আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৭১ বছর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২২ ২০:২৩:৪৮

স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৭১ বছর
:: আব্দুল্লাহ আল মাসুম ::
স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও গনতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭১  বছরে পা রাখছে আজ। ১৯৪৯ সালের এদিনে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী এ দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ঐতিহ্যবাহী এ দলের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক অর্জন আর অগ্রগতির ইতিহাস রচিত হয়েছে। সর্বশেষ টানা তিন  মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে  আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে এই দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার প্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।

১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অব্যাহত রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে কারান্তরালে থেকেও ভাষা আন্দোলনে পালন করেন প্রেরণাদাতার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ভাষা আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে। এরপর আইয়ুবের এক দশকের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ’৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৬-দফাভিত্তিক আন্দোলনের পর আসে ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়।

নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সূচনা হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। ২৬শে মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
 স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মানের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকেরা নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে  ও দেশ বিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত মোকাবেলা করে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৭ই মে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকেই তিনি আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আবার বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে । ২০০১ সালের নির্বাচনে চক্রান্তের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে হারানো হয় ও এক এগারোর সরকারের সময়ে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীন করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে।

তবে, সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে  ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পরবর্তী ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় বারের মত নির্বাচিত হয়ে গণ মানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরে দাঁড়িয়ে পিতা মুজিবের আদর্শে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানুষের জীবন মানের ব্যাপার উন্নতি সাধিত হয়েছে।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্টায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সারা বিশ্বে ব্যাপার প্রশংসিত হয়েছে ।
জিডিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ও চিকিৎসার ব্যাপার উন্নতি সাধন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

এমডিজি অর্জনে ব্যাপার প্রশংসিত হয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার । স্বপ্নের পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে মাদার অফ দ্যা হিউমিনিটির খ্যাতি অর্জন করেছেন ।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এদেশের মানুষের আত্মসামাজিক  ও জীবন মানের ব্যাপার পরিবর্তন সাধন করেছে । জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশ বিরোধী সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে হাঁটছে । প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এদেশের মানুষের সকল ক্লান্তিলগ্নে বুক চিবিয়ে পাশে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ।

স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৭১ পুরোধা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আজ ৭১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । আজকে ৭১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে । মহামারী করোনা ভাইরাস শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় । এই মহামারী করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বের মানুষের জীবন মানে প্রভাব বিস্তার করেছে ।

গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরে দাঁড়িয়ে মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মান করবে এটাই অঙ্গিকার ।

সবাইকে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।

লেখক : সদস্য, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন