আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বাঙালির করোনা রঙ্গ-৩

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২৪ ১৯:২০:৩৯

ফারজানা ইসলাম লিনু :: ইন্টেলেকচুয়ালদের উর্বর ভূমি সুজলা সুফলা বাংলাদেশ। করোনাকালে প্রতিটা বাঙ্গালির ইন্টেলেক্ট এসে চোয়ালে ঠেকেছে। দুনিয়ার তাবৎ মুল্যবান বিষয়ের টকশো আলোচক এখন বাঙ্গালির ঘরে ঘরে।

আধাছাদা নামমাত্র লক ডাউনে অফুরন্ত অবসর। গলির মোড়ের কফি হাউস ও মধুর ক্যান্টিনের করোনাকালীন টক শো জম জমাট। তিন বেলা টক শোর আসর বসে মহাসমারোহে।

সময়ে অসময়ে লুঙ্গি কোচা মেরে দর্শনার্থীদেরও ঢল নামে চায়ের দোকানে। বিবিসি, সিএনএনের কাছে খবর না থাকলেও এইখানে নির্ভরযোগ্য সূত্রের সব খবর আছে।
করোনা চীনের জৈব রাসায়নিক অস্ত্র না আল্লাহর গজব এই নিয়ে রোজ তিন বেলা তর্ক হয় এইসব টক শোতে।

এই করোনাকালে দেশোদ্ধার করতে ‘আমরা শক্তি আমরা বল’। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে গেলেই কাইজ্যা বেঁধে যায়... তুই বেশি জানোছ নি? হিদিনকুর পুয়া, কচমা মুরব্বি কুনখানের।

এই রকম জ্বালাময়ী এক বক্তা চাচার জ্বর, সর্দি, কাশি শুরু হয়েছে হঠাৎ। ঘরে বসে আল্লাহ আল্লাহ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। রোগীদের তথ্য গোপন, নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী পরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশত চিকিৎসক। সুতরাং সর্দিকাশিতে টেলিমেডিসিনই ভরসা।

জ্বর, কাশির উথাল পাথাল নৃত্য দেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। পরিক্ষার ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে দেখে বেচারা চাচার আর তর সয় না। এইদিকে শারীরিক অবস্থাও আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। চাদর গায়ে জড়িয়ে গুটুর গুটুর কেশে চাচা আবার চায়ের দোকানে।

খুক করে একটা কাশি আর এক প্রস্থ বক্তৃতা, বুঝছতনি বেটা চীনে তো হুতাই দিছে ইন্ডিয়ারে। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া বিশগু। অস্ত্র ধরলে কিতা অইবো বুঝরে নি? মোদিয়ে বাপ ডাকতো না হউর ডাকতো শিঞ্জুরে তুকাইয়া পাইতো নায়। আবার খুক খুক কাশি।

এমন সময় চাচার বেরসিক ফোনটা বেজে উঠে। চাচার করোনা ‘পজিটিভ’। নিয়ম অনুযায়ী চাচাকে সেল্ফ আইসোলেশনে রাখতে হবে। পরিবারের সবাইকে চাচা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। চাচার বাড়ি সহ আশপাশের কয়েকটা বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করতে হবে।

কিন্তু করোনার রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত এই আট দশদিন চাচার প্যাংচামী তুঙ্গে ছিলো। চষে বেড়িয়েছেন এই ক্ষুদ্র ভ্রহ্মাণ্ডের বহু জনবহুল জায়গায়। চাচা মিয়া শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছেন, বাজারে গিয়েছেন, মসজিদে গিয়েছেন আর কফি হাউস ও মধুর ক্যান্টিনেতো গিয়েছেনই।

চাচার অবস্থা একটু ভালোর দিকে। কিন্তু এতদঞ্চলে এমনকি চাচার শ্বশুর বাড়িতে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রলয় নাচন চলছে। রোজ সকালে মসজিদের মাইকে গোটা দুই মৃত্যু সংবাদ প্রচার হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগ করোনার উপসর্গ। করোনা টেস্টে দেওয়ার আগেই আলবিদা।

*লেখক: শিক্ষক ও কথাশিল্পী

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন