ঈদগাহ ও সমুর্তাজিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন শহীদ খান। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি বানিয়াচংয়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের (যাত্রাপাশা খান পরিবার) উজ্জল অভিভাবক। এই পরিবারের আজকের অবস্থান, দেশ-বিদেশে খ্যাতি-সম্মান, দানশীলতার শিখরে উঠার পেছনে ছিলেন মরহুম আব্দুশ শহীদ খান।

তাঁর পিতার নাম মরহুম গোলাপ আলী খান। গোলাপ আলী খান বানিয়াচং আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আওলাদে রাসুল সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানীর টুপি ও পাগড়ী (ডাকের মাধ্যমে) খরিদ করেছিলেন। পরে মাদানী রহ. এর টুপি-পাগড়ী বিক্রির টাকায় বানিয়াচং সিনিয়র মাদরাসা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। আলিয়া মাদরাসা ও খান পরিবার যেন একই মুদ্রার এপিট ওপিট।

আব্দুশ শহীদ খানের অন্য তিন ভাই হচ্ছেন স্বনামধন্য ক্রীড়া শিক্ষক মরহুম আব্দুল হাই খান, প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. এম এ মুকিত খান (ইংল্যান্ড), আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দাতা এম এ মতিন খান (ওবিই) ইংল্যান্ড।

সন্তানরা হলেন আলহাজ রেজাউল মোহিত খান, এম এ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (স্বত্ত¡াধিকারী, রুপালী ম্যানশন), জিয়াউল মোহিত খান, মাস্টার্স,ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়(ইংল্যান্ড), জায়েদুল মোহিত খান, মাস্টাস,. ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (নিউইয়র্ক, আমেরিকা ), শাফিউল মোহিত খান এমবিএ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (এডিশনাল এমডি, মার্লিন বিল্ডার্স, সিলেট), বড় মেয়ে নাজমা খান,বি.এ (ইংল্যান্ড), আসমা খান, এম.এ,জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় (ঢাকা), ফারজানা আজিজা খান রোজি, এম.এস.সি (আমেরিকা), ফারহানা আজিজা খান স্বর্না, বি.এ ( ইংল্যান্ড), সর্বকনিষ্ট মেয়ে সাবরিনা আজিজা খান রুনা বি.এ (ঢাকা)।

ভাতিজা বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এনামুল মোহিত খান ও ডা. আশিকুল মোহিত খান। এক ভাতিজি শামিমা শাহরিয়ার খান এমপি (মহিলা আসন, সিলেট-সুনামগঞ্জ)। ছোট তিন ভাই, চার ছেলে ও পাঁচ মেয়েসহ পরিবারের সকল সদস্যদের নিজের মত করে গড়ে তুলেছেন। আপন মহিমায় সন্তানদের প্রতিষ্টা করেছেন। তিনি নিজেও বাড়ি থেকে পায়ে হেটে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বৃন্দাবন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন।

এম এ মুকিত খান ও এম এ মতিন খানের সন্তানরা ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে চাকরি করছেন। ডা. মুকিত খানের এক ছেলে বৃটেনের চক্ষু বিশেষঞ্জ ডা. মাহিউল মুকিত খান। এ ছাড়া তিনি এনআরবি ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক। তিন ভাইয়ের সকল সন্তানদের নিজ সন্তানের মত চোখে চোখে বড় করেছেন। বিশাল একান্নবর্তী পরিবারটির উজ্জল অভিভাবক ছিলেন মরহুম আব্দুশ শহীদ খান।

আওয়ামীলীগের সমর্থক হলেও শহীদ খান রাজনীতিতে ছিলেন নিরব। বড়নেতা বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা হাতের মুঠোয় থাকলেও সন্তানদের রাজনীতিতে দেননি। যদিও মহাননেতা এডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি সাহেবকে আপন পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখতেন। সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিতেন সব সময়। প্রয়াত এমপি সাহেবের পরিবার ও আব্দুশ শহীদ খানের পরিবারের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক আজও বিরাজমান। আরেক ভাতিজা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বিচার সালিশে প্রচুর সময় দিতেন। বৃহত্তর যাত্রাপাশা পঞ্চায়েতকে রাখতেন ঝগড়ামুক্ত। রাস্তা বা হাট-বাজারে শহীদ খানকে দেখলেই অপরাধ দৌড়ে পালাত। তার উপস্থিতিই ছিল পঞ্চায়েতের সমাধান। এজন্য সকল শ্রেণি-পেশার লোকজন থেকে পেয়েছেন শ্রদ্ধা- সম্মান।

আদর্শের বাতিঘর মরহুম আব্দুশ শহীদ খান ধনাঢ্য পরিবারের কনর্ধার হয়েও সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। ছিল না বিত্তের দাম্ভিকতা বা কোন ধরনের বাহাদুরী। উনার সন্তানদের মধ্যেও নেই ন্যুনতম হিংসা-অহমিকা। তাদের প্রত্যেকের অনুপন আচরন ও ভদ্রতার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন। তিনি রাজধানী ঢাকা বা হবিগঞ্জ রুপালী ম্যানশনের মত বিলাসবহুল বাসভবন ছেড়ে যাত্রাপাশার জন্মভিটায় বসবাস করতেন। মিতব্যয়ী ছিলেন। ইচ্ছা করলেই রিকসায় চড়তেন না। পায়ে হেটে জমিজমা দেখাশুনা, বিচার-পঞ্চায়েত ও হাট-বাজার করতেন। কথা বলতেন কম। চলতেন আপন মনে। মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসতেন। উলামায়ে কেরামের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। নিয়মিত দাওয়াত খাওয়াতেন আলেমগনকে। বিশেষ করে প্রতি বছর কুরবানী ঈদের পর বাড়িতে অসংখ্য উলামায়ে কেরামকে নিজ হাতে খাওয়াতেন। এ ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

আলোকিত মানুষ গড়ার নিবেদিত প্রান আব্দুশ শহীদ খান ২০০৭ সালের ২৯ মে ঢাকায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। সমাজে একজন আব্দুশ শহীদ খানের কত যে অভাব, মৃত্যুর দীর্ঘ একযুগ পরও হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে পরিবার ও এলাকাবাসী। তাঁর শুন্যতা পুরন হওয়ার নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা শহীদ খানকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।


@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন