Sylhet View 24 PRINT

সাইকো কিংবা দুর্নীতিবাজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০২ ২২:৩৬:২০




|| মাতুব্বর তোফায়েল হোসেন ||

দুর্নীতিবাজ নিয়ে স্টাডি করার আগেই সাইকোপ্যাথ নিয়ে বিস্তর স্টাডি করেছি। সমাজের মানুষের সাথে মেশার ক্ষেত্রে এই স্টাডিকে প্রয়োগ করতে গিয়ে তাই দুর্নীতিবাজের স্বরূপ ধরতে পারার আগে তার সাইকোপ্যাথের স্বরূপ আমার চোখে পড়তে থাকে। খালি চোখে দুর্নীতিবাজ ও সাইকোর মধ্যে স্পষ্টত কোনো পার্থক্য নেই। এটা বুঝেছিলাম একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময় করতে গিয়ে। তিনি আমার কথার পিঠে একদিন মন্তব্য করে বসলেন, সব দুর্নীতিবাজই সাইকো, তবে সব সাইকো দুর্নীতিবাজ নয়। কথাটা আমার স্টাডি করার প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দিয়েছিলো।

কোনো দুর্নীতিবাজ নিজের মুখে স্বীকার করে না যে সে দুর্নীতিবাজ। বরং সততার বুলি কপচিয়ে নিজেকে সমাজের সর্বোত্তম সৎ ব্যক্তি হিসেবে জাহির করে। আমার ভুলটা হয়েছিলো এখানেই। যেহেতু সে ন্যায়ানুবর্তীতার বুলি আওড়াচ্ছে, কথায় কথায় সুবিবেচনার সংলাপ ছাড়ছে, সেহেতু মজ্জাগতভাবে সে দুর্নীতিবাজ নয়। হয়তো দুষ্টচক্রের জালে জড়িয়ে বাধ্য হয়ে তাকে দুর্নীতি করতে হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে লোকটা সৎ। সমাজের আনুকুল্য পেলে সে দৃশ্যত সৎ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতো। এই রকম ভেবে এইসব দুর্নীতিবাজের প্রতি এক প্রকার মায়া অনুভব করেছি, সহমর্মীতা পোষণ করেছি। আহা বেচারা, সৎ থাকতে চেয়েও সৎ থাকতে পারছে না। তাকে যদি সঙ্গ দিয়ে একটু আরাম দেয়া যায় তাতে সমাজেরই লাভ। কথায় আছে না, পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়?

এই করতে গিয়ে তার সাথে অন্তরঙ্গ হতে হতে যখন দেখলাম, তার কিছু কিছু আচরণ সাইকোপ্যাথের সাথে মিলে যাচ্ছে, তখন দৃষ্টিকে আরো তীক্ষ্ণ করে আনলাম। আস্তে আস্তে তার বাকি বিষয়গুলোও চোখে পড়তে লাগলো। এক সময় দেখা গেলো, সে শুধু সাইকোর মতো না, বরং পুরোদস্তুর সাইকো। তখনো দুর্নীতিবাজ নিয়ে স্টাডি শুরু করি নাই। কিছু মানুষ পরিস্থিতির চাপে দুর্নীতিকে বরদাশত করে, কিছু কিছু দুর্নীতি নিজে থেকেও করে। এই ধরনের মানুষকে দুর্নীতিবাজ বলা যাবে না। তারা সিস্টেমের দোহাই দিয়ে নিজেদের পূত-পবিত্র বলে জাহির করে এবং মনে মনে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। তাদের মনঃপীড়ন কম। পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়-- কথাটা এই ধরনের মানুষদের জন্য প্রযোজ্য। আমার ভুলটা হয়েছিলো এই ধরনের দুর্নীতিবাজদেরকে হাড়-মজ্জায় দুর্নীতিবাজদের সাথে গুলিয়ে ফেলা। হাড়-মজ্জায় দুর্নীতিবাজ যারা, তাদেরকে আমরা জাত দুর্নীতিবাজ বলতে পারি।

হ্যা, জাত দুর্নীতিবাজের আচরণ সাইকোপ্যাথের সাথে হুবহু মিলে যায়। আমি যখন এই ধারার দুর্নীতিবাজদের নিয়ে স্টাডি করতে যাই, তখন দেখি আরে! এরা তো সবাই সাইকো! আর তখন আমার ধারনাকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হলাম। জাত দুর্নীতিবাজদের হয়তো সিস্টেমও ভালো বানাতে পারবে না। তাদের আত্মা মরে গেছে। বলা যায়, এই জন্মের মতো তাদের নিয়তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তারা মরতে মরতেও দুর্নীতি করার তালে থাকবে। তারা কেবল মরার পরে আর দুর্নীতি করবে না।

এখন আসল কথায় আসি, জাত দুর্নীতিবাজ সাইকো হবে-- এটা এক রকম নিয়তি। কিন্তু এই সমস্ত দুর্নীতিবাজের চক্করে পড়ে সৎ মানুষও সাইকো হয়ে উঠবে-- এটা একটা ট্রাজেডি। সামাজিক এই ট্রাজেডি একটি সমাজের আত্মিক শক্তিকে ঘুণপোকার মতো ভেতর থেকে নষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে আমরা সূচক হিসেবে ধরতে পারি। বক্তব্যটি হলো- অসৎ মানুষদের দৌরাত্ম্যে সৎ মানুষদের জীবন ধারনই অসম্ভব হয়ে পড়ে। হ্যা, বক্তব্যটি এই সময়কে দারুণভাবে তুলে ধরেছে। অসৎদের চোখে সৎরা হলো উৎকট উপদ্রব। সুযোগ পেলেই সৎদেরকে এরা নাস্তানাবুদ করে। বিনা কারনেই করে। জাত দুর্নীতিবাজ সব সময় সৎদেরকে যমের মতো ভয় করে। কোনোভাবে তার দুর্নীতির ফিরিস্তি এই সমস্ত সৎদের চোখে পড়ে গেলো কিনা এই ভেবে তারা সারাক্ষণ তটস্থ থাকে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সৎদেরকে বিনা উষ্কানীতেই এরা নাস্তানাবুদ করতে থাকে। এটাই সাইকো হবার প্রধান লক্ষ্মণ। অপরদিকে এই উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টায় সৎগণ সর্বদা বুদ্ধি খরচ করতে থাকে। দুঃসহ এক জীবনকে সভ্যতার কাজে লাগবে বলে টেনেটুনে বয়ে চলে। বেচারা!

আমাদের মনে রাখতে হবে, সৎ মানুষেরা সমাজের সৌন্দর্য। চাইলে সৎদেরকে সমাজ থেকে একেবারে নির্মূল করে দেয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে সমাজটা আর মানুষের থাকে না। হয়ে পড়ে পশুর সমাজ। তাই অসৎদের বুঝতে হবে, সৎদের বাঁচিয়ে রাখা তাদেরই দায়িত্ব। কেননা যেই সমাজে তারা প্রতিনিয়ত নিজেরদেরকে মানুষ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছে সেই সমাজটা ঐ সৎদের। কথাটা করুণা ভিক্ষার মতো শোনালেও এই বৈরি সময়ে এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করার সুযোগও নেই। একদা বই-পুস্তকে লেখা থাকতো, বৈচিত্রই সৌন্দর্য। এখন এই কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। আগাছায় ঢাকা পড়ে গেছে ফুলের বাগান।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.