Sylhet View 24 PRINT

চামড়া শিল্পকে বাঁচান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-৩০ ১১:২২:১৬

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: চামড়া শিল্প বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের নাম। এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে বিদেশি মুদ্রা অর্জিত হয়। কাঁচা চামড়া এবং সেমিপাকা চামড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রপ্তানি সামগ্রী। সব সময়ই বিশ্ব বাজারে এ দেশের গরু, ছাগলের চামড়ার চাহিদা রয়েছে। শতকরা ৯৫ ভাগ কাঁচা চামড়া এবং চর্মজাত দ্রব্যাদি, প্রধানত আধা পাকা ও পাকা চামড়া, চামড়ার তৈরি পোশাক এবং জুতা হিসেবে বিদেশে বাজারজাত করা হয়। অধিকাংশ চামড়া এবং চামড়ার সামগ্রী রপ্তানি করা হয় জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, রাশিয়া, ব্রাজিল, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর এবং তাইওয়ানে। এসব রপ্তানির মূল্য সংযোজনের শতকরা ৮৫ ভাগ স্থানীয় এবং ১৫ ভাগ বিদেশি।

২০০৯ সালে বিদেশে রপ্তানি হয় ২৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের চামড়া। বিশ্বের চামড়া খাতে রপ্তানির শতকরা দু ভাগ হচ্ছে বাংলাদেশের। চর্মজাত সামগ্রী যথা জুতা, স্যান্ডেল, জ্যাকেট, হাত মোজা, ব্যাগ, মানি ব্যাগ, ওয়ালেট, বেল্ট ইত্যাদি রপ্তানি করে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।

শতকরা ৪০ ভাগ চামড়া সরবরাহ হয় প্রতিবছর মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহা উৎসবে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া থেকে। দৈনন্দিন মাংস সরবরাহের জন্য জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়াও বিবাহ ও অন্যান্য উৎসবাদি উদযাপন থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা দেশের মূল্যবান এই শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো গত বছর কোরবানির বেশ কয়েকদিন আগেই কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তারপরও গত বছর কুরবানীর ঈদে ভয়াবহ রকমে চামড়ার দাম কমে গেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চামড়ার দাম নিয়ে এমন নৈরাজ্যের ছবি দেখা গেছে। কোনো কোনো এলাকায় খাসি, বকরি চামড়া ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রির খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি লাখ টাকা দামে কেনা গরুর চামড়া ৩’শ টাকায় বিক্রির খবরও পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অনেক কুরবানী দাতা চামড়ার উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছেন। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। চামড়া শিল্প আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় এক শিল্পের নাম। এই শিল্প যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে সেহেতু এই শিল্পের দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। যেসব ব্যবসায়ীরা চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করেছে তাদের লাগাম ধরতে হবে সরকারের। এই শিল্পকে বাচাতে বাজারে কঠোর নজরদারী করতে হবে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে তারা এর ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটি। দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান সম্ভাবনাময় শিল্পটি বাচাতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাঁচান চামড়া শিল্প নামক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটিকে।

লেখক: কলামিস্ট, সিলেট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.