আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লোভী কণ্ঠশিল্পীদের বয়কট করা জরুরি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২৯ ১৮:৩৭:১৮

লোভী কণ্ঠশিল্পীদের বয়কট করা জরুরি
:: সজল ঘোষ :: দেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে কলুষিত করার চক্রান্ত চলছে। কিছু দুষ্টুলোক সঙ্গীত জগতকে অন্ধকারে নিয়ে যাবার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এসকল প্রতারক ধান্ধাবাজরা সঙ্গীতের শিল্পমানকে নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। আমরা দেখেছি দেশের কিছু কিছু রাষ্ট্রদ্রোহী (পুরুষ-নারী) কণ্ঠশিল্পী আছেন যারা মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া কণ্ঠস্বর খোলেন না। মোটা অঙ্কের টাকা না পেলে কণ্ঠ দিয়ে তাদের গান বের হয় না। তাদের কাছে টাকাই আসল বলে প্রতীয়মান হয়। শিল্প বা শিল্পীসত্ত্বা তাদের কাছে বড় বিষয় নয় কোনো সময়। এরা টাকা পেলে গান গাইতে রাজি হয়।

অনেক কণ্ঠশিল্পী আছে তারা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে মঞ্চে গান গাইতে দ্বিধাবোধ করেন না। দেখা গেছে কিছু কিছু লোভী কণ্ঠশিল্পী মঞ্চে তালে-বেতালে গান গেয়ে কিছু হাততালি পাবার বদলে চরম অপমান হজম করে মঞ্চ ছাড়েন। ক্লোজআপ তারকা, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগিতাসহ অনেক রিয়েলিটি শো-তে কিছু কণ্ঠশিল্পী কিছু ভোট, কিছু আবেগ পেয়ে সস্তা মিডিয়ার বদৌলতে রাতারাতি সামান্য পরিচিতি পেয়ে নিজেকে অনেক বড় শিল্পী মনে করেন। তারা মাটিতে পা রাখতে সংকোচ বোধ করেন। এছাড়া দেখা যায় বাংলাদেশের কিছু কিছু নারী কণ্ঠশিল্পী আছে তাঁরা খোলামেলা পোশাক পড়ে নাচতে নাচতে মঞ্চকে পতিতাপল্লী বানিয়ে ফেলেন। তারা মঞ্চকে পবিত্র স্থান ভাবেন না। অশ্লীল কথা-সুর-সঙ্গীতের বেতালা গানে যুবসমাজকে নষ্ট করে দিতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। গানকে এরা পবিত্র বা সাধনার বিষয় মনে করে না। বেতালারা গানকে মনে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়। শিল্প ও শৈল্পিকতার কোনো বিষয় নয়।

আমরা দেখেছি বেশির ভাগ কণ্ঠশিল্পী সঙ্গীতকে গুরুমুখী বিদ্যা ভাবেন না। যার কারণে তারা সঙ্গীতকে অপবিত্র ও নষ্ট করে তুলেছে প্রতিনিয়ত। তারা সঙ্গীতগুরু বা জ্যেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে চায় না। তাদেরকে মানতে চায় না। মানেও না। যে কোনো স্থানে গান পরিবেশনের আগে গানটির সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালকের নামটি ভুলেও উচ্চারণ করে না। জ্যেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পীদের গান (জীবিত/প্রয়াত) বেশির ভাগ তরুণ প্রজন্ম কাভার করছে সকল সময়। অথচ তারা বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীদের নাম উচ্চারণ করতে চায় না। উচ্চারণ করতে মনে হয় তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। এসব নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে তাদের বুক কাঁপে। এমন ভাব দেখায় যেন গানটি সে লিখেছে, সে সুর করেছে এবং সে সঙ্গীত করেছে। তারা সিনিয়রদের গান বিকৃতভাবে পরিবেশন করে জীবনজীবিকা চালিয়ে যায়। আবার সেই সিনিয়রদের গালি দেয় চোখের পলকেই। এদের নন্দিত বা জনপ্রিয় গান নেই সমাজে। কিন্তু গান গাইতে বললেই টাকার পাহাড় দিতে হবে বলে চাপ দেয় অনায়াসে।

ভারতের সা.রে.গা.মা.পা খ্যাত শিল্পী বাংলাদেশের ছেলে মাইনুল আহসান নোবেল তার জলন্ত প্রমাণ। সে একর পর এক অশ্লীল মন্তব্য করছে দেশের সঙ্গীত জগত নিয়ে।

দেশবরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী ও দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের বড় অভিভাবক কুমার বিশ্বজিৎ-এর একটি দায়িত্বশীল লেখা সেদিন পড়লাম। লেখাটির শিরোনাম- ‘শিল্পের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে আমরা করছি ‘শিল্পী সম্মানী জোট।’ শ্রদ্ধেয় কুমার বিশ্বজিৎ একজন দায়িত্বশীল সঙ্গীতগুরু হিসেবে দায়িত্বশীল অনেক অনেক কথা তার লিখায় লিখেছেন। সাবলিল ভাবে বলেছেন তাঁর লেখায় সঙ্গীত জগতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। তিনি জুনিয়র কণ্ঠশিল্পীদের অনেক অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। যা বাংলা গানের জগতে আজীবন অমর অক্ষয় হয়ে থাকবে বলে দেশের সুধীজন মনে  করছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল- কিছু কিছু টাকা লোভী কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ-এর সঠিক পরামর্শ ও সত্য বক্তব্য মানতে নারাজ। এরা কুমার বিশ্বজিৎকে অপমান করতে নানা রকম আপত্তিকর মন্তব্য করে চলেছে। যা নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
 
আমরা দেখেছি অনেক অনেক কণ্ঠশিল্পীরা সংকট-বিপদে পড়লে সরকার সাহায্য করে। সরকারের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে বিদেশেও যায় চিকিৎসা নিতে। দেশের মানুষও সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করে সকল সময়। এ কাজ মানবতার কাজ। এ কাজ ভালোবাসার।

পৃথিবীব্যাপী চলছে সংকটময় মুহূর্ত। এ সংকট বাংলাদেশেও চলছে। করোনাভাইরাতে প্রতিদিন মানুষ মরছে। জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। অর্থনীতি গভীর কালো সংকটে। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। মানুষ ভাত খেতে পারছে না। শতসংগ্রামে চলছে মানুষের জীবন। এমনি ভয়াবহ মহামারী ও দুর্যোগের সময় কিছু কিছু লোভী কণ্ঠশিল্পী বলছে- টাকা ছাড়া গান গাইবো না। টাকা দিলে হাত ভরে তখনই গান গাইবো। আজ টাকাই সবকিছু বলে একশ্রেণির শিল্পীরা  চিল্লাছে। জোট গড়ছে। এতে প্রমাণিত হয় তারা শিল্প’র সম্মান চায় না। মর্যাদা ও ইজ্জত চায় না। তারা টাকা চায়। তাদের কাছে টাকাই সব। টাকা দিয়ে নেশা করবে। শতশত প্রেম করবে। একটার পর একটি বিয়ে করবে। আর ছাড়াছাড়িতে মাতবে। তাতেই তাঁরা খুশি।

আসলে ছাগু মার্কারা ভুলে গেছে যে এখন বড় বড় বা ছোট ছোট কনসার্ট আয়োজনের সময় নয়। ভয়াবহ করোনাভাইরাসের সময় কনসার্ট আয়োজন করতে চাইলেও তা হবে না। সরকার অনুমতি দেবে না। দর্শক-শ্রোতারাও যাবে না। এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে গান করে মানুষকে বিনোদন দেবার সময়। এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে গান গেয়ে কিছু টাকা আয় করে গরীব-অসহায় মানুষকে দান করার সময়। পৃথিবীর অন্য দেশের কণ্ঠশিল্পীরা ভার্চুয়াল গান করে মানুষের সেবা করছে। আর আমাদের দেশের অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীরা টাকা চাই, টাকা চাই বলে মুখে ফেনা তুলছে।

দেশের সুধীজনরা মনে করছেন যে, কোনো ডিজিটাল প্লার্টফর্ম, রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে দেশ বরেণ্য (প্রয়াত/জীবিত) সঙ্গীত শিল্পীদের গান কাভার করতে হলে সবার আগে তাঁদের অনুমতি নিতে হবে। প্রয়াতদের পরিবার হতে অনুমতি নিতে হবে এবং জীবিতদের কাছ থেকে সরাসরি  অনুমতি নিয়ে তাঁদের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করে গান কাভার করা জরুরি দরকার। এই বিষয়টি না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেয়া প্রয়োজন। সচেতন মানুষ মনে করেন কপিরাইট আইন কার্যকর করা দরকার। রয়্যালিটি যাতে গুণী কণ্ঠশিল্পীরা পায় সেই ব্যবস্থাও নেয়া জরুরি।

এখন ভার্চুয়াল জগত। এখন ঘরে বসে কিংবা যে কোনো স্থানে থেকেই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিখ্যাত ও বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীদের গান শোনা যায়, দেখাও যায়। এসব গুণীশিল্পীর গান শোনার মতো। বোঝার মতো। অনুধাবন করার মতোই। প্রাণভরে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর মতোই তাঁদের মনমুগ্ধকর পরিবেশনা। দুইদিনের ছাগুদের মতো ওয়ান টাইম বলপেনের গান নয়। যে গান একবারও শোনা যায় না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন